ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, দেশের শ্রেষ্ঠ হাসপাতাল

মোহাইমীন

ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, এখন দেশের শ্রেষ্ঠ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। চিকিৎসা সেবায় সূদুরপ্রসারী মানসম্মত পরিবর্তন আনায় ২০১৮ সালে ”দেশসেরা” হাসপাতালের সম্মাননা দেয় সরকার। বর্তমান সময়ে কর্তৃপক্ষের বিচক্ষণতা ও স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করণের লক্ষ্যে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ায় দেশ জুড়ে আলোচিত এক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের নাম মানুষের  ‍মুখে মুখে রটে যাচ্ছে।

এখন ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজকে অনুসরণ করছে দেশের সরকারী বেসরকারী বিভিন্ন হাসপাতাল। এ হাসপাতাল থেকে  মানসম্মত চিকিৎসা পেয়ে রোগীরা স্বাস্থ্য সেবায় সরকারের যুগান্তরকারী ভূমিকা নিয়ে সন্তুষ্ট। সেবার মান থেকে এ হাসপাতালটি দিনের পর দিন সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

হাসপাতালের পরিবেশ চোখে পড়ার মতো। অন্যান্য সরকারী হাসপাতালগুলোর বাহিরের দিকটা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকলেও ভেতরের পরিবেশ স্বভাবত একটু অপরিচ্ছন্ন আর দূর্গন্ধযুক্ত লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বাহির ভেতর সমান পরিচ্ছন্ন। হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলোতে নেই কোনো দূর্গন্ধ, ময়লা বা অপরিচ্ছন্ন। ২৪ ঘন্টা বিরতিহীনভাবে কাজ করে যাচ্ছে হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। শুধু তাই নয়, হাসপাতালের ভেতরে বিভিন্ন সুসজ্জিত ফুলের টবে সাজানো রয়েছে বারান্দা।

একটা সময় হাসপাতালের সামনে দালালদের উপচে পড়া ভীড় ছিলো। সাধারণ মানুষ অনেক সময় হাসপাতালে যেতে ভয় পেত, না জানি দালালের খপ্পরে পড়ে প্রতারিত হয়!  কিন্তু বর্তমান দালাললের বিচরণ প্রায় নেই বললেই চলে। ২০১৬ সালে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ নাসির উদ্দীন হাসপাতালের পরিচালকের দায়িত্ব পাওয়ার পর হতেই হাসপাতাল প্রাঙ্গণ হতে একে একে দূর হতে থাকে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্ণীতি। পাল্টাতে থাকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। তারই ধারাবাহিকতায় আজ দেশের সেবাদানকারী হাসপাতালের গৌরব অর্জন করে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, এ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে শুরু করে প্রতিটি ভবনের দেয়ালে দেয়ালে সাঁটানো নোটিশে বলা হয়েছে ‘হাসপাতালে সরবরাহকৃত সরকারী ঔষধ শতভাগ প্রদান করা হয়।’ এ সংক্রান্ত কোন অভিযোগ থাকলে জানাতে বলা হয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপকে।

থানার মতো সিটিজেন চার্টারের বেশিরভাগজুড়েই সেই ওষুধ সরবাহের কথাই। অর্থাৎ, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নোটিশ দিয়েই জানান দিচ্ছে এ হাসপাতালে ওষুধের কোন সমস্যা নেই।

অধুনালুপ্ত বৃহত্তর ময়মনসিংহের ৬ জেলার প্রায় ৪ কোটি মানুষের চিকিৎসা সেবার প্রধান আশ্রয়স্থল এ হাসপাতাল। সিলেট, সুনামগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, গাজীপুরের মানুষজনও প্রতিদিন এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। হাসপাতালের এক হাজার শয্যার বিপরীতে এখানে রোগী ভর্তি থাকেন আড়াই হাজার থেকে পৌনে ৩ হাজার। এছাড়া হাসপাতালের জরুরি বিভাগে প্রতিদিন গড়ে পাঁচ শতাধিক এবং হাসপাতালের বহির্বিভাগে পাঁচ সহস্রাধিক রোগী চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন।

দেশের সব সরকারি হাসপাতালের মধ্যে সর্ব প্রথম ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চালু হয়েছেন ওয়ান স্টপ সার্ভিস। এ সার্ভিস চালুর সুফল পাচ্ছেন রোগীরা। ২৪ ঘন্টাই হাসপাতালে মিলছে সেবা। আর এ সার্ভিস চালু করে সোব নিশ্চিত করতে হাসপাতাল পরিচালক ইমারজেন্সি ওয়ান স্টপ সার্ভিসে যুক্ত করেছেন এক্স-রে মেশিন, আলট্রাসনোগ্রাফি মেশিন, ইসিজি, প্যাথলজি ল্যাব ও অপারেশন থিয়েটার স্থাপনসহ পর্যবেক্ষণ ওয়ার্ড ও ডে-কেয়ার সুবিধা।

মেডিসিন, গাইনি, কার্ডিওলজি, অর্থোসার্জারি, শিশু, পেডি-সার্জারি ও এনেসথেসিওলজি অ্যান্ড ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ নার্স, প্যারামেডিক ও সাপোর্ট স্টাফ রয়েছেন ওয়ান স্টপ সার্ভিসে। এ সার্ভিস চালুর ফলে হাসপাতালে রোগী ভর্তির চাপ কমার পাশাপাশি ভোগান্তিও হ্রাস পেয়েছে।

হাসপাতালের ইমার্জেন্সি রুম বা বিভিন্ন ওয়ার্ডের সামনে অভিযোগ নাম্বার দেয়া আছে, যদি কেউ পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা হতে বঞ্চিত হয়, বা ডাক্তারদের কোনো অবহেলা থাকে। তাহলে যেকেউ প্রয়োজনীয় অভিযোগ করতে পারবে। যা দেশের সর্বোচ্চ চিকিৎসালয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও নেই।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top