ময়মনসিংহে সাধারণ পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতাদের রোষানলে বিআরটিসি বাস

মো. আব্দুল কাইয়ুম : জনগণের চাহিদা অনুযায়ী প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন যুগান্তরকারী পদক্ষেপ নিচ্ছেন ঠিক তখনি যোগাযোগ ব্যবস্থায় সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে ময়মনসিংহের পরিবহন মালিক শ্রমিক নেতারা। ময়মনসিংহে বিআরটিসি বাস সার্ভিস জনগণের জন্য উপকার বয়ে আনলেও জেলার পরিবহণ শ্রমিক নেতাদের কারণেই এখন যাত্রীদের মাঝে একধরণের আতঙ্ক দেখা যাচ্ছে। এদিকে বিআরটিসি বাসে যাত্রী চলাচলে অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা জারি করায় শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট থেকে যাত্রীরা সাধারণ পরিবহণ মালিক-শ্রমিক নেতাদের বাধায় বিআরটিসি বাসে যাতায়াত করতে পারছে না। ফলে সরকারের সফল উদ্যোগটি ভেস্তে যাচ্ছে শুধুমাত্র শ্রমিক মালিকদের চাপে। শুধু তাই নয়, কাউন্টার থেকে যেমন কোন যাত্রী তুলতে পারছে না তেমনি পরবর্তী স্টপেজ পর্যন্ত মালিক শ্রমিক নেতাদের ধাওয়ার কারণে দৌড়ের উপর থাকতে হচ্ছে বিআরটিসি বাসগুলোকে। তাই ময়মনসিংহের সচেতন মহল মনে করছেন, এক্ষেত্রে সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।

জানা যায়, বিআরটিসি ময়মনসিংহ বাস ডিপোতে বাস রয়েছে মোট ৪৭ টি। তার মধ্যে দ্বিতল বাস হচ্ছে ২৯ টি, সিঙ্গেল এসি হচ্ছে ৬ টি, সিঙ্গেল নন এসি হচ্ছে ৮টি, আর ৮টি বাস জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাফ পরিবহণে যুক্ত। এদিকে গত কয়েক মাস ধরে ময়মনসিংহের বিভিন্ন উপজেলা ও পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে ময়মনসিংহ শহর থেকে বিআরটিসির বাস সার্ভিস চালু হয়েছে। যার মধ্যে ময়মনসিংহ থেকে মুক্তাগাছা উপজেলা পর্যন্ত ১০টি, ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ পর্যন্ত ৮টি এবং ময়মনসিংহ থেকে ফুলপুর পর্যন্ত ১০টি বিআরটিসি বাস নতুন যুক্ত হয়েছে। সর্বশেষ ময়মনসিংহ থেকে নেত্রকোনা সড়কে আরও ১০টি বিআরটিসি বাস চালু হয়। বাসের সার্ভিসের মান সন্তোষজনক হওয়ায় বিআরটিসি বাসে যাত্রীদের চাপ বাড়ে। কিন্তু এই ভালো উদ্যোগকে ভালোভাবে মেনে নেননি ময়মনসিংহ ও পাশ্ববর্তী কয়েক জেলার পরিবহণ মালিক ও শ্রমিক নেতারা। তাদের মতে, বিআরটিসি বাস চালু হওয়ায় সকল যাত্রী বিআরটিসি মুখী হচ্ছে। এতে করে সাধারণ পরিবহণে যাত্রী কমে যাচ্ছে। যদিও সাধারণ যাত্রীদের অভিযোগ, বিআরটিসি বাদে আন্তজেলার অন্যান্য বাস সার্ভিসের মান খুবই নাজুক। ওইসব সাধারণ পরিবহণে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়সহ যাত্রী হয়রানি হওয়ায় সাধারণ যাত্রীদের কাছে বিআরটিসেই প্রথম পছন্দ।

