ময়মনসিংহ মেডিকেলের মেহেদী হাসানই বিশ্বের বুকে বাংলা ভাষাকে স্থান করে দেয়

Mehedi-hasan-Khan-Avroতখন দেশের ইন্টারনেট পথচলার কয়েকবছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু ওয়েবে বাংলা লেখা বা বাংলায় কোনো ওয়েবসাইট তৈরী করা খুব কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তখন বাংলা লেখা ওয়েবে ছবি কিংবা পিডিএফ করে দেওয়া হত৷ কাউকে ইমেল করলে সেখানে সহজে ইংরেজি লেখা সম্ভব হলেও বাংলা লেখা যেত না।

জুনিয়রের কথা শুনে সিনিয়র এবার যারপরনাই অবাক। বলিস কী?” বলা ছাড়া আর কোনো কিছুই বের হয়নি তার গলা দিয়ে। ওদিকে জুনিয়রের বরাবরের মতোই স্বাভাবিক উত্তর, “হ্যাঁ। ভাষার জন্য টাকা নেবো কেন?”

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ চত্বরে কথোপকথনরত সেদিনের ঐ জুনিয়র ছেলেটির নাম মেহদী হাসান খান। তিনি বাংলা লেখার একটি সফটওয়্যার তৈরি করেছিলেন। সফটওয়্যারটি দিয়ে ইংরেজী অক্ষরে ‘amar sOnar bangla’ টাইপ করলে খুব সহজেই বাংলায় ‘আমার সোনার বাংলা’ লেখা হয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাইয়ের সাথে মেহদী হাসানের সেই সফটওয়্যার নিয়েই কথা হচ্ছিল।

বছর কয়েক আগেও, সেসময় কম্পিউটারে বাংলা লেখা মানে এক ভীষণ যন্ত্রণাসম। এজন্য আবার ইংরেজী টাইপ শেখার মতো বাংলা টাইপ শেখো, তারপর অনুশীলন করো, আস্তে আস্তে আয়ত্বে আনো, তারপর চেষ্টা করে দেখ। আর মেহদী হাসানের এই সফটওয়্যারটি যেন এই দীর্ঘমেয়াদী ও যন্ত্রণাদায়ক ব্যাপারটির এক নিমিষেই ইতি ঘটিয়ে দিলো। এতটা যেন কেউ আশা করেনি! এ যেন মেঘ না চাইতেই জলের স্পর্শ!

বাংলা লেখার এই সফটওয়্যারটিই আজকের বাংলা টাইপিস্টদের নিকট অতি পরিচিত নাম অভ্র, যার জন্য আলাদা কিবোর্ড লাগে না, আলাদা করে টাইপিংও শিখতে হয় না। ব্যবহারকারীরা শুধু ইংরেজি অক্ষরে মনের কথাটি লিখছেন আর তা অভ্রের যাদুতে বাংলায় আসছে। তবে যে অভ্রর সাহায্যে আপনি আজ এত সহজে, এক নিমিষে বাংলা লিখতে পারছেন, সেই অভ্রর জনক মেহদী হাসান কিন্তু তত সহজে কিংবা এক নিমিষে অভ্রকে তৈরি করতে পারেননি। এই সৃষ্টি সাধারণ কোনো সৃষ্টি নয়, তার এই সৃষ্টি ১০টি বছর ধরে রচিত একটি গল্পের নাম।

