যথাসময়ে ইফতারে রাসুল (সা.) এর ছিল কঠোর নির্দেশনা

নবীজী (সা.) সূর্যাস্তের পরপরই ইফতার করতে পছন্দ করতেন, ইফতারে বিলম্ব করতেন না। হযরত সাহল ইবনে সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূল (সা.) বলেছেন, মানুষ ততদিন মঙ্গলের উপর থাকবে যতদিন ইফতার যথাসময়ে করবে (সহীহ বুখারী-১৯৫৭)|

ইফতারের সুন্নত হলো- অবিলম্বে ইফতার করা; অর্থাৎ সূর্য ডোবার অব্যবহিত পরেই ইফতার করা। বরং তারাগুলো উদিত হওয়া পর্যন্ত দেরি করা ইহুদীদের কর্ম এবং শিয়া রাফেযি সম্প্রদায় তাদের অনুসরণ করে আসছে। তাই ইচ্ছাকৃতভাবে ভালোভাবে সন্ধ্যা হওয়ার জন্য দেরি করা রোযাদারের জন্য বাঞ্ছনীয় নয়। এমনকি আযান শেষ হওয়া পর্যন্তও বিলম্ব করা ঠিক নয়। কারণ এর কোনোটা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ নয়।

আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে মোমিন বান্দার প্রতি বড় একটি অনুগ্রহ বা দয়া হলো ইফতার। হাদীস শরীফে এসেছে , রোজাদার বান্দার দু’টি মুহূর্ত সবচেয়ে বেশি আনন্দের।

১. আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে মোলাকাতের সময়।

২.ইফতারের সময়।

হাদিসে কুদসিতে আছে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয় সেই, যে ইফতার সঠিক সময়ে করে। (তিরমিযী, মেশকাত)।

ওপরের হাদিস থেকে বোঝা গেল, সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করা এটি সুন্নত এবং সওয়াবের কাজ।

ইফতারের আরেকটি সুন্নত হলো, খেজুর দিয়ে ইফতার করা। হযরত সালমান ইবনে আমের (রা.) বলেন, নবীজি (স.) বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন ইফতার করে, তার উচিত খেজুর দিয়ে ইফতার করে। তবে সে যদি খেজুর না পায়, তাহলে যেন পানি দিয়ে ইফতার করে। কারণ, পানি পাক-পবিত্র। (মুসনাদে ইবনে আবি শাইবা-মুসনাদে আহমাদ-সহিহ ইবনে খুজাইমা)।

রমজান মাস সহানুভূতির মাস। এ মাসে বৃদ্ধি করা হয় মুমিনের রিজিক, যে ব্যক্তি রোজাদারকে ইফতার করাবে ইহা তার গুনাহের ক্ষমা ও দোযখ থেকে মুক্তির কারণ হবে। তথাপি সে রোজাদারের সমপরিমাণ সাওয়াব প্রাপ্ত হবে, তবে রোজাদারের সাওয়াব হ্রাস করা হবে না।

সাহাবাগণ বললেন, ইয়া রাসূল (সা.) আমরা প্রত্যেকেতো রোজাদারকে ইফতার করানোর সামর্থ রাখি না। রাসূল (সা.) বললেন উক্ত সাওয়াব ওই ব্যক্তিকে প্রদান করা হবে, যেকোনো রোজাদারকে ইফতার করায় এক চুমুক দুধ, বা একটি খেঁজুর অথবা এক ঢোক পানি দিয়ে।

আর যে ব্যক্তি রোযাদারকে তৃপ্তি সহকারে আহার করাবে আল্লাহ তায়ালা তাকে আমার হাউস থেকে পানি পান করাবেন, সে জান্নাতে প্রবেশ পর্যন্ত আর তৃষ্ণার্ত হবেন না।

রমজান মাসের ১ম দশ দিনে রহমত, মাঝের দশ দিন বরকত ও শেষ দশ দিনে রয়েছে মাগফিরাত অর্থাৎ জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ। যে ব্যক্তি এ মাসে অধিনস্ত কর্মচারীদের কর্মভার লাঘব করবে আল্লাহ তায়ালা তাকে তাকে ক্ষমা ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করবেন। (বাইহাক্বী, মিশকাত শরীফ ১৭৩ পৃ:)

ইফতারের সময় দোয়া কবুল হয়। তাই বৈশ্বিক মহামারি করোনা উঠিয়ে নেওয়াসহ আমাদের যার যে কামনা-বাসনা আছে, মহান পরওয়ারদেগারের কাছে তা চাইতে পারি। আশা করা যায়, তিনি কবুল করবেন।

লেখক: মুফতি ও মুহাদ্দিস। জামেয়া ইসলামিয়া আজিজিয়া, ছাগলনাইয়া-ফেনী। খতিব-ছাগলনাইয়া মধ্যম বাজার জামে মসজিদ।

Share this post

scroll to top