শহরের পাটগুদাম ব্রীজ মোড়ের বিআরটিসি বাস সার্ভিসের অস্থায়ী কাউন্টারে গিয়ে দেখা যায়, “অস্থায়ী কাউন্টার থেকে কোন ধরণের টিকিট বিক্রি বা যাত্রী উঠাতে পারছে না বিআরটিসির কর্মচারীরা। সেই সাথে কাউন্টার থেকে বাস ছাড়ার পরও পরবর্তী স্টপেজ পর্যন্ত পরিবহণ মালিক ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের প্রতিটি বাসের পিছু পিছু ধাওয়ার কারণে যাত্রী উঠতে পারছে না বিআরটিসি বাসগুলোতে। কেন টিকিট কাটছেন না বা যাত্রী তুলছেন না এমন প্রশ্ন করলে বিআরটিসি কাউন্টারের কর্মচারীরা জানান, আমরা যাত্রী তুলতে চাই। কিন্তু তারা দিচ্ছে না। আপনাদের বেশি জানার থাকলে ওই যে নেতাদের সাথে কথা বলেন।” পরে- পাশেই শ্রমিক ইউনিয়নের এক নেতাসহ আরো কিছু উশৃঙ্খল লোকদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।

এ ব্যাপারে বিআরটিসি ময়মনসিংহ বাস ডিপোর ম্যানেজার মো. লুৎফর আজাদ ময়মনসিংহ লাইভকে জানান, ময়মনসিংহে বিআরটিসি বাস সার্ভিস চালু হওয়ায় মানুষের মাঝে এক ধরণের আনন্দ লক্ষ করা গেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে পরিবহন মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা ময়মনসিংহের বিআরটিসি বাস বন্ধের জন্য যে অবস্থান নিয়েছেন তা বিআরটিসি বাস সার্ভিসের মান নষ্টের জন্য যথেষ্ট। আমরা চাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যোগাযোগ খাতের উন্নয়ন মানুষের দোরগোড়ায় পৌছে দিতে, জনগণের চাহিদা অনুযায়ী সেবা ধরে রাখতে ।

এদিকে বিআরটিসির বাসগুলো ময়মনসিংহ নগরের পাটগুদাম আন্তজেলা বাস টার্মিনাল হয়ে চলাচল করে। ৯ ডিসেম্বর প্রথমে ওই এলাকায় গিয়ে বিআরটিসির বাস চলাচলে বাধা দেন সাধারণ গণপরিবহনের শ্রমিকেরা। পরে এর সাথে যুক্ত হন ময়মনসিংহ জেলা মোটর শ্রমিক সমিতি। সবমিলিয়ে পরিবহণ মালিক ও মোটর শ্রমিক নেতাদের বাাঁধার মুখে পরে বিআরটিসি বাস সার্ভিস। পরিবহণ মালিক ও মোটর শ্রমিক নেতারা বিআরটিসি বাস বন্ধের জন্য আন্দোলনও করে। এমনকি পরিবহন ধর্মঘটও পালন করেন। আর এতে করে করে ময়মনসিংহ থেকে ফুলপুর, হালুয়াঘাট, ঈশ্বরগঞ্জ, নান্দাইলসহ বিভিন্ন উপজেলা ও পার্শ্ববর্তী শেরপুর, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ এবং ঢাকাগামী যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। যাত্রীরা পাটগুদাম আন্তজেলা বাস টার্মিনাল ও মাসকান্দা টার্মিনালে গিয়ে বাস না পেয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশা আর ইজিবাইকে করে গন্তব্যে গেছে।

অপরদিকে নেত্রকোনা-ময়মনসিংহ পথে চালুর মাত্র চার ঘণ্টার মাথায় বিআরটিসির বাস বন্ধের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ। তাদের দাবি শীঘ্রই বিআরটিসির সকল বাস নির্বিঘ্নে চলাচলের উপযোগী করা হোক। তা না করা হলে, ময়মনসিংহের সাধারণ পরিবহন মালিক ও মোটর শ্রমিক নেতাদের কাছে সাধারণ যাত্রীরা জিম্মি হবে বলে মনে করছেন ময়মনসিংহের সচেতন মহল। এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সর্বত্র আলোচনা ও সমালোচনা হচ্ছে। এক্ষেত্রে সরকারের দায়িত্বশীল মহল জরুরি ভিত্তিতে সাধারণ জণগণের হয়ে যুগান্