গল্পের শুরুটা ছিল ঠিক এরকম। মেহদী হাসান ঢাকার নটরডেম কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় কম্পিউটারে ইউনিকোড বাংলা ব্যবহারের বিষয়টি নিয়ে ভাবতো। ঐসময় ২১শে বইমেলায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে চলছিল বাঙালির প্রাণের উৎসব বইমেলা। একাডেমি চত্বর জেগে উঠেছিল বাঙালিয়ানার হরেক রকম সাজে সজ্জিত অসংখ্য বইয়ের স্টলে। একাডেমির বাতাসে তখন নতুন বইয়ের ঘ্রাণ। সেবারের সেই বইমেলায় একটি সংগঠন অংশ নিয়েছিল, নাম বাংলা ইনভেনশ থ্রু ওপেন সোর্স, সংক্ষেপে বায়োস। তবে বায়োস বই বিক্রেতা সংস্থা নয়। তারা বইমেলায় এসেছিল একটি প্রদর্শনী করতে। এই সংগঠনের সদস্যরা মেলায় সম্পূর্ণ বাংলায় লোকালাইজ করা একটি লিনাক্স ডিস্ট্রোর প্রদর্শনী করেছিল। এর নাম ছিল বাংলা লিনাক্স। বাংলা লিনাক্সের বিশেষত্ব ছিল, এর সাহায্যে বাংলায় লেখার পাশাপাশি উইন্ডোর টাইটেল, মেনু, ফাইলের নামকরণ সবই বাংলায় করা যায়। এমন সুন্দর ও উপযোগী একটি সিস্টেম সবারই নজর কেড়েছিল। কেননা বাংলা লেখার জন্য তখন যেসব কিবোর্ড প্রচলিত ছিল, সেসব দিয়ে খুব একটা স্বাচ্ছন্দ্যে বাংলা লেখা যেত না। আর তাদের অপারেটিং সিস্টেমটি সম্পূর্ণ বাংলায় ছিল না। এছাড়া এগুলো দিয়ে বাংলায় শুধু টাইপের কাজই চালানো যেত। তো বাংলা লেখার এমন একটা খটমট সময়ে এমন সহজ একটি সিস্টেম সবার নজর কাড়বে এটাই তো স্বাভাবিক। বায়োসও তাই সবার নজর কেড়েছিল।সেবারের মেলায় বায়োসের ঐ প্রদর্শনীতে দর্শকদের ভিড়ে দাঁড়িয়ে ছিল একজন ক্ষুদে দর্শক। ছেলেটির প্রোগ্রামিংয়ে ছিল ভীষণ আগ্রহ। প্রদর্শনীর অন্যান্য দর্শকদের সাথে তার একটি পার্থক্য ছিল। ঘরে ফেরার সময় আর সবাই যখন মেলার উত্তেজনা নিয়ে ঘরে ফিরেছিল, তখন সে ঘরে ফিরেছিল প্রদর্শনীর বিষয়বস্তুটি স্নায়ুতে বয়ে নিয়ে। সেদিন থেকেই তার মাথায় কাজ করছিল- কীভাবে এমন একটা কিছু বানানো যায়, যা দিয়ে অতি সহজেই সবাই বাংলা লিখতে পারবে। বইমেলার সেই ছোট্ট ছেলেটিই ২০১৪ সালে অভ্র সফটওয়্যারের জনক ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ছাত্র মেহদী হাসান।

যেখানে ছিলাম আমরা, সেদিন মেলা থেকে ঘরে ফিরেই মেহদী বায়োসের লিনাক্স নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি শুরু করেন। কিন্তু তার কম্পিউটারে উইন্ডোজ থাকায় ইচ্ছা সত্ত্বেও বাংলা লিনাক্স দিয়ে কাজ করতে পারছিলেন না তিনি। কিন্তু প্রোগ্রামিংয়ে আসক্ত ছেলেটির মনে এই ব্যাপারটি গভীর এক কৌতূহলের সৃষ্টি করেছিল। আর তাই তিনি বাংলা লিনাক্সের ঐ ফন্টটি ইনস্টল করেন। আর এ সময়ই তার চোখে পড়লো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যা মেহদী হাসানের ইউনিকোড বাংলা সফটওয়্যার তৈরীর অনুপ্রেরনা যোগায়। ভাবনার ফলসরূপ একটি ফনেটিক পদ্ধতিও তৈরী করে ফেলেন, কিন্তু তখনো জানানোর মত কিছু হয়নি। পরবর্তিতে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। আর তখন বাংলা সফটওয়্যার তৈরীর ভুতটা চেপে বসে। পড়ার রুমের দরজা বন্ধ করে কাজে লেগে যান। পড়ার রুম তার কাছে হয়ে উঠে ল্যাব, অন্য এক জগত। এভাবে পড়াশুনা ক্ষতি করে অন্য কোন কাজে মনোনিবেশ করাটা কলেজও ভাল চোখে দেখত না। অবশেষে সফল হন মেহদী হাসান, বাংলাকে বিশ্বায়নের দিকে এক ধাপ এগিয়ে নিতে তৈরী করে ফেলেন ইউনিকোডে বাংলা সফটওয়্যার অভ্র। কে জানত তার পড়ার ল্যাব একদিন হয়ে উঠবে ওমিক্রনল্যাব, তার স্বপ্নের আকাশ বাস্তবে ধরা দিবে অভ্র হয়ে।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে পড়ছিলেন মেধাবী মেহদী হাসান খান। কিন্তু শিক্ষকরা বলেছিলেন, এই ছেলে ডাক্তার হওয়ার অযোগ্য। মেডিকেল কলেজ ছেড়ে দেওয়া উচিত মেহদীর। কারণ ডাক্তারির পড়াশুনা বাদ দিয়ে, দিন-রাত এক করে, খাওয়া-ঘুম ভুলে হস্টেলের ঘরেই একটা ছোট্ট কম্পিউটার সম্বল করে মেহদী তখন লড়ছিলেন অন্য লড়াই। বাংলা ভাষার জন্য লড়াই। ১৮ বছর বয়সের যুবক স্বপ্ন দেখছিলেন বাংলা ভাষাকে সারা পৃথিবীর কাছে খুব সহজে পৌঁছে দেওয়ার। কম্পিউটারে বাংলা লিখতে তাঁর খুব অসুবিধা হয়, এবং সেই পদ্ধতি মেহদীর পছন্দ নয়। তাই তিনি চান এমন একটা সফটওয়্যার, যার সাহায্যে ইংরেজি অক্ষরে টাইপ করেই বাংলা লেখা সম্ভব।

