যেসব খাবার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়

আপনার হয়তো এটা অজানা নয় যে, পুষ্টিকর খাবার ইমিউন সিস্টেম বা শরীরের রোগ দমনকারী তন্ত্রকে সহায়তা করে। পুষ্টিকর খাবার খেলে ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী হয়ে বিভিন্ন সংক্রমণের বিরুদ্ধে কার্যকর লড়াই করতে পারে। এখন কোভিড-১৯ নামক একটি সংক্রমণের মহামারি চলছে বলে আমাদের ডায়েটে স্বাস্থ্যকর খাবার সংযোজনের ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে। সেইসঙ্গে ডায়েটে অস্বাস্থ্যকর খাবার আছে কিনাও চেক করতে হবে। অস্বাস্থ্যকর খাবার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে ফেলে। এছাড়া কিছু প্রয়োজনীয় খাবার বেশি খেলেও ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে পড়ে, যেমন- লবণ। এখানে ইমিউন সিস্টেমের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এমন কিছু খাবার সম্পর্কে বলা হলো।

অ্যালকোহল: ২০১৮ সালে দ্য ল্যানসেটে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অ্যালকোহল পানের জন্য কোনো নিরাপদ মাত্রা নেই। অর্থাৎ যতটুকু অ্যালকোহল পান করা হোক না কেন, শরীরের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। অত্যধিক অ্যালকোহল পানে অল্প সময়ের মধ্যে ইমিউন সিস্টেম ভেঙে পড়তে পারে। কিন্তু কোভিড-১৯ থেকে সুরক্ষায় এ মুহূর্তে শক্তিশালী ইমিউন সিস্টেম গুরুত্বপূর্ণ।

লবণ: অতিরিক্ত লবণ খেলে শরীরে পানি জমতে পারে ও রক্তচাপ বাড়তে পারে। ইউনিভার্সিটি হসপিটাল অব বনের একটি গবেষণা বলছে, অত্যধিক লবণ ইমিউন রেসপন্সকেও দুর্বল করে দিতে পারে। গবেষকদের মতে, যখন কিডনি লবণ অপসারণ করে তখন যে ডমিনো ইফেক্ট সৃষ্টি হয় তাতে সংক্রমণের বিরুদ্ধে শরীরের যুদ্ধ করার ক্ষমতা কমে যায়। ডায়েটারি গাইডলাইনস ফর আমেরিকানসের পরামর্শ হচ্ছে, একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন ২,৩০০ মিলিগ্রামের বেশি লবণ খাওয়া উচিত নয়।

চিনি: চিনির ব্যবহার কমিয়ে দেয়ার মতো অনেক কারণ রয়েছে। কেবল ইমিউন সিস্টেমের কথা ভেবে নয়, মানসিক সুস্বাস্থ্যের জন্যও চিনি সীমিত করা উচিত। দ্য আমেরিকান জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনে প্রকাশিত গবেষণা মতে, বেশি চিনি খেলে ইমিউন কোষের কার্যক্ষমতা ব্যাপক মাত্রায় কমে যায়। চিনি খাওয়ার এক থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যে বড় প্রতিক্রিয়া হয়, যা পাঁচ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। তার মানে এ নয় যে চিনি সম্পূর্ণ পরিহার করতে হবে, সীমিত পরিমাণে চিনি খেতে পারবেন। খেয়াল রাখতে হবে যেন অল্প সময়ের মধ্যে বেশি চিনি খাচ্ছেন না। দ্য আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন নারী ও পুরুষদের প্রতিদিন যথাক্রমে ছয় ও নয় চা-চামচের বেশি চিনি না খেতে পরামর্শ দিয়েছে।

ক্যাফেইন: চা ও কফিকে স্বাস্থ্য সুরক্ষামূলক পানীয় বলা হয়, কারণ এতে বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট প্রদাহ প্রশমিত করতে পারে। কিন্তু অত্যধিক ক্যাফেইন খেলে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে, যার ফলে প্রদাহ বেড়ে যায় ও ইমিউন সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ইমিউন সিস্টেমকে সাপোর্ট দিতে সেসব পুষ্টিহীন পানীয় পরিহার করুন যেখানে চিনি ও কৃত্রিম সুইটেনার ব্যবহার করা হয়, যেমন- কোমল পানীয় বা এনার্জি ড্রিংকস। চা ও কফি পান করতে পারবেন, কিন্তু ঘুমের ব্যাঘাত না ঘটাতে নিশ্চিত হোন যে বিছানায় যাওয়ার ছয় ঘণ্টা আগে পান করছেন।

স্ট্রবেরি: এখানে স্ট্রবেরি দেখে আপনি চমকে ওঠতে পারেন। আপনি জানেন যে স্ট্রবেরি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। হ্যাঁ সীমিত পরিমাণে খেলে ঠিক আছে, কিন্তু এ ফল বেশি খাওয়া উচিত নয়। গবেষণা বলছে, স্ট্রবেরি বেশি খেলে ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে যেতে পারে। চলমান কোভিড-১৯ মহামারিতে দুর্বল ইমিউন সিস্টেম কাম্য নয়। স্ট্রবেরি বেশি খেলে শরীরে হিস্টামিনের মাত্রা বেড়ে যায়, যা নাকবদ্ধতা সৃষ্টি করে। হিস্টামিন বেড়ে গেলে নাকে অস্বস্তিকর অনুভূতি ও সাইনাস সমস্যা তীব্র হয়।

চিপস: শুধু শিশুরাই নয়, অনেক প্রাপ্তবয়স্ক মানুষও চিপস খেতে ভালোবাসেন। কেউ কেউ মুভি দেখার সময় এত বেশি চিপস খেয়ে ফেলেন যে স্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখে চলে যায়। চিপস হলো অতি প্রক্রিয়াজাত একটি খাবার যেখানে লবণ ও চর্বির পরিমাণ বেশি। এ খাবার ইমিউন সিস্টেমকে দুর্বল করে, ফলে সংক্রমণের জটিলতায় ভোগার ঝুঁকি বাড়ে। প্রায়সময় চিপস খেলে রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যাবে।

আইসক্রিম: আপনার মনে হতে পারে গরমের দিনে আইসক্রিমের মতো স্বস্তিকর খাবার আর কিছু হতে পারে না। যতই স্বস্তি পান না কেন, আইসক্রিম খাওয়ার লোভ সংবরণ করতে হবে। শিশুদের হাতেও যখন তখন আইসক্রিম তুলে দেয়া উচিত নয়। এ খাবারে চর্বি ও চিনির অস্বাস্থ্যকর মাত্রা ইমিউন সিস্টেমের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে ও শরীরে প্রদাহের মাত্রা ব্যাপক হারে বাড়িয়ে দেয়। করোনাভাইরাস সংক্রমণেও প্রদাহ বাড়ে বলে এসময় আইসক্রিম সম্পূর্ণ পরিহার করতে হবে।

Share this post

scroll to top