সারাবিশ্ব বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকবে বাংলাদেশের দিকে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্ণফূলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন বহুল প্রতীক্ষিত কর্ণফুলী টানেলের বোরিং কাজের উদ্বোধনকালে বলেছেন, তিনি বাংলাদেশকে এমনভাবে গড়ে তুলবেন যেন সমগ্র বিশ্ব অবাক হয়ে বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে থাকে।

তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশকে এমনভাবে গড়ে তুলবো, যেন সারাবিশ্ব বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে বাংলাদেশের দিকে। এটাই আমার চাওয়া, আর কিছু না।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার অপরাহ্নে পতেঙ্গায় কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল (সুড়ঙ্গ পথের) নির্মাণের বোরিং (খনন) কাজের উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত এক সুধী সমাবেশে একথা বলেন।
শেখ হাসিনা যোগ করেন, ‘কোন নামও চাই না, কোন ধন-সম্পদও চাই না, কিচ্ছু চাই না। বাংলাদেশের জনগণ বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলবে, এটাই আমার চাওয়া। সে কারণেই চেষ্টা করি নতুন নতুন কিছু করার যেন বাংলাদেশের মানুষ সম্মানের সাথে চলতে পারে।’

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সেতু বিভাগের সিনিয়র সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এবং বাংলাদেশে চিনের রাষ্ট্রদূত জ্যাং জোউ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

অনুষ্ঠানে টানেলের নির্মাণ কাজের কনসালটেন্ট হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডের (সিসিসিসি) পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে টানেলের একটি রিপ্লিকা উপহার দেয়া হয়।

লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীনতা কখনও ব্যর্থ হতে পারে না উল্লেখ করে ’৭৫ পরবর্তী শাসকদের অপশাসনের প্রসঙ্গ টেনে সরকার প্রধান বলেন, ‘হ্যাঁ মাঝে ২১টি বছর বাঙালির জীবন থেকে হারিয়ে গেছে। অসম্মানের চরম অবস্থায় বাংলাদেশ চলে গিয়েছিল। আমরা সেই অবস্থা থেকে বাংলাদেশকে আবার ফিরিয়ে এনে আবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে গড়ে তুলছি। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস আবার নতুন প্রজন্ম জানতে পারছে এবং দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।’

’৭৫ পরবর্তী সময়ে বহিঃবিশ্বে বাংলাদেশের যে পরিচয় ঘুর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ, বাংলাদেশ হলেই একটি নেতিবাচক মানভাব তা তাঁকে ভীষণ পীড়া দিত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জিনিষটা খুব কষ্ট লাগতো, না এটা হতে পারে না।’

প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের কল্পিত দুর্নীতির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, ‘পদ্মা সেতু নিয়ে যখন এত কিছু হয়ে গেছে তাই এটার সঙ্গে আর কোন নাম যুক্ত হবার দরকার নাই।’

ওবায়দুল কাদের তার বক্তৃতায় পদ্মা সেতুটি প্রধানমন্ত্রীর নামে ‘শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু’ করার প্রসঙ্গ টেনে এনে বক্তব্য প্রদানের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আমার মন্ত্রীকে বলবো এখানে রাগ, ক্ষোভের কিছু নেই, আমি কোন নামও চাই না। আমি কিছুই চাই না। জীবনে কোন কিছু আমার চাওয়া পাওয়ার নেই।’

তিনিতো সব হারিয়ে নিঃস্ব, রিক্ত হয়ে দেশের জন্য কাজ করতে এসেছেন উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, নইলে আমার মতো একদিনে যখন কেউ সব আপনজন হারায় তাদের পক্ষে এত কাজ করা সম্ভব হয় না।

তিনি এসব কাজ করে যাচ্ছেন একটা আদর্শের জন্য কারণ তাঁর বাবা এদেশের জন্য সারাটা জীবন কাজ করেছেন, তাঁর মা কষ্ট করেছেন এবং তারা এদেশের গরিব দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য কাজ করে গেছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি যদি এতটুকু কাজ সেই গরিব দুঃখী মানুষের জন্য করতে পারি, আমার জীবনে সেটাই সবথেকে বড় স্বার্থকতা। এর বাইরে আর কিছু চাওয়ার নেই।’

‘কারণ এর বাইরে আমরা আর কোনদিকে তাকাইও না, দিন রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করি ওইটুকু চিন্তা করে- আমার দেশের গরিব, দুঃখী মানুষ যেন গৃহহারা না থাকে, প্রতিটি মানুষ অন্ন, বস্ত্র বাসস্থান এবং চিকিৎসা সেবা পাবে, সুন্দরভাবে বাঁচবে, ’যোগ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা রক্ত দিয়ে দেশের স্বাধীনতা এনেছি, আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি।’
তিনি এ সময় বাংলাদেশকে সহযোগিতার জন্য বন্ধুপ্রতীম দেশগুলোকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন,‘বন্ধু প্রতীম দেশগুলো সকলেই এগিয়ে এসেছে যার কারণে আমরা বাংলাদেশকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যেতে পারছি। কাজেই সকলে দোয়া করবেন বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হিসেবে যেন গড়ে তুলতে পারি।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top