ময়মনসিংহ জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র

Zilla-Parisadময়মনসিংহ জেলা পরিষদ সদস্যদের মন মতো অর্থ বরাদ্ধ না দেয়ায় এবার ষড়যন্ত্রের শিকার হলেন জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন নাসরিন। এনিয়ে ময়মনসিংহের সর্বমহলে চলছে নানা রকম গুঞ্জন। অপরদিকে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা বা পিপিআর বরাদ্ধের বাইরে অর্থ বরাদ্ধ না দেয়ায় বিভিন্ন অভিযোগ তুলে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন জেলা পরিষদের ১৮ জন সদস্য।

জেলা পরিষদের ১৮ জন সদস্যের লিখিত অভিযোগে জানাযায়, করোনা মোকাবেলায় হতদরিদ্রদের জন্য জেলা পরিষদের বরাদ্ধের অর্থ দিয়ে নিজের মনগড়া ক্রয় কমিটি করে কাউকে না জানিয়ে নিম্নমানের স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী ক্রয় করে সরবরাহ করেছেন জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন নাসরিন। গত শনিবার দরিদ্রদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ বিষয়ে এক জরুরি সভায় সদস্যরা প্রত্যেক এলাকার জন্য ৫’শ প্যাকেট করে খাদ্য সামগ্রী বিতরণের জন্য অনুরোধ জানান। এনিয়ে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইউসুফ খানের উপস্থিতিতে আবেগ-আপ্লুত হয়ে হয়ে সভাস্থল ত্যাগ করে চলে যান। যা ঔদ্ধত্বপূর্ণ আচরণ বলে মনে করেন এই ১৮ সদস্য। পরে রাতেই সাংবাদ সম্মেলন করে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন নাসরিনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর একটি অভিযোপত্র পেরণ করেন।

তবে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে আসল তথ্য। বর্তমান সময়ের বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসকে কেন্দ্র করে এই মুহূর্তে জেলা পরিষদের এই প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে বদলি বা প্রত্যাহার করাই হচ্ছে এসব সদস্যদের মূল লক্ষ্য। কারণ, এই মুহূর্তে তাকে বদলি বা প্রত্যাহার করা হলে নতুন কর্মকর্তাকে নতুনত্ব অবস্থায় একটু হিমশিম পেতে হবে। নতুন কর্মকর্তাকে বসিয়ে করোনাভাইরাস মহামারীকে ইস্যু করে বিভিন্ন ধরণের বরাদ্ধ বাড়ানোই হচ্ছে এই ষড়যন্ত্রের অন্যতম কারণ। অপরদিকে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন নাসরিন যোগদানের ৬ মাস পর থেকেই তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরণের ষড়যন্ত্র শুরু হয়। একজন সরকারি কর্মকর্তাকে তার নীতির বাইরে কাজ করাতে একের পর এক ইস্যু সৃষ্টি করে কতিপয় সদস্যরা। কিন্তু বর্তমান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইউসুফ খান পাঠান দুরদর্শী হওয়ায় এচক্রের অনেক সদস্যের ষড়যন্ত্র ইতোমধ্যে ভেস্তে গেছে।

জানাযায়, করোনাভাইরাস রোধে গত শনিবার (৪ এপ্রিল) জেলা পরিষদে জরুরি সভার আহবান করা হয়। এতে জেলা পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাসহ উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইউসুফ খান পাঠান ও জেলা পরিষদের সদস্যরা। সভায় করোনাভাইরাসে দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে সংস্থাপন খাত থেকে ২০ লাখ টাকা খরচ করার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু অভিযোগকারী সদস্যরা নিজেদের হাতে সেই টাকা ভাগ করে দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে। কর্মকর্তা তার নীতি ও মন্ত্রণালয়ের পিপিআর এর বাইরে যাবেননা বলে সবাইকে জানান। কারণ হিসেবে তিনি সভায় জানান, এই টাকা ভাগ করে দিলে সদস্যদের যেহেতু স্থানীয় কোন অফিস নাই তাই তারা অফিসিয়াল হিসাব সংরক্ষণ করতে পারবে না। করোনা মহামারি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি নির্দেশের কারণেই হিসাব নিকাশে শতভাগ স্বচ্চতা নিশ্চিত করতে ক্রয় ও বিতরণ কমিটি ঘটন করে বিতরণের কথা বলা হয়। কিন্তু তা মানতে নারাজ হয় অভিযোগকারী ১৮ সদস্য। তারা ইতোপূর্বে করোনভাইরাস রোধে বিতরণকৃত সাবান ও মাস্ক বিতরণের অনিয়ম ও দুর্নীতির কথা তখন উপস্থাপন করেন। উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টি করে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন নাসরিনকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও অশালীন কথা বলেন। সভায় উপস্থিত এক ইঞ্জিনিয়ারকে মারধোর করতেও যান কতিপয় সদস্যরা। সভায় পরিস্থিতির অবনতি হলে বাধ্য হয়েই সভাস্থল ত্যাগ করেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন নাসরিনসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।

