সরকারি চাকরি প্রার্থীদের ডোপ টেস্ট করতে মাদক পরীক্ষার কেন্দ্র হচ্ছে ময়মনসিংহে

National-Dope-Testing-Laboratory-Mymensinghসরকারি চাকরিপ্রার্থীদের মাদক পরীক্ষা নিশ্চিত করার যে উদ্যোগ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিয়েছে, তা বাস্তবায়ন করতে ময়মনসিংহে একটি পরীক্ষাকেন্দ্র বসাবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এ জন্য অধিদপ্তর একটি প্রকল্প নিয়েছে।

জানাযায়, সারা দেশের ২১ জেলায় ২৩টি পরীক্ষাকেন্দ্র বসাবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এজন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৩ কোটি টাকা।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রকল্পটি এখন পরিকল্পনা কমিশনে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। শিগগিরই তা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। প্রকল্পটি ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। এর ব্যয় বহন করবে সরকার।

সরকারি চাকরিতে নিয়োগের আগে প্রার্থীদের মাদক পরীক্ষা বা ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করতে ২০১৮ সালের মে মাসে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, দেশে মাদকাসক্ত ব্যক্তির সংখ্যা প্রায় ৭০ লাখ (তখনকার হিসাব)। উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিপুলসংখ্যক ছাত্রছাত্রী মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছেন। পেশাজীবীদের মধ্যেও মাদক ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে।

চাকরিপ্রার্থীদের মাদক পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করলে যুবসমাজের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

অবশ্য কোনো বিধিমালা না থাকা ও পরীক্ষাকেন্দ্রের অভাবে চাকরিপ্রার্থীদের মাদক পরীক্ষার উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা যাচ্ছিল না। এবার মাদক পরীক্ষাকেন্দ্রের পাশাপাশি বিধিমালাও করা হচ্ছে বলে জানান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ঢাকা মেট্রো দক্ষিণ) উপপরিচালক মঞ্জুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, খসড়া বিধিমালা আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, প্রস্তাবিত বিধিমালা অনুযায়ী সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থায় চাকরিতে চূড়ান্তভাবে বিবেচিত হওয়ার পর প্রার্থীকে মাদক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে। প্রার্থী তাঁর যেখানে সুবিধা হয়, সেই কেন্দ্রে গিয়ে পরীক্ষা দেবেন। পরীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী চাকরি পাওয়ার বিষয়টি নির্ভর করবে।

পরিকল্পনা কমিশনে গত ২৭ সেপ্টেম্বর প্রকল্পটির একটি মূল্যায়ন সভা অনুষ্ঠিত হয়। কার্যবিবরণী অনুযায়ী, সভায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিকে প্রশ্ন করা হয় যে শুধু সরকারি চাকরিতে ‘ডোপ টেস্ট’ বাধ্যতামূলক করা হবে কি না। জবাবে প্রতিনিধি বলেন, বেসরকারি চাকরি ও বিদেশে জনশক্তি পাঠানোর বিষয়টিও প্রকল্পে বিবেচনা করা হয়েছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রাথমিকভাবে ঢাকা, চট্টগ্রাম, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, দিনাজপুর, রংপুর, রাজশাহী, পাবনা, সিলেট, কুমিল্লা, বরিশাল, পটুয়াখালী, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বগুড়া, রাঙামাটি, নোয়াখালী, কিশোরগঞ্জ ও ভোলায় পরীক্ষাগার বসানো হবে। ঢাকা জেলায় বসবে মোট তিনটি পরীক্ষাকেন্দ্র। পরে দেশের সব জেলায় মাদক পরীক্ষাকেন্দ্র বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে অধিদপ্তরের।

প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ২৩টি মাদক পরীক্ষাকেন্দ্রে ৭৬ জন জনবল নিয়োগ দেওয়া হবে। মাদকের পরীক্ষার বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জনে ২৩ কর্মকর্তা ভারত ও সিঙ্গাপুর সফরে যাবেন।

মাদক পরীক্ষা করার সময় ফি নির্ধারণ করা হবে কি না, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। অবশ্য পরীক্ষায় ফি না বসানোর পক্ষে বলছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। তাঁরা আরও জানিয়েছেন, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারি পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে ফি দিয়ে চাকরিপ্রার্থীদের মাদক পরীক্ষা করিয়ে নিতে পারবে। প্রকল্পের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারি চাকরিতে মাদক পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হলে শিক্ষার্থীরা মাদক থেকে দূরে থাকবে। অবশ্য পরিকল্পনা কমিশনের কেউ কেউ অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন।

পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য আবুল কালাম আজাদ বলেন, মাদকের লাগাম টেনে ধরতে সরকারি চাকরিপ্রার্থীদের পরীক্ষা ও পরীক্ষাকেন্দ্র বসানোর উদ্যোগ অবশ্যই ভালো। তবে পরীক্ষার নামে যাতে চাকরিপ্রার্থীরা হয়রানি না হন, সেদিকে নজর দিতে হবে। এর অপব্যবহার রোধেও সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, ‘একনেক সভায় অনুমোদনের দিন আমি এর অপব্যবহার রোধের বিষয়টি তুলে ধরব।’

অবশ্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন, যদি কেউ মনে করেন, তাঁর পরীক্ষার ফল সঠিক নয়, সে ক্ষেত্রে পুনরায় পরীক্ষার আবেদন করা যাবে। খসড়া বিধিমালায় সেটা স্পষ্ট করে বলা আছে।

দেশে এখন সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে ২০ লাখের বেশি কর্মচারী কাজ করেন। তবে এসব প্রতিষ্ঠানে বছরে কত নিয়োগ হয়, তার সুনির্দিষ্ট হিসাব নেই। অবশ্য বছরে শ্রমবাজারে প্রবেশ করে প্রায় ২০ লাখ তরুণ। সরকারি চাকরিতে প্রবেশে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। দেশি-বিদেশি বেসরকারি কিছু প্রতিষ্ঠানে নিয়োগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা বাধ্যতামূলক।

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, সরকারি চাকরিতে ঢোকার আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষার সঙ্গে মাদক পরীক্ষা যোগ করে দিলেই হয়। আলাদা মাদক পরীক্ষা চালু হলে চাকরি প্রত্যাশীদের হয়রানি ও ভোগান্তি বাড়বে। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য পরীক্ষার সঙ্গে মাদক পরীক্ষার জন্য সরঞ্জাম ও জনবল দিলেই কাজ হয়ে যায়।

Share this post

scroll to top