ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ বহিষ্কার ১০

ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে জনৈক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অপবাদ দিয়ে মানববন্ধন কর্মসুচীতে আপত্তিকর মন্তব্য করায় কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল হাসানসহ ১০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিস্কার করেছে কলেজ একাডেমিক কাউন্সিল।

শনিবার বিকেলে একাডেমিক কাউন্সিলের সভা শেষে সাংবাদিকদের জানানো হয়, অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদকে ‘দুস্কৃতিকারি’ আখ্যা দেয়ায় মমেক শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও এম-৫৩ ব্যাচের (রোল-১৭৯) আব্দুল্লাহ আল হাসানকে ডিসিপ্লিনারি কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে তিন বছরের জন্য সকল একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বিরত রাখা এবং ছাত্রাবাসে অবস্থান করতে পারবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়।

মানববন্ধন কর্মসুচীতে মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও কুরুচিপুর্ণ বক্তব্য দিয়ে শিক্ষকমন্ডলীকে হেয় প্রতিপন্ন করায় এম-৫৫ ব্যাচের ফায়াদুর রহমান আকাশ (রোল-৬৯) ও বিডিএস-৬ ব্যাচের তামান্না তাসকিনকে (রোল-৪৭) দুই বছরের জন্য এবং শিক্ষকের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন মানববন্ধন কর্মসুচিতে স্বেচ্ছায় অংশগ্রহণ করায় সাত শিক্ষার্থীকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়। এরা হলেন, এম-৫৪ ব্যাচের সুনীতি কুমার দাস (রোল-১৩৯), সানবীম খান (রোল-৬১), মাহিদুল হক (রোল-১০০), তানবিন হাসান (রোল-১১৪), এম-৫৫ ব্যাচের কাশফী তাবরীজ (রোল-১৩২), রাপ্পু কর্মকার (রোল-৩২) এবং সাখাওয়াত হোসেন সিফাত (রোল-১০৪)। এছাড়া শৃঙ্খলা বিরোধী কোনো কার্যক্রমে অংশ গ্রহণ করবে না মর্মে নিজে এবং বৈধ অভিভাবকের মুচলেকা প্রদান সাপেক্ষে সর্তক করা হয় আট শিক্ষার্থীকে। এরা হলেন, এমবিবিএস, এম-৫৮ ব্যাচের মো. মাহমুদুজ্জামান (রোল-০৯), মেহরাব হোসেন (রোল-১১৫), নাজমুস সাকিব (রোল-৯০), মো. রিজভি আল নাহিয়ান হিয়া (রোল-৪৭), মো. জিম রহমান (রোল-৮৪), মো. সাকিব খান শাওন (রোল-৮১), বিডিএস-০৮ ব্যাচের জেরিন তাসনিম (রোল-২৩) এবং বিডিএস-১০ মো. জিহাদুল হক তাঈব (রোল-০৫)। বহিষ্কৃতরা কলেজের ছাত্রবাসে অবস্থান করতে পারবে না বলে সভায় সিদ্বান্ত হয়। এদিকে একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত যথার্থ বলে মনে করে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি অনুপম সাহা বলেন, শাস্তিপ্রাপ্তদের কার্যক্রমের সাথে ছাত্রলীগের কোনো সম্পর্ক নেই।

উল্লেখ, গত ২৩ ফেব্রæয়ারি কলেজ ক্যাম্পাসে একদল শিক্ষার্থী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। তাদের অভিযোগ ছিল কলেজের সার্জারী বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ ফাইনাল পরীক্ষায় পাস করানোর শর্তে জনৈক ছাত্রীকে কুপ্রস্তাব দিয়েছেন।

এ ঘটনায় ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন। পরবর্তীতে শিক্ষকরাও পাল্টা মানববন্ধন কর্মসুচী পালন এবং সংবাদ সম্মেলন করেন। এরপ্রেক্ষিতে কলেজ কর্তৃপক্ষ গাইনি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. তায়্যেবা তানজিন মির্জাকে প্রধান করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়। কমিটির প্রতিবেদন নিয়ে শনিবার সকাল ১১টায় কলেজ একাডেমিক কাউন্সিলের সভা শুরু হয়। বিকেল পাঁচটায় সভা শেষে কলেজ অধ্যক্ষ ডা. চিত্ত রঞ্জণ দেবনাথ সাংবাদিকদের সিদ্ধান্ত জানান। তিনি বলেন ডা. আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন প্রমাণিত হওয়ায় অভিযোগকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

Share this post

scroll to top