মেহদী হাসান

হালকা পাতলা গঠনের একটা ছেলে। মাথা ভর্তি চুল। চোখের বাইরে ফ্রেমে বাধা তার আরো দুটি চোখ। যে কেউ ছেলেটাকে সহজে আলাদা করতে পারবে। সদা হাসোজ্জল, চঞ্চল ছেলেটি হল মেহদী হাসান খান। ৯ম শ্রেনী থেকেই প্রোগ্রামিং এর প্রতি তার অন্যরকম ভালোবাসা। বিভিন্ন প্রোগ্রামিং এর বই কিনে ঘরে বসেই ছেলেটি প্রোগ্রামিং শিখতো। ২০০১ সালে ভর্তি হয় নটরডেম কলেজে। ২০০৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলা একাডেমির একুশে বইমেলায় গেলেন তিনি। সেখানে দেখলেন বাংলা ইনোভেশন থ্রু ওপেন সোর্স—বায়োসের স্টল। ‘ওই স্টলে প্রথম “খাটি” বাংলা ওয়েবসাইট দেখলেন। ইউনিকোডে বাংলা লেখাও দেখলেন। ইউনিবাংলা নামে ওদের পুরো একটা অপারেটিং সিস্টেমও দেখা হলো। তবে এটা লিনাক্সের জন্য।’ বাসায় এসে ওদের ওপেন টাইপ ফন্ট নামালেন। কিন্তু এ বাংলা লিনাক্সের জন্য। ক্যারেক্টার চার্টে মাউস দিয়ে ক্লিক করে করে বাংলা লিখতে হয়। জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজের জন্য নেই।

এখান থেকেই শুরু নতুন এক মডেল তৈরীর, যেখানে সহজে বাংলা লেখা যাবে। অভ্র শুরুর গল্পটা এখান থেকেই। ততদিনে সে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ছাত্র। মেডিকেলের প্রচন্ড পড়াশোনার চাপ মাথায় নিয়ে সে তার হোষ্টেলের রূমে বসে দরজা বন্ধ করে ঐ ইউনিকোড ভিত্তিক কিবোর্ড বানানোর কাজে লেগে পড়লো। রাত দিন খেটে সে কাজ চালানোর মতো একটা প্রোটোটাইপ দাঁড় করিয়ে ফেললো। এটা করতে গিয়ে তার কত নির্ঘুম রাত কাটেছে ঠিক নেই। মেডিসিন ক্লাবে যাওয়ার বদলে ছেলেটা রুমের দরজা বন্ধ করে প্রোগ্রামিং এর কাজ করছে! অনেকের কাছেই ব্যাপারটা অদ্ভুত বোধ হবে নিশ্চয়।

বন্ধুরা মেহদীকে বলে পাগল, ডাক্তারি পড়তে এসে কেউ সময় নষ্ট করে! তাও আবার নাকি বাংলা লেখার সুবিধার্থে! কিন্তু মেহদী মেহদীই। বাংলা ভাষার জন্য তাঁর দেশের মানুষ প্রাণ দিতে পারেন, আর সেই বাংলাকে লেখার দিক থেকে সহজ করতে ক্যারিয়ার বিসর্জন দিতে পারবেন না! হাল ছাড়েননি মেহদী।

