যুক্তরাষ্ট্রে কেন করোনার সংক্রমণ হু হু করে বাড়ছে

বিভিন্ন রাজ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের মধ্যে এনিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

সংক্রামক রোগ বিষয়ক প্রধান ড. অ্যান্থনি ফাউচি বলেছেন, এবিষয়ে দেশটির বড় ধরনের সমস্যা রয়েছে।

সম্প্রতি হঠাৎ করেই ১৬টি রাজ্যে সংক্রমণের হার উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়ার পর হোয়াইট হাউজে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত টাস্ক ফোর্সের ব্রিফিং-এ তিনি এই মন্তব্য করেন।

ড. ফাউচি বলেন, “সবাই মিলে একসঙ্গে নির্মূল করার মাধ্যমেই আমরা একমাত্র এর অবসান ঘটাতে পারবো।”

তবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা যখন বলছেন যে সংক্রমণের বিস্তার শ্লথ করে দিতে অবশ্যই আরো কিছু ব্যবস্থা নিতে হবে তখন ভাইস প্রেসিডেন্ট পরিস্থিতির ‘অগ্রগতির’ প্রশংসা করেছেন।

শুক্রবার সারা দেশে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে ৪০ হাজারেরও বেশি লোককে শনাক্ত করা হয়েছে। বৃহষ্পতিবারেও সংখ্যাটা এর কাছাকাছিই ছিল।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের হিসাব রাখে যে জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় তারা বলছে, শুক্রবার মোট ৪০,১৭৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন যা আগের দিনের চেয়ে সামান্য বেশি এবং নতুন রেকর্ড।

মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে এদিনই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন।

এই যুক্তরাষ্ট্রেই বিশ্বের যেকোনো দেশের তুলনায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ এই ভাইরাসে মারা গেছেন ও আক্রান্ত হয়েছেন।

সারা দেশে ২৪ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন এবং মারা গেছেন কম করে হলেও এক লাখ ২৫ হাজার।

কী বলছে সংবাদ ব্রিফিং
হোয়াইট হাউজ টাস্ক ফোর্সের এই সংবাদ সম্মেলন থেকে উপসর্গ না থাকলেও তরুণদেরও পরীক্ষা করার উপর জোর দেয়া হয়েছে।

বিশেষ করে দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হুট করে বেড়ে গেছে।

টেক্সাস, ফ্লোরিডা এবং অ্যারিজোনা রাজ্যে এই বৃদ্ধির কারণে দোকান-পাট অফিস আদালত খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা স্থগিত করা হয়েছে। নতুন করে আরোপ করা হয়েছে আরো কিছু বিধি-নিষেধ।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সংক্রমণের যে হিসাব দেওয়া হচ্ছে আক্রান্ত ব্যক্তির প্রকৃত সংখ্যা তারচেয়েও ১০ গুণ বেশি।

টাস্ক ফোর্সের সমন্বয়কারী ড. ডেবোরা বির্ক্স পরীক্ষা করাতে এগিয়ে আসায় তরুণদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছেন, “আগে তাদের বলতাম বাড়িতে থাকতে, এখন আমরা তাদের পরীক্ষা করাতে বলছি।”

তিনি বলেন, এর ফলে উপসর্গ না থাকার কারণে যারা ধরা পড়তো না, তাদেরকেও এখন চিহ্নিত করা সম্ভব হবে।

সংক্রমণের সব হিসাব নিকাশ তুলে ধরার পর ড. ফাউচি বলেন, “কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা বড় ধরনের সমস্যায় পড়েছি। দেশের একটি এলাকায় যা হচ্ছে চূড়ান্তভাবে অন্য এলাকাতেও তার প্রভাব পড়তে পারে।”

তিনি মনে করেন, কোথাও কোথাও লকডাউন একটু আগেই শিথিল করে দেওয়ার কারণে সেসব জায়গায় সংক্রমণ বেড়ে গেছে।”

“লোকজন অন্যদের আক্রান্ত করছে এবং আপনি হয়তো এমন একজনকে আক্রান্ত করতে পারেন যার স্বাস্থ্য নাজুক অবস্থায় রয়েছে।”

তিনি বলেন, “সবার যেমন নিজের ব্যাপারে দায়িত্ব রয়েছে, তেমনি দায়িত্ব রয়েছে সামাজিকভাবেও। আমরা যদি এই মহামারির অবসান ঘটাতে চাই তাহলে আমাদেরকে বুঝতে হবে যে আমরাও এই প্রক্রিয়ার একটি অংশ।”

তার মতে এর বিস্তার ঠেকানো না হলে যেসব জায়গায় উন্নতি হয়েছে সেখানেও তার প্রভাব পড়বে।

কিন্তু ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স নিউ ইয়র্ক ও নিউ জার্সির কথা উল্লেখ করে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির “অনেক অগ্রগতি” হয়েছে বলে তার প্রশংসা করেছেন।

“আমরা এর বিস্তারের গতি কমিয়ে দিয়েছি, কার্ভটাকে সমান করে ফেলেছি, আমরা জীবন রক্ষা করেছি,” বলেন তিনি।

তবে লকডাউন শিথিল করার সাথে করোনাভাইরাসের বিস্তার লাভের ধারণাকে তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন।

এজন্য তিনি উপসর্গবিহীন লোকজনের পরীক্ষায় পজিটিভ ফল আসাকে দায়ী করেছেন।

হোয়াইট হাউজের কঠিন সময়
বিবিসির সংবাদদাতা বলছেন, মহামারি মোকাবেলায় হোয়াইট হাউজ এখন কঠিন সময় পার করছে।

“যেসব রাজ্যে গভর্নররা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে আসছে এই বার্তার ওপর জোর দিচ্ছেন সেখানে সংক্রমণ উর্ধ্বমুখী হয়েছে।

স্বাস্থ্য বিষয়ক জাতীয় সঙ্কটের সময়েও জনস্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার বিষয়ে রাজ্যগুলো স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

রাজ্যের গভর্নররাই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন কোথায় কতোটুকু লকডাউন করা হবে।

বিধি-নিষেধ তুলে নেওয়ার ব্যাপারে সবচেয়ে সামনের সারিতে ছিল টেক্সাস। সেখানে সংক্রমণ দ্রুত বাড়তে থাকায় সেখানে সবকিছু খুলে দেওয়া পরিকল্পনা স্থগিত করা হয়েছে।

টেক্সাসে বৃহস্পতিবার প্রায় ৬০০০ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। গত এক মাসে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ (৪৭ জন) মারা গেছে এদিনই।

নতুন রেকর্ড করেছে ফ্লোরিডাও। শুক্রবারে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৯,০০০। সেখানেও লকডাউন শিথিল করার পরিকল্পনা আপাতত ভণ্ডুল হয়ে গেছে।
সূত্র : বিবিসি

Share this post

scroll to top