রংপুরে বাড়িতে ঢুকে আইনজীবীকে গলা কেটে হত্যা

রংপুর মহানগরীর মডার্ন মোড় সংলগ্ন বারো আউলিয়া গ্রামে দিন-দুপুরে বাড়িতে ঢুকে হত্যা করা হয়েছে প্রবীণ আইনজীবী আসাদুল ইসলামকে। এ ঘটনায় এলাকাবাসী একজনকে আটক করে পুলিশে দিয়েছে। শুক্রবার জুমআর নামাজের সময়ের এই ঘটনায় ওই এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে পুলিশ।

নিহত আইনজীবী আসাদুল ইসলামের মুহুরী ইউসুফ জানান, করোনায় পরিবারকে গ্রামে পাঠানোর কারণে আমার বাড়িতেই খাওয়া-দাওয়া করতেন আইনজীবী আসাদুল। শুক্রবার সকাল দশটার দিকে আমার সাথে তিনি মুরগী কিনে আমার বাসায় দিয়ে রান্না করতে বলেন। দুপুর ১টা ১১ মিনিটে আমাকে ফোন দিয়ে বলেন, জুমআর নামাজ শেষে তোমার বাসায় গিয়ে খাওয়া-দাওয়া করব। ওই সময় তিনি মসজিদে যাওয়ার জন্য অজু করছিলেন। কিন্তু দুপুরে সেই রান্না খেতে পারলেন না তিনি। দুপুর ১টা ২০ মিনিটের দিকে বাড়িতে ঢুকে ঘরের ভিতরে নৃশংসভাবে তাকে গলা কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নামাজ শেষ হতে না হতেই শুনি তাকে হত্যা করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও হত্যাকারী রতনকে আটককারী যুবক জানান, পাশের মসজিদে জুমআর নামাজ আদায় করার জন্য যাওয়ার সময় এডভোকেট সাহেবের বাড়ির ভেতর থেকে চিৎকারের আওয়াজ আসে। সাথে সাথে আমি চারজনকে নিয়ে পেছনের দিকে যাই দেখি দেয়াল টপকিয়ে রতন নামে বাড়ির পাশের এক যুবক বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করছে। সাথে সাথে আমরা তাকে আটক করি। বাড়ির ভেতরে ঢুকে দেখি ঘরের মধ্যে অ্যাডভোকেটকে গলা কেটে হত্যা করে বাইরে তালা মেরে রাখা হয়েছে।

তাৎক্ষণিকভাবে তালা ভাঙতে না পেরে জানালা ভেঙ্গে আমরা অ্যাডভোকেটকে উদ্ধার করে বাইরের বারান্দায় নিয়ে আসি এবং তাজহাট থানা পুলিশকে ডেকে রতনকে তাদের হাতে সোপর্দ করে।

তবে সরেজমিনে দেখা গেছে লাশটি পড়েছিল টিনশেড বিল্ডিংয়ের ওই বাড়ির বারান্দার পূর্ব প্রান্তে। যে ঘরে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা দাবি করছিল সেই ঘরটি দরজা ছিল তালাবদ্ধ। এছাড়াও যে জানালা দিয়ে লাশটিকে বের করার কথা বলা হচ্ছিল, তা এমনভাবে ভাঙ্গা ছিল যা দিয়ে ওই ব্যক্তির লাশ বের করা সম্ভব নয়। এছাড়াও জানালা এবং জানালার পাশে থাকা টেবিলে কোনো ধরনের রক্তের দাগ ছিল না। একটি চাকু পড়েছিল বারান্দার বাইরে মাটির মধ্যে।

রংপুরে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় দেড় মাস আগে স্ত্রী সাহেরা এবং ছোট মেয়ে অংকনকে গ্রামের বাড়ি মিঠাপুকুরের বালুয়া মাছুমপুরে পাঠিয়েছিলেন আইনজীবি আসাদুল। ছোট মেয়ে অংকন বগুড়া আজিজুল হক কলেজের অনার্সের ছাত্রী। তার বড় মেয়ে আশা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার পর এখন অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী। হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়ে স্ত্রী ও ছোট মেয়ে ছুটে আসেন বাড়িতে।

নিহতের ছোট মেয়ে অংকন জানান, এর আগেও আটক ব্যক্তি মোবাইল ফোন চুরির জন্য ওই বাড়িতে ঢুকেছিলেন। সে বিষয়ে থানায় মামলা হলেও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আজ আমার বাবাকে ঘরে ঢুকে তিনি হত্যা করলো। আমি হত্যার বদলে হত্যা চাই।

স্ত্রী সাহেরা খাতুন জানান, করোনার কারণে আমরা গ্রামের বাড়িতে ছিলাম। আমার স্বামীকে এভাবে যারা হত্যা করেছে তাদের আমি ফাঁসি চাই।

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের আজহার থানার ওসি শেখ রোকনুজ্জামান জানান, এ হত্যার পেছনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ইতোমধ্যেই আমরা তদন্তের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। বিষয়টি যাচাই-বাছাই করা মাত্রই সেটি মিডিয়াকে জানানো হবে।

আটক রতন নিহতের বাড়ির পাশের জাফর আলী ড্রাইভারের ছেলে। তার সাথে আর কারা ছিলেন তা জানতে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।

Share this post

scroll to top