সচিবালয়ে কর্মচাঞ্চল্য

একাদশ সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেছে দেশের প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়। কাজের চাপ না থাকলেও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চোখে মুখে ছিল আনন্দের ছাপ। একে অপরের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় এবং মিষ্টি বিতরণের মাধ্যমে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেন। বিপুল ভোটে নির্বাচিত হওয়ায় নিজ নিজ দফতরের মন্ত্রীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর কর্মকর্তাদের সবার আগ্রহ ছিল নির্বাচনের দিকে। মন্ত্রীরা নির্বাচনী এলাকায় যাওয়ায় প্রাণহীন ছিল সচিবালয়। সুষ্ঠু ভোট হলে সরকার পরিবর্তন হতে পারে বলে মনে করছিলেন অনেকেই। এ জন্য ক্ষমতাসীন সরকারপন্থী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অনেকেই উদ্বিগ্ন ছিলেন। কিন্তু নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর মন্ত্রীদের দফতরের কর্মকর্তারা ছিলেন বেশ উৎফুল্ল। এবারের নির্বাচনে মন্ত্রীরা স্বপদে থেকেই নির্বাচন করায় এবং প্রত্যেকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হওয়ায় সরকারি অনেক কর্মকর্তা ফেসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমেও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। এ ছাড়া প্রশাসনের যেসব কর্মকর্তা নির্বাচনকালে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন ও বিএনপি যাদের বিরুদ্ধে সরকারি দলকে জয়ী করানোর চেষ্টার অভিযোগ করেছিলেন, সেসব কর্মকর্তাকেও উৎফুল্ল দেখা যায়।
নির্বাচনের পর গতকালই প্রথম দিনের মতো সচিবালয়ে আসেন কয়েকজন মন্ত্রী। তাদের শুভেচ্ছা জানান নিজ নিজ দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এদের মধ্যে আবার অনেকেই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে কথা বলেন।

সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে জাসদ সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনে তিন কারণে বিএনপির ভরাডুবি হয়েছে। বিএনপির প্রার্থীরা জনগণের মাঝে যাননি, আয়েসী জীবনযাপন করেছেন এবং মনোনয়ন বাণিজ্য করেছেন। জনগণ এগুলো মেনে নিতে পারেনি বলেই দলটির এমন ভরাডুবি হয়েছে।
তিনি বলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা মিডিয়ায় চেহারা দেখানোর কাজে সময় বেশি দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় নেতারা মাঠে না গিয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ের আশ্রয় নিয়েছেন বেশি। আমি মনে করি, ভোটের ব্যবধান ঘটেছে কারণ দুই কোটি ২৫ লাখ নতুন ভোটার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে ছিল। ফলে তারা এই নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোটকে ভোট দেয়নি।
শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিগত ১০ বছরে দেশে সামাজিক নিরাপত্তা, যোগাযোগ অবকাঠামো, শিল্পায়ন, গ্রামীণ জনপদের উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ সবখাতে যে অভূতপূর্ব অগ্রগতি সাধিত হয়েছে, জনগণ ব্যালট যুদ্ধের মাধ্যমে এর প্রতি মূল্যবান রায় প্রদান করেছে। উন্নয়নের চলমান ধারা অব্যাহত রেখে দেশের গ্রামাঞ্চলেও শহরের সুবিধা পৌঁছে দেয়া হবে।
এর আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় ভারপ্রাপ্ত শিল্প সচিবের নেতৃত্বে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা শিল্পমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানান। পরে মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন দফতর ও সংস্থার পক্ষ থেকেও তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়।

দুপুুরে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। তিনি সাংবাদিকদের জানান, আগামীতে বিদ্যুৎ সেক্টরে আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ, অ্যাফোরট্যাবিলিটি ও রিলায়্যাবিলিটি। এ দুটি বিষয় নিয়ে আগামী বছরগুলোতে কাজ করতে হবে। আমরা আশা করছি, যত দ্রুত সম্ভব রিলায়্যাবল পাওয়ার সোর্স তৈরি করতে পারব। যেকোনো পরিকল্পনা নিতে হলে শর্ট, মিড ও লং-টার্ম নিতে হয়। আমরা শর্ট ও মিড-টার্ম পরিকল্পনা বাস্তবায়ন প্রায় শেষ করেছি। এখন বড় চ্যালেঞ্জ হবে লং-টার্ম পরিকল্পনা সফল করা।
তিনি বলেন, বিশ্বের বড় বড় দেশ আমাদের সাথে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ফলে আমাদের ভবিষ্যৎ অনেক বেশি ভালো হবে। আমাদের মন্ত্রণালয় নিয়ে যেসব সমালোচনা এসেছে, ভালোভাবে নিয়েছি। এ জন্যই আমার পিরিয়ডে প্রায় ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত হয়েছে।

বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, এবার ঐক্যফ্রন্ট যারা কখনো এলাকায় যাননি, নেতাকর্মীদের সাথে কোনো সম্পৃক্ততা নেই তাদের মনোনয়ন দিয়েছে। ফলে তারা জনসমর্থন পাননি। ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের অপেক্ষায় ছিল মানুষ। নির্বাচনে তরুণ প্রজন্ম প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল বাংলাদেশের যে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন তারাও সে একই অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছিলেন। তাই নির্বাচনে তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছেন। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াতের যে অত্যাচার নির্যাতন তারই ধারাবাহিকতায় ২০০৮ সালে মানুষ তাদের বিপক্ষে গণরায় দিয়েছিল। ২০১৪ সালে নির্বাচনে তারা অংশগ্রহণ করেনি। ২০১৮ তে মানুষ একইভাবে তাদের বিরুদ্ধে গণরায় দিয়েছে।

স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, নেতৃত্বহীনতার কারণেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্টের ভরাডুবি হয়েছে। ঐক্যফ্রন্ট অত্যন্ত অগোছালোভাবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। তাদের জোট ছিল নেতৃত্বহীন, মাথাবিহীন। তাদের নেতৃত্বের মধ্যে কোনো সমন্বয় ছিল না। তাই নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্টের এত বড় পরাজয় হয়েছে। খেলার মাঠে যদি শক্তিশালী ও দক্ষ সেনাপতি না থাকে তাহলে সে দল জয় লাভ করতে পারে না। ঐক্যফ্রন্টের অবস্থাও ছিল সে রকম। একেক সময়ে একেকজন নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাদের মধ্যে কোনো সমন্বয় ছিল না।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top