মেহদী তখনকার জনপ্রিয় মাইক্রোসফটের ডটনেট ফ্রেমওয়ার্ক ব্যবহার করে উইন্ডোজ ওএসের জন্য এপ্লিকেশন বানিয়ে ফেললেন। পরে ভারতের একটা বাংলা ফন্ট প্রতিযোগীতায় ইমেইল করে নিজের বানানো প্রোটোটাইপটা পাঠানোর পর তারা জানালো, ’এইটা তো ঘন ঘন ক্র্যাশ করছে’। তারপর আবার রাত জেগে প্রোটোটাইপের বাগ সারানো। তার আগে ডটনেট বাদ দিয়ে ক্লাসিক ভিজুয়াল বেসিকে সবগুলো কোড নতুন করে আবার লেখলেন মেহদী। (যদিও পরবর্তীতে আবারো একেবারে নতুন করে কোড লেখা হয় Delphi/Object Pascal এ। বর্তমানে অভ্র এই ফ্রেমওয়ার্কেই আছে।) ক্র্যাশের ঝামেলা কমলো। তারপর কাজ শুরু অভ্রর অফিসিয়াল সাইট বানানোর। মেহদী তার সাইটে ফোরাম সেটাপ করলো, এটা অভ্রর জীবনে একটা গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন ছিলো। ফোরামে অভ্র’র ইউজাররা ফিডব্যাক দিতো, বাগ রিপোর্ট করতো, প্রশ্নত্তোর চলতো। অভ্রর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে ওয়েবসাইটের নাম–ঠিকানা হলো www.omicronlab.com। মুহম্মদ জাফর ইকবালের ওমিক্রনিক রূপান্তর বই পড়েই তখন মেহদীর মুগ্ধতা। ওখান থেকেই আসলো ওমিক্রন। আর ল্যাব শব্দ যুক্ত হল একটু সিরিয়াস ভাব আনতে।

মেহদীর উদ্দেশ্য সফল হল। সে সময়ের জনপ্রিয় প্রযুক্তি বিষয়ক মাসিক ম্যাগাজিন “কম্পিউটার টুমোরো” একদিন ফিচার প্রতিবেদন করলো মেহদীর অভ্রকে নিয়ে। শুধু তাই না, সেই ম্যাগাজিনের সাথে অভ্রের সিডির একটা করে কপি ফ্রি দেয়া হয়েছিলো। “সে মাসে নিউ মার্কেটের দোকানে দোকানে সিডিসহ ম্যাগাজিন, কি যে দারুন অনুভূতি!”

২০০৭ সালে ‘অভ্র কীবোর্ড পোর্টেবল এডিশন’ বিনামূল্যে ব্যবহারের জন্যে উন্মুক্ত করা হয়। অভ্রের সোর্স কোড উন্মুক্ত, অর্থাৎ যে কেউ চাইলেই গিটহাব রিপোজেটরি থেকে এর উন্নয়নে অংশগ্রহন করতে পারবেন। উল্লেখ্য, ভার্সন ৫ এর পর থেকে অভ্রকে ফ্রিওয়্যার থেকে ওপেনসোর্সে রূপান্তর করা হয়। এবং এটি ’মজিলা পাবলিক লাইসেন্স’এর অধীনে লাইসেন্সকৃত।

অভ্র সফটপিডিয়াতে ১০০% স্পাইওয়্যার/অ্যাডওয়্যার/ভাইরাস মুক্ত সফটওয়্যার হিসেবে স্বীকৃত। মাইক্রোসফটের অনলাইন সংগ্রহশালায় ইন্ডিক ভাষাসমূহের সমাধানের তালিকায় অভ্র কীবোর্ডকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির কাজে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন অভ্র ব্যবহার করেছে। অভ্রকে বাংলা কীবোর্ড রিসোর্স হিসেবে ইউনিকোড সংস্থার ওয়েব সাইটে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস বা বেসিস বাংলা তথ্য প্রযুক্তিতে বিশেষ অবদানের জন্য অভ্রটিমকে-কে ২০১১ ‘বিশেষ অবদান পুরষ্কার’ (Special Contribution Award) প্রদান করে।
অভ্রের স্বীকৃতিঃ

মাইক্রসফটের অনলাইন সংগ্রহশালায় ইন্ডিক ভাষাসমূহের সমাধানের তালিকায় অভ্র কী-বোর্ডকে অন্তর্ভুক্ত করা।
জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির কাজে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন অভ্র ব্যবহার করে।
অভ্রকে বাংলা কীবোর্ড রিসোর্স হিসেবে ইউনিকোড সংস্থার ওয়েব সাইটে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস বা বেসিস বাংলা তথ্য প্রযুক্তিতে বিশেষ অবদানের জন্য অভ্রটিমকে-কে ২০১১ ‘বিশেষ অবদান পুরষ্কার’ (Special Contribution Award) প্রদান করে।

