সুনামগঞ্জের চাঞ্চল্যকর মুন্নি হত্যা : ছাত্রলীগ কর্মী ইয়াহিয়ার ফাঁসি

সুনামগঞ্জের দিরাই উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী হুমায়রা আক্তার মুন্নি হত্যার মূল ঘাতক ছাত্রলীগ কর্মী ইয়াহিয়া সর্দারের ফাঁসির আদেশ দিয়েছে আদালত। বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় সুনামগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ ওয়াহিদুজ্জামান শিকদার এই আদেশ দেন। ২০১৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর রাতে বাসায় গিয়ে পড়ার টেবিলে এস এসসি পরীক্ষার্থী হুমায়রা আক্তার মুন্নিকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেছিল ঘাতক ইয়াহিয়া সর্দার। এ ঘটনায় ১৮ ডিসেম্বর রাতে নিহত মুন্নির মা রাহেলা খাতুন দিরাই থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ঘটনার ৫ দিন পর সিলেট থেকে ঘাতক ইয়াহিয়াকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারের পর সে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।

মামলার বিবরণ ও নিহত মুন্নির পারিবারিক সূত্রে জানা যায়,দিরাই উপজেলার নগদিপুর প্রামের ইতালী প্রবাসী হিফজুর রহমানের স্ত্রী রাহেলা বেগম স্কুল পড়ুয়া মেয়ে মুন্নী ও তার ছোট ছেলেকে নিয়ে পৌর শহরের আনোয়ারপুর মাদানী মহল্লায় পিতার বাসার ২য় তলায় দীর্ঘ দিন ধরে বসবাস করতেন। দিরাই উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ২০১৭ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলো হুমায়রা আক্তার মুন্নি (১৬)। উপজেলার সাকিতপুর গ্রামের জামাল সর্দারের ছেলে ছাত্রলীগ কর্মী ইয়াহিয়া (২২) অনেক দিন ধরে মেধাবী ছাত্রী মুন্নিকে বিদ্যালয়ে যাওয়া আসার পথে ইভটিজিং করে আসছিল।

এ নিয়ে মুন্নির মা রাহেলা বেগম সুনামগঞ্জ র‌্যাব-৯ ও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বরাবরে একটি লিখিত আবেদন করেন। এর প্রেক্ষাপটে গত ২০১৭ সালের ২৬ অক্টোবর দিরাই উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাফর ইকবাল ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভপাতি আব্দুল হক ও পৌর এলাকার সুজানগর গ্রামের তোফাজ্জুল হোসেন চৌধুরীর মাধ্যমে একটি আপস মীমাংসায় লিখিত মুচলেকা দেয় বখাটে ইয়াহিয়া। এর পর সে প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে ওঠে।

নিহত মুন্নির ফুফোতো ভাই সৌরভ মিয়া জানান, প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে প্রত্যাখ্যান করায় বখাটে ইয়াহিয়া মুন্নির ইতালি প্রবাসী পিতাকে ইমু নাম্বারে বিভিন্ন ধরনের অপ্রীতিকর ছবি পাঠিয়ে বিভ্রান্ত করত।

ঘটনার ৪/৫ দিন আগে বাসার সামনে গিয়ে নিজের হাত কেটে রক্ত মাখায় বখাটে ইয়াহিয়া।২০১৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর শনিবার রাতে ৮টার দিকে পৌর শহরের আনোয়ারপুরে নানার বাসায় থাকা মুন্নিকে বুকের নিচে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে করে পালিয়ে যায় ঘাতক ইয়াহিয়া (২২)। রক্তাক্ত অবস্থায় মুন্নীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কর্তব্যরত চিকিৎসক সিলেট ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করেন। সিলেট যাওয়ার পথে কিছু দূর যাওয়ার পর মুন্নী মৃত্যর কোলে ঢলে পড়ে। এই মর্মান্তিক ও নৃশংস হত্যার ঘটনায় সারা দেশে তোলপাড় সৃষ্টি করে।

হত্যাকাণ্ডের ৫ দিন পর সিলেটের জালালাবাদ থানার মাসুকপুর গ্রাম থেকে ঘাতক ইয়াহিয়াকে (২২) গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারের পর আদালতের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে ১৫ দিনের ভিতরে দ্রুত বিচার আইনে ঘাতক ইয়াহিয়াকে একমাত্র আসামি করে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ। ঘটনার ১ বছর ৩ মাসের ভিতরে বুধবারহুমায়রা আক্তার মুন্নির ঘাতক ইয়াহিয়াকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন সুনামগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ ওয়াহিদুজ্জামান শিকদার।
দ্রুত সময়ে আলোচিত হত্যাকাণ্ডের রায়ের স্বস্তি প্রকাশ করে প্রতিক্রিয়ায় নিহত মুন্নির মা রাহেলা খাতুন বলেন, আমার মেয়ে হত্যাকারী ইয়াহিয়ার ফাঁসির আদেশে আদালতের প্রতি সন্তুষ্ট। এই রায় দ্রুত কার্যকর করার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানাই। চাঞ্চল্যকর মন্নি হত্যা মামলার আসামিপক্ষে মামলার পরিচালনা করেন এডভোকেট হুমায়ুন মঞ্জুর চৌধুরী ও বাদি পক্ষে এডভোকেট শাহাব উদ্দিন চৌধুরী।

রায়ের সত্যতা নিশ্চিত করে পিপি ড.খায়রুল কবীর রুমেন বলেন মুন্নি হত্যার ঘাতক ইয়াহিয়াকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত,এজন্য আমরা বাদি ও রাষ্ট্রপক্ষ সন্তুষ্ট। এই রায় কার্যকরের মাধ্যমে দেশে এই ধরনের প্রকাশ্যে হত্যা বন্ধ হবে।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top