ময়মনসিংহ জেলার জন্মদিন আজ

Mymensingh-Birthdayইতিহাস ঐতিহ্য সমৃদ্ধ এক জনপদ ময়মনসিংহ। এক সময়কার উপমহাদেশের বৃহত্তর এ জেলাটি আজ বিভাগে রূপান্তরিত হয়েছে। ঐতিহাসিক এই জেলার আজ ২৩৪তম জন্মদিন।

শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের সূতিকাগার বৃহত্তর ময়মনসিংহ। উত্তরে গারো পাহাড় ও ভারতের মেঘালয় রাজ্য, দক্ষিণে গাজীপুর জেলা, পূর্বে নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ জেলা এবং পশ্চিমে শেরপুর, জামালপুর ও টাঙ্গাইল জেলা বেষ্টিত ময়মনসিংহ জেলার ভৌগোলিক পরিবেশ বিচিত্র হওয়ায় বলা হয়-‘হাওর, জঙ্গল, মইষের শিং-এ নিয়ে ময়মনসিং’। ৪,৭৮৭ বর্গমাইলের রত্নগর্ভা এ জেলার প্রাণবন্ত মানুষের পরিচয় পাওয়া যায় এর নামের মাঝেই- My-men-sing অর্থাৎ আমার লোকেরা গান গায়।

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনামলে রাজস্ব আদায়, প্রশাসনিক সুবিধা বৃদ্ধি এবং বিশেষ করে স্থানীয় বিদ্রোহ দমনের জন্য ১৭৮৭ সালের পহেলা মে ময়মনসিংহকে জেলা হিসেবে ঘোষণা করে বৃটিশ সরকার।

ময়মনসিংহ জেলার নামকরণের ইতিহাস রয়েছে। মোঘল আমলে মোমেনশাহ নামে একজন সাধক ছিলেন, তার নামেই মধ্যযুগে অঞ্চলটির নাম হয় মোমেনশাহী। ষোড়শ শতাব্দীতে বাংলার স্বাধীন সুলতান সৈয়দ আলাউদ্দিন হোসেন শাহ তার পুত্র সৈয়দ নাসির উদ্দিন নসরত শাহ’র জন্য এ অঞ্চলে একটি নতুন রাজ্য গঠন করেছিলেন, সেই থেকেই নসরতশাহী বা নাসিরাবাদ নামের সৃষ্টি।

নাসিরাবাদ নাম পরিবর্তন হয়ে ময়মনসিংহ হয় একটি ভুলের কারণে। বিশ টিন কেরোসিন বুক করা হয়েছিল বর্জনলাল এন্ড কোম্পানির পক্ষ থেকে নাসিরাবাদ রেল স্টেশনে। এই মাল চলে যায় রাজপুতনার নাসিরাবাদ রেল স্টেশনে। এ নিয়ে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। পরবর্তীতে আরো কিছু বিভ্রান্তি ঘটায় রেলওয়ে স্টেশনের নাম পরিবর্তন করে ময়মনসিংহ রাখা হয়। সেই থেকে নাসিরাবাদের পরিবর্তে ময়মনসিংহ ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

ময়মনসিংহ জেলা ভেঙ্গে পরবর্তীতে ১৮৪৫ সালে জামালপুর, ১৮৬০ সালে কিশোরগঞ্জ, ১৮৬৯ সালে টাঙ্গাইল ও ১৮৮২ সালে নেত্রকোনা মহকুমা গঠন করা হয়। পরে সবকটি মহকুমা জেলায় উন্নীত হয়েছে। ১৮৮৬ সালে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথ ও ১৮৮৭ সালে জেলা বোর্ড গঠন করা হয়। এই ভাবে ময়মনসিংহ জেলা যা কিনা ব্রিটিশ আমলে অবিভক্ত ভারতবর্ষের সর্ববৃহৎ জেলা ছিল তার আকার ক্রমাগত সংকুচিত হয়ে আসে।

বর্তমানে ময়মনসিংহ জেলার উত্তরে ভারতের মেঘালয় রাজ্য, দক্ষিণে গাজীপুর জেলা, পূর্বে নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ জেলা এবং পশ্চিমে শেরপুর, জামালপুর ও টাঙ্গাইল জেলা অবস্থিত।

সব মহকুমাকে জেলায় উন্নীত করলেও এই অঞ্চল এখনো বৃহত্তর ময়মনসিংহ নামে পরিচিত। ২০১৫ সালে ঢাকা বিভাগ ভেঙ্গে ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর ও নেত্রকোনা নিয়ে ময়মনসিংহ বিভাগ গঠিত হয়। বৃহত্তর ময়মনসিংহের অংশ হলেও কিশোরগঞ্জ ও টাঙ্গাইল জেলা ময়মনসিংহ বিভাগের অন্তর্ভুক্ত হয়নি।

প্রাচীন এ জনপদের রয়েছে নিজস্ব ইতিহাস ঐতিহ্য গৌরিপুরের রাজবাড়ি, মুক্তাগাছার রাজবাড়ী, ময়মনসিংহ শহরের শশীলজ, রাজ রাজেস্বরী ওয়াটার ওয়ার্কস, আঠারোবাড়ী জমিদার বাড়ি তারই প্রমাণ এখনো বহন করছে।

স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে শুরু করে, ৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ৬৯ এর গণঅভ্যুথান, ৯০-দশকে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন সহ বাংলাদেশের সকল ক্ষেত্রেই ময়মনসিংহ ছিল অগ্রগণ্য তালিকায়।

ময়মনসিংহে দুটি বিশ্ববিদ্যালয় (বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়), দুটি মেডিকেল কলেজ (ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ও কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ, বাংলাদেশ ), একটি প্রকৌশল কলেজ (ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ), একটি ক্যাডেট কলেজ (ময়মনসিংহ গার্লস ক্যাডেট কলেজ), একটি শারীরিক শিক্ষা কলেজ(ময়মনসিংহ সরকারী শারীরিক শিক্ষা কলেজ ) এবং বিখ্যাত ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আনন্দমোহন কলেজ ছাড়াও আরো অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

এ জেলায় জন্মগ্রহণ করেছেন অনেক মনীষী, রাজনৈতিক, বিখ্যাত সাহিত্যিক। যারা দেশের ভাণ্ডারকে করে গেছেন আলোকিত।

Share this post

scroll to top