ময়মনসিংহে হাজারো শিক্ষার্থী মেস ও বাসাভাড়া নিয়ে বিপাকে

এক নজরে ময়মনসিংহ শহরময়মনসিংহকে বলা হয় শিক্ষা নগরী। দেশের সেরা বিদ্যাপীটগুলোর অনেকগুলোই ময়মনসিংহে অবস্থিত। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার শিক্ষার্থীর একমাত্র আবাসস্থল ময়মনসিংহের আবাসিক বাসা ও মেসগুলোতে। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লক্ষাধিক শিক্ষার্থী লেখাপড়া করেন। তবে আবাসিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কম থাকায় শিক্ষার্থীরা ভাড়া বাসা কিংবা মেসে থাকেন। ময়মনসিংহ নগরীতে রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ত্রিশালে রয়েছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ, কমিউনিটি বেজড মেডিক্যাল কলেজ, আনন্দ মোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজ, মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ, নাসিরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, ময়মনসিংহ গার্লস ক্যাডেট কলেজ, ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, ময়মনসিংহ পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ, মোমেনশাহী, নটরডেম কলেজ ময়মনসিংহ, আলমগীর মনসুর মেমোরিয়াল (মিন্টু) কলেজ, ময়মনসিংহ মহাবিদ্যালয়সহ উচ্চ মাধ্যমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের বড় অংশ মেস বা ভাড়া বাসায় থাকে। করোনার কারণে সংকটময় পরিস্থিতিতে ভাড়া পরিশোধ নিয়ে তাঁদের বিপাকে পড়ার কথা জানা গেছে। শিক্ষার্থীরা কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একত্র হয়ে ভাড়া মওকুফের বিষয়ে মতামত ব্যক্ত করেছেন। জেলা প্রশাসনের দৃষ্টিগোচর করে বিভিন্নভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার অব্যাহত রেখেছেন। শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই নয়, বিভাগীয় এশহরে হাজার হাজার কর্মজীবি মানুষও ভাড়া বাসায় থাকেন যাদের অনেকের উপার্জন বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি এসব মানুষ রয়েছেন চরম আর্থিক সংকটে। ইতোমধ্যে শহরের কয়েকজন বাসার মালিক মানবিক দিক বিবেচনা করে নিজ উদ্যোগেই বাসা ভাড়া মওকুফ করেছেন। তবে স্থানীয়ভাবে বাসার মালিকদের এব্যাপারে উদাসীনতা ও মানবিকতার কমতিই বেশি লক্ষনীয়। এজন্য দরকার সিটি কর্পোরেশনসহ বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ। সরকারের পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষকে সহযোগীতা করা হলেও এসব নিম্ন মন মানসিকতার লোকদের মধ্যে হীনমন্নতার কারণে উৎকন্ঠায় দিনাতিপাত করছে ময়মনসিংহের সাধারণ শিক্ষার্থীসহ কর্মহীন হয়েপড়া হাজারো মানুষ। এনিয়ে শহরে চলছে কানাঘোষা। ময়মনসিংহে বাসা ভাড়ার বিষয়টি এখন টক অব দ্যা টাউন। মেস ও বাসা ভাড়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত না আসায় স্থানীয় রাজনৈতিক ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনার সৃষ্টি হচ্ছে সর্বত্র।

শহরের ভাড়া বাসায় থাকেন এমন শিক্ষার্থীরা বলছেন, কেউ কেউ মার্চ মাসের ভাড়া পরিশোধ করা সম্ভব হলেও এপ্রিলের ভাড়া দিতে পারেননি। কারণ ময়মনসিংহ নগরীতে অনেকে টিউশনি করে চলতেন। এখন সে আয় বন্ধ। কেউবা পরিবার থেকে টাকা এনে শিক্ষা কার্যক্রম চালান। সাধারণ ছুটির মধ্যে সব কিছু বন্ধ থাকায় ভাড়া পরিশোধ করতে পারছেন না তাঁরা। এ অবস্থায় করোনার সময়কালে ভাড়া মওকুফের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হওয়ায় সবাই গ্রামের বাড়িতে ফিরে গেছেন। বড় অংশের টিউশন বন্ধ থাকায় নিজেদের চলতেই কষ্ট হচ্ছে। এ অবস্থায় শিক্ষার্থী ও কর্মহীনদের মেস ও বাসা ভাড়া মওকুফের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ।

ময়মনসিংহের ত্রিশালে অবস্থিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুসাব্বির হোসেন জানান, করোনার কারণে দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে কোনো টিউশনি করতে না পেরে ভাড়া দেওয়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তিনি। তাঁর মতো আরো কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ভাড়া পরিশোধ নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন।

অনেকেই বাসা ভাড়া মওকুফের বিরুদ্ধে ভিন্নমত পোষণ করে ব্যাংকের লোনের কথা সামনে নিয়ে আসছেন। সেক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনের উচিত জাতীয়ভাবে করোনা মোকাবেলায় এসব ব্যাংকের লোন সাময়িক বন্ধ রাখা। কর্মহীন ও অসহায়দের পাশে থেকে  মহামারির এই দু:সময়ে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের পাশে থেকে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যক্তিরা উদার মনমানসিকতার পরিচয় দিবেন এটাই আশা করছে ময়মনসিংহে বাসা বা মেস ভাড়া নিয়ে থাকেন এমন হাজারো শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ।

Share this post

scroll to top