শেরপুরে ৩০ হাজার শিশু প্রাথমিকে ঝরে পড়েছে

child in primary schoolশেরপুর জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়েছে ৩০ হাজার ২৭৩ শিশু। এর মধ্যে ২১৫ শিশু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কখনও ভর্তি হয়নি। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ঝরেপড়া আট থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের আবারও পড়ালেখায় ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তাদের ‘আউট অব স্কুল চিলড্রেন’ কার্যক্রমের আওতায় পঞ্চম শ্রেণি পাসের পর দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আত্মকর্মী হিসেবে গড়ে তোলার পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। জেলায় আগামী তিন বছরে ঝরেপড়া চার হাজার ২০০ শিশুকে আউট অব স্কুল চিলড্রেন কর্মসূচির আওতায় এনে পড়ালেখার সুযোগ সৃষ্টি করা হবে।

গতকাল শেরপুরে আউট অব স্কুল চিলড্রেন শনাক্তকরণ কার্যক্রমের জেলা পর্যায়ের এক অবহিতকরণ সভায় এ তথ্য জানানো হয়। চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির (পিইডিপি-৪) আওতায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট আয়োজিত এ অবহিতকরণ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব।

অনলাইনে জুম ক্লাউডে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত এ সভায় জেলা পর্যায়ের সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞ, স্থানীয় স্টেকহোল্ডার, সাংবাদিক, শিক্ষা কর্মকর্তা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জেলা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর উপপরিচালক সৈয়দ মোক্তার হোসেন।

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, ২০২০ সালের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শিক্ষা জরিপ অনুসারে জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয় গমনোপযোগী শিশুর সংখ্যা দুই লাখ দুই হাজার ৯২৯। এর মধ্যে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছে দুই লাখ দুই হাজার ৭১৪ জন। বিদ্যালয়ে ভর্তির হার ৯৯ শতাংশ হলেও এক শতাংশ শিশু বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়নি। তাছাড়া প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা পর্যন্ত যেতে ১৩ শতাংশ শিশু ঝরে পড়ছে। অর্থাৎ জেলায় ঝরেপড়া শিশুর সংখ্যা ৩০ হাজার ২৭৩।

এতে আরও জানানো হয়, ঝরেপড়া এসব শিশু জড়িয়ে পড়ছে শিশুশ্রমে। অনেকেই শিকার হয়েছে বাল্যবিয়ের। শেরপুর জেলার ঝরেপড়া এসব শিশুর মধ্যে আগামী তিন বছরে সদর ও ঝিনাইগাতী উপজেলায় আউট অব স্কুল চিলড্রেন কর্মসূচির আওতায় আট থেকে ১৪ বছর বয়সী চার হাজার ২০০ শিশুকে নিয়ে প্রতি উপজেলায় একজন শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে ৩০ জন করে ৭০টি শিক্ষাকেন্দ্র স্থাপন করা হবে। তাদের পঞ্চম শ্রেণি পাস করার পর চাহিদা অনুযায়ী দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এতে তারা নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্ত হয়ে স্বাবলম্বী হতে পারবে বলে জানানো হয়।

এসময় জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব আউট অব স্কুল চিলড্রেন কার্যক্রম বাস্তবায়নে সবার সহযোগিতা কামনা করেন। এজন্য ঝড়েপড়া শিক্ষার্থী বাছাইয়ে যাতে কোনো ধরনের ত্রুটি না হয় এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিয়মিত ছাত্র যেন এতে অন্তর্ভুক্ত না হয়, সেদিকে দৃষ্টি রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. ওয়ালীউল হাসানের সভাপতিত্বে এ অবহিতকরণ সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার উপপরিচালক এটিএম জিয়াউল ইসলাম ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মোহিত কুমার দে। বিশেষ আলোচক হিসেবে সংযুক্ত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞ ড. মো. আব্দুল কাইয়ুম, সহযোগী অধ্যাপক সৈয়দা আতিকুন নাহার, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাইয়্যেদ এ জেড মুরশিদ আলী।

অন্যান্যের মাঝে আলোচনা করেন জেলা শিক্ষা অফিসার সৈয়দ মো. রেজুয়ান, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফেরদৌসী বেগম, বাস্তবায়নকারী সংস্থা ‘প্রত্যয়’-এর নির্বাহী পরিচালক রেবেকা ইয়াসমিন রেবা প্রমুখ।

Share this post

scroll to top