শেরপুর সীমান্তে খাবারের সন্ধানে আসা হাতির মৃত্যু

শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার পানিহাতা সীমান্তের ধানক্ষেত থেকে খাবারের সন্ধানে আসা একটি হাতির মরদেহ উদ্ধার করেছে বনবিভাগের কর্মীরা। শুক্রবার ভোরে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।

এই নিয়ে মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে শেরপুরের গারো পাহাড়ে দুটি হাতির মৃত্যু হলো। গত ৯ নভেম্বর শ্রীবরদী উপজেলার সীমান্তবর্তী রানিশিমূল ইউনিয়নের মালাকোচা গ্রামে বিদ্যুতের ফাঁদে ফেলে একটি পুরুষ হাতিকে হত্যা করা হয়। সব মিলিয়ে গত ৬-৭ বছরে গারো পাহাড়ে ২৬টি হাতির প্রাণ গেল।

ওই বিটের দায়িত্বে থাকা ময়মনসিংহ সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা মেজবাউল ইসলাম বলেন, ‘পানিহাতা-মায়াঘাষি দুটি গ্রামের মাঝখানে একটি ধানক্ষেতে মৃত হাতিটি পাওয়া যায়। মাদি হাতিটির বয়স আনুমানিক আড়াই থেকে তিন বছর হবে। সুরতহালে হাতির শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তার পেট বেশ ফোলা ছিল। ঘটনাস্থলে প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা এসেছেন। পরীক্ষা করার পর হাতিটি মৃত্যুর কারণ বলা যাবে।’

ঘটনাস্থলে থাকা নালিতাবাড়ী থানার এসআই মো.আনোয়ার হোসেন বলেন, চাঁন মিয়া ওরফে চানু পাগলের ক্ষেত থেকে হাতিটির মরদেহ পাওয়া যায়। স্থানীয়রা তাকে জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে এক পাল হাতি ধানক্ষেতে হানা দেয়। সকালে মৃত অবস্থায় হাতিটি পাওয়া যায়।

পরিবেশবাদী সংগঠন বার্ড কনজারভেশন অব শেরপুরের সভাপতি সুজয় মালাকার বলেন, ‘আমরা সকালে এসে দেখি কাউকে না জানিয়ে কয়েকজন হাতিটিকে গর্ত করে মাটি চাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। তখন প্রবীণ মানকিন নামের একজন বাঁধা দেন। এর মধ্যে আমরা চলে এলে তারা চলে যায়।’

ঘটনাস্থলে থাকা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মনিরুল খান বলেন, ‘আমরা ভোরবেলায় ঘটনাস্থলে আসার পর দেখতে পাই হাতিটিকে মাটি চাপা দেওয়ার উদ্দেশ্যে গর্ত করা হয়েছে। স্থানীয়ভাবে শুনেছি, বিদ্যুতের ফাঁদ দিয়ে হাতিটিকে মেরে ফেলা হয়েছে। পরে তার সরিয়ে ফেলা হয়।’

ঘটনাটি দুঃখজনক উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এভাবে মরতে থাকলে হাতি নিঃশেষ হতে বেশি দেরি লাগবে না। বনের জায়গায় চাষবাস হওয়ার কথা নয়। এখানে বন থাকলে এ অবস্থা হতো না।’

মধুটিলা রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুল করিম বলেন, ‘৩০-৪০টির এক পাল হাতি বেশ কিছুদিন ধরে খাবারের সন্ধানে ধান ও সবজি ক্ষেতে হানা দিচ্ছিল। স্থানীয়রা রাতে মশাল জ্বালিয়ে, সার্চ লাইট দিয়ে তাদের প্রতিরোধের চেষ্টা করছিলেন।’

ময়মনসিংহের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এ কে এম রহুল আমিন বলেন, ‘হাতি অত্যন্ত নিরীহ প্রাণী। আমরা চেষ্টা করছি, যাতে হাতির কোনো ক্ষতি না হয়।’

এ ব্যাপারে ইতিমধ্যেই ২০-২৫টি সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘হাতিকে মেরে ফেললে আমরা কোনো ছাড় দেবো না। মালাকোচা গ্রামে হাতি মৃত্যুর ঘটনায় ৪ জনের নামে মামলা হয়েছে। আশা করছি, শাস্তি হবে। আজকের হাতি মৃত্যুর ঘটনায় ময়নাতদন্ত হচ্ছে। তদন্ত করে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তিনি গারো পাহাড়ে হাতি রক্ষার জন্য জনপ্রতিনিধিসহ সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

Share this post

scroll to top