এছাড়াও, মেহদী ব্যক্তিগতভাবে ২০১৬ সালের সেপ্টেস্বরে Top Ten Outstanding Young Persons পুরস্কার লাভ করেন।

আজ কিন্তু তিনি ডাঃ মেহদী হাসান খান। হাজার তাচ্ছিল্য সত্ত্বেও তিনি ‘অভ্র’ আবিষ্কারের সঙ্গে সঙ্গে কৃতিত্বের সঙ্গে পাশ করেছেন ডাক্তারিও। ২০১০ সালে ইন্টার্ন করেন, বিয়েও করেন। সহপাঠী সুমাইয়া নাজমুনকে।স্ত্রীর কাছ থেকে মতামত নিয়ে ডাক্তারি ছেড়ে প্রোগ্রামিং নিয়েই কাজ চালিয়ে যাওয়া।এখন প্রোগ্রামিং নিয়েই মেহদীর যত ব্যস্ততা। অবসর সময় কাটে ছেলে অর্ক হাসান খানের সাথে।
অভ্র কিবোর্ড এক নজরেঃ-

মূল উদ্ভাবক:মেহদী হাসান খান
উন্নয়নকারী: ওমিক্রনল্যাব প্রাথমিক সংস্করণ [২৬ মার্চ ২০০৩]
স্থায়ী মুক্তি: ৫.৬.০ / ২৭ আগস্ট ২০১৯ [৫ মাস আগে]
লেখা হয়েছে: সি++, ডেলফি
অপারেটিং সিস্টেম:উইন্ডোজ এক্স পি, ভিস্তা, ৭, ৮, ৮.১,১০, লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন, ম্যাক ওএস

প্লাটফর্ম:
উইন্ডোজ (অভ্র)
লিনাক্স (ibus-avro)
ম্যাক ওএস (iAvro)
অ্যানড্রয়েড (রিদ্মিক)
আইওএস (রিদ্মিক)

ধরণ: কী-বোর্ড সফটওয়্যার
লাইসেন্স: মুক্ত সোর্স, মোজিলা পাবলিক লাইসেন্স
ওয়েবসাইট: www.omicronlab.com

১৯৮৬ সালের ২৩ জুলাই ঢাকায় জন্ম নেওয়া মেহদী। যে বাংলাকে নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখেছেন। বাংলাকে দিয়েছেন নতুন অন্যন্য এক রূপ। কিন্তু সে এটার বাণিজ্যিক কোনো লাভ আসা করেনি। শখের বসে তৈরি করা অভ্র এখন ব্যবহার হয় বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের মত কার্যালয়ে।

যার কারণে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রকল্পে নির্বাচন কমিশনের ৫ কোটি টাকার মত বেচে যায়। আজ ভারত ও বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সরকারি দপ্তরেও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে ‘অভ্র কিপ্যাড’। লেখা হচ্ছে সরকারি ফাইল থেকে পরিচয়পত্র। মেহদীর এই আবিষ্কার বাঁচিয়ে দিয়েছে দুই দেশের কোটি-কোটি টাকা।

মেহদী হাসান এ সফটওয়্যারটি বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা কামাতে পারতেন, কিন্তু তিনি তা না করে তার এত দিনের ধ্যান জ্ঞান শ্রম সময় ব্যয় করা সফটওয়ার উন্মুক্ত করে দিয়েছেন ডিজিটাল জগতের সকল বাংলা ভাষাভাষীদের জন্য। তিনি একা এতটা ত্যাগ করলেন আর আমরা কি পারিনা তাকে সামান্য সম্মান জানাতে? দীর্ঘ দিন যাবৎ তিনি রয়ে গিয়েছেন প্রচারের অন্তরালে। রাষ্ট্রের নিকট আমাদের দাবী এই ডিজিটাল ভাষার সৈনিককে সম্মানিত করে দেশের তরুন প্রজন্মকে উদ্ভোদ্ধ করা হোক। এই ভাষার মাসে বিশ্বের সকল বাংলা ভাষাভাষী জনগনের পক্ষ থেকে ডাঃ মেহদী হাসানকে জানাই স্যালুট, আর যে মা তাকে গর্ভে ধারন করেছে তাকে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।

Share this post

scroll to top