সবজি বিক্রি করেন ময়মনসিংহের ডক্টরেট ডিগ্রীধারী আবু বকর সিদ্দিক প্রিন্স

গ্রামীণ বাজার। সকলের পরনেই লুঙ্গি। এর মধ্যে প্যান্ট পড়ে এক আধুনিক কৃষক বিক্রি করছেন নিজের উৎপাদিত তরকারী লতি কচু। এমন একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে বিষয়টি নিয়ে হৈচৈ পড়ে যায়। ডক্টরেট ডিগ্রীধারী এই কৃষকের নাম ড. আবু বকর সিদ্দিক প্রিন্স। ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার রাঙামাটিয়া ইউনিয়নের হাতিলেইট গ্রামে তিনি গড়ে তুলেছেন কিষান সমন্বিত কৃষি উদ্যোগ নামে একটি খামার।

কিষান কৃষি উদ্যোগ নামের একটি আইডিতে আবু বকর সিদ্দিক প্রিন্স লেখেন, ‘আজকে স্থানীয় বাজারে ১৬ কেজি কচুর লতি বিক্রি করলাম, কেজি ৫০ টাকা। বাজারের সবচেয়ে দামি সবজি এখন। পাইকার বলেছিল ৪০ টাকা, দিই নাই। তবে লতির সম্ভবত জাত পাত আছে, আরেকটু মোটা সেগুলো একটু কম। যদিও তিনজনের কাছ থেকে বাজার দামের থেকেও কম নিয়েছি, কারণ তাদের কাছে লতি কেনার তেমন টাকা ছিল না। লতিটা বিলের পাশের এলাকার একটা অভিজাত আইটেম, কারণ এখানে হরহামেশা গুঁড়া মাছ পাওয়া যায়। আইডিয়ায় নেওয়া। মনে হচ্ছিল ক্ষেতে এক মণ প্রডাকশন হলেও বিক্রি হতো। এই সময় ধান কাটা কামলাদের হাতে টাকা থাকে। ’

পোস্টে আরো লেখেন, ‘পোস্টটি দেখার পর ছবির পাশের পিচ্চিটার জন্য মায়া লাগতেছে, বেচারার বয়স সম্ভবত পাঁচ-ছয় বছর হবে। আমাদের পাঁচ-ছয় বছর বয়সের বাচ্চাদের সঙ্গে একটু কম্পেয়ার করি। ’

বড় ঘরের বড় ছেলে। বড় হয়ে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। সময়ে সব সুযোগ এলেও আবু বকর সিদ্দিক প্রিন্স চাইলেন কৃষক হতে। এর আগে ২০০০ সালে স্নাতকোত্তর হন প্রিন্স। তারপর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এআইইউবি থেকে কৃষি ব্যবসায় এমবিএ ডিগ্রি নেন ২০০৬ সালে। আরো পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. হরিপদ ভট্টাচার্যের তত্ত্বাবধানে ডক্টরেট হন।
তিনি ২০১৪ সালে শখের বশে নিজের গ্রামে ফলের বাগান করেন। গড়ে তোলেন কিষান সমন্বিত কৃষি উদ্যোগ। এরপর দেশ-বিদেশ থেকে উন্নত ফলগাছের চারা ও বীজ সংগ্রহ করে বাগানে লাগাতে থাকেন।

তিনিই প্রথম বিদেশী ফল ড্রাগন আবাদ করে সাড়া ফেলে দেন। তার দেখানো পথেই হাঁটছে ড্রাগন ফল।

ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে রাঙামাটিয়া ইউনিয়নের হাতিলেইট গ্রামে প্রিন্সের বাগান। ছোট্ট একটি সাইনবোর্ডে লেখা আছে ‘কিষান সমন্বিত কৃষি উদ্যোগ’। ড্রাগন ফল বাগানে তিন প্রজাতির পাঁচ হাজার গাছ আছে। আছে মাহালিশা, কিউজাই, ব্রুনাই কিং, বাউ-৪, কাঁচামিঠা, তাইওয়া গ্রিন, কাটিমন, পালমার, মল্লিকাসহ ১০ প্রজাতির আম, চায়না থ্রি, মঙ্গলবারিসহ তিন প্রজাতের লিচু, মিসরীয় শরিফা, স্ট্রবেরি, চেরি, থাই পেয়ারা, আম, লেবু, জাম্বুরা, লটকন, মাল্টা, সফেদা, আতাফল, কদবেল, আমলকী, ডেউয়া, ডুমুর, কাঠবাদাম, জামরুল, থাই জাম্বুরা, লটকন, মল্টা ও কলা ইত্যাদি ফলগাছ। দেশি-বিদেশি পাঁচ হাজার ফলগাছের একটি নার্সারি রয়েছে বাগানে।

কথা হয় প্রিন্সের সাথে তিনি জানান, আমাদের কৃষিজমির সংখ্যা কমছে। অথচ জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে অনেক। এ পরিস্থিতিতে অল্প স্থানে বেশি উৎপাদন করতে না পারলে ভবিষ্যতে খাদ্য ঘাটতি দেখা দেবে। সেই চিন্ত থেকেই বাগান করেন প্রিন্স। পরিকল্পিত একটি ফলের বাগান গড়তে সময় লাগে কমপক্ষে সাত থেকে আট বছর। ‘কিষান সমন্বিত কৃষি উদ্যোগ’ বাগানটির বয়স হয়েছে সাত বছরেরও বেশি। তিনি চান দেশে আরো অনেক কৃষি উদ্যোক্তা তৈরি করতে।

তিনি আরও জানান, বাগানে রাসায়নিক সারের পরিবর্তে তিনি নিজের উৎপাদিত কেঁচো সার ও জৈব সার ব্যবহার করেন।

Share this post

scroll to top