যুক্তরাষ্ট্রের প্রচণ্ড ঠাণ্ডার পেছনের কারণ

যুক্তরাষ্ট্রে যে ভয়াবহ ঠাণ্ডা পড়েছে, তার সঙ্গে হয়তো জড়িয়ে রয়েছে ‘বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি’র মতো বিষয়। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো অনেকেই প্রশ্ন তুলবেন, তাহলে কেন এরকম মানুষ মারা যাওয়ার মতো ঠাণ্ডা পড়েছে?

আসলে উষ্ণতা বৃদ্ধি মানে এটাই নয় যে, আমরা সব সময় সব জায়গায় শুধু গরম আবহাওয়াই দেখতে পাবো। এই শব্দগুলোর প্রচলন হয়েছিল এটা বোঝাতে যে, বিশ্বের তাপমাত্রা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে এবং সেটা চরম আবহাওয়ার তৈরি করতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রে জমে যাওয়ার মতো যে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা পড়েছে, সেটাও হয়তো তারই একটি উদাহরণ। একই সময়ের এরকম আরো উদাহরণ হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ায় সেদ্ধ হয়ে যাওয়ার মতো প্রচণ্ড গরম পড়া আর আফ্রিকার সাহেল অঞ্চলের খরা।

মেরু অঞ্চলের উষ্ণতা বৃদ্ধি
যুক্তরাষ্ট্রে অনেক এলাকায় প্রচণ্ড ঠাণ্ডার কারণে যে অচলাবস্থা দেখা গিয়েছে, সেটার ব্যাপারে অনেক আগে থেকেই জলবায়ু বিজ্ঞানীরা পূর্বাভাস দিয়ে আসছেন। বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখানো হয়েছে, এর আসল উপাদান সৃষ্টি হয়েছে মেরু অঞ্চলের উষ্ণতা বৃদ্ধির মাধ্যমে।

তারা বলছেন, এর ফলে বরফ বিহীন সমুদ্রের সৃষ্টি হচ্ছে, যার ফলে অনেক বেশি তাপ ছড়িয়ে পড়ছে। তখন সেটি মেরু অঞ্চলের ওপর দিয়ে ঠাণ্ডা বাতাসের পরিচালন দুর্বল করে ফেলছে এবং সেটিকে দক্ষিণ দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

”যখন মেরু এলাকা ঠাণ্ডা থাকে, তার তুলনায় ঠাণ্ডা তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া এবং তুষারপাতের ঘটনা অনেক বেশি নিয়মিত ঘটে যখন সেটি উষ্ণ হয়ে ওঠে” গত বছর নেচার কমিউনিকেশনে প্রকাশিত একটি গবেষণায় এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

”আমরা আরো দেখতে পেয়েছি, তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে সেটি বায়ুমণ্ডলের কয়েকটি স্তরে ছড়িয়ে পড়ে, ফলে মধ্য শীত বা শীতের শেষের দিকে ভয়াবহ ঠাণ্ডার মতো পরিস্থিতি তৈরির সম্ভাবনা দেখা যায়।”

এই অবস্থায় আইসি পোলার এয়ার বা পোলার ভোরটেক্স নামে চরম ঠাণ্ডা বাতাস দক্ষিণ এলাকাগুলোয় ছড়িয়ে পড়ে।

”মেরুর উত্তরাঞ্চল জুড়ে ছড়িয়ে পড়ার পরিবর্তে বায়ু মণ্ডলের এই ঠাণ্ডা বাতাস আস্তে আস্তে ঘুরতে ঘুরতে যুক্তরাষ্ট্র, আটলান্টিক আর ইউরোপের ওপর দিয়ে বয়ে যেতে থাকে”, ২০১৩ সালের একটি গবেষণায় তুলে ধরা হয়েছে।

”এই চক্রের দক্ষিণ অংশ কিছুদিনের জন্য চরম ঠাণ্ডা আবহাওয়ার তৈরি করে, যা অনেক এলাকায় গিয়ে স্থির হয়ে থাকে।”

অমীমাংসিত বিজ্ঞান
তবে কিছু গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, কেন পোলার ভোরটেক্স তৈরি হয়, সেই রহস্য এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে।

”শীতের সময়কার ঠাণ্ডা বাতাস এবং সমুদ্র পৃষ্ঠের তাপমাত্রার জন্য যদিও পোলার ভারটেক্সের গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে, কিন্তু সাম্প্রতিক চরম ঠাণ্ডার পেছনে তার অবদান কতটুকু আছে, সে বিষয়ে এখনো যথেষ্ট তথ্য উপাত্তের অভাব রয়েছে,” ২০১৭ সালে বলেছে আমেরিকান আবহাওয়া বিদ্যা সমিতি।

ইস্ট অ্যানলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবায়ু গবেষণা কেন্দ্রের গবেষক বেন ওয়েবের বিবিসিকে বলছেন, ” উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে যে অনেক এলাকায় তাপ দাহ আরো তীব্র করে তোলে, সেটা এর মধ্যেই নিশ্চিত হওয়া গেছে। ঠাণ্ডা আবহাওয়ার তীব্রতাও যে এটি বাড়িয়ে দিতে পারে, কিন্তু সেটা বলতে হলে আরো গবেষণার দরকার হবে।”

কিন্তু একটা বিষয়ে অন্তত বিজ্ঞানীরা একমত হয়েছেন: বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে নিয়মিতভাবেই চরম আবহাওয়ার সৃষ্টি হচ্ছে। এর বাইরে আরো কিছু উপাদান সনাক্ত করেছেন বিজ্ঞানীরা, যা এরকম এরকম চরম আবহাওয়া সৃষ্টির পেছনে ভূমিকা রাখে।

এর একটির নাম ইদানীং আমরা প্রায়ই শুনে থাকি, সেটি হলো ‘এল নিনো অ্যাফেক্ট’ অথবা ইকুয়েডরের কাছাকাছি প্রশান্ত মহাসাগরের উষ্ণতা বৃদ্ধি। যখন সেটি ঘটে, জলবায়ু বিজ্ঞানীরা বলেন না যে, বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণেই এটার সৃষ্টি হয়েছে।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top