এব্যাপারে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন নাসরিন ময়মনসিংহ লাইভকে বলেন, “আমি যোগদানের পর থেকেই পরিষদের অনেক সদস্য বিভিন্নভাবে ফায়দা লুটতে চেষ্টা করছে। কিন্তু চেয়ারম্যান মহোদয়ের হস্তক্ষেপে কেউ আর এগুতে পারেনি। এসব সদস্যরা চেয়ারম্যান মহোদয়কে ‍নিয়েও বিভিন্ন সময় ষড়যন্ত্র করেছে। আমার কাছে এসে চেয়ারম্যান মহোদয়ের বিপক্ষে কথা বলেছে। কিন্তু আমি এসব পাত্তা না দেয়ায় তারাই আমার বিরুদ্ধে মনগড়া অভিযোগ তুলেন। তারা ১৮ জন মিলে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব স্যার বরাবর যে অভিযোগ দিয়েছেন তা যে বানোয়াট তা দেখলে সবাই বুঝবে। তারা মাস্ক ও সাবান বিতরণে যে অনিয়মের কথা বলেছেন তা ডাহা মিথ্যা। অথচ, এসব কেনাকাটা ও বিতরণের সাথে জেলা পরিষদের কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত ছিলাম না। বরংচ, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগকারীদের মধ্যে মমতাজ উদ্দিন মন্তা (প্যানেল চেয়ারম্যান-১) মাস্ক ও সাবান ক্রয় এবং বিতরণে দুর্নীতি করেছেন। করোনা ভাইরাস রোধে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মহোদয় কিনে বিতরন করেছেন মানসম্পন্ন স্যাভলন সাবান আর মমতাজ উদ্দিন মন্তা কিনেছেন ৯০০ টি তিব্বত বল সাবান। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মহোদয় কিনেছেন মানসম্পন্ন মাস্ক অথচ মমতাজ উদ্দিন মন্তা দর্জি দিয়ে সুতি কাপড়ের মাস্ক (ওয়ান টাইম) তৈরি করে বিতরণ করেছেন। যা একদমই স্বাস্থ্যসম্মত না। জেলা পরিষদের সদস্যরা আমার কাছ থেকে নগদ টাকা চেয়েছেন। আমি মন্ত্রণালয়ের পিপিআর এর বাইরে গিয়ে নিয়ম বহির্ভূতভাবে টাকা বিতরণ করব সেটার জন্য সরকার আমাকে এখানে দায়িত্ব দেয়নি। আমি সরকারের নির্দেশনায় করোনা পরিস্থিতিতে একদম স্বচ্ছতার ভিত্তিতে আমার দায়িত্ব পালন করতে চাই। সেজন্য সবার সহযোগীতা চাই।”

এব্যাপারে ময়মনসিংহ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইউসুফ খান পাঠান ময়মনসিংহ লাইভকে বলেন, “আমি আমার স্থান থেকে বলতে চাই, দেশে সৎ অফিসারের দরকার। আমি মনে করি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন নাসরিন একজন সৎ ও যোগ্যবান অফিসার। তিনি এমনি এক অফিসার একটু জানুন, একদিন তিনি ঢাকায় তার পরিবারের কাছে যাওয়ার পথে তাকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করি কোথায় আছেন। তখন তিনি বলেন আমি রিক্সায় আছি, মাসকান্দা বাসস্ট্যান্ডে যাচ্ছি। তখন তাকে আমি সরকারি গাড়ি ব্যবহার করতে বলি। তখন সে আমাকে বলে, আমি এখন ব্যক্তিগত কাজে ঢাকা যাচ্ছি। সরকারি গাড়ি ব্যবহার করাটা ঠিক হবেনা।”

তিনি আরো বলেন, এছাড়া তিনি যোগদানের পর থেকেই আমার সকল প্রজেক্টের ফাইল দেখেশুনে সাইন করেন। কমপক্ষে ৫০০ প্রজেক্ট রয়েছে যেগুলোর প্রত্যেকটি নিজে সত্যতা যাচাই করেন। আগে যা হতো তা নয়। তবে তিনি একটু বেশি সৎ। গত শনিবার যে ঘটনাটি ঘটেছে ওনার সাথে তা ওইসব সদস্যরা করতে পারেনা। একজন অফিসারকে সৎ থাকতে উৎসাহ যোগানো আমাদের দরকার। নিজেদের স্বার্থের জন্য কারো উপর মিথ্যারোপ করা ঠিক নয়। ইতোপূর্বে এই সিন্ডিকেট অনেক ষড়যন্ত্র করেছে। মুুজববর্ষ পালন নিয়ে যা হওয়ার তো হয়েছেই। আর গত শনিবার যে বরাদ্ধ নিয়ে ঘটনাটি ঘটেছে, তা মূলত সদস্যরা করতে পারেনা। তাও করোনা রোধে সদস্যদের নিজ হাতে নগদ টাকা দেয়া কতোটুকু ঠিক তা আপনারাই বলেন।

Share this post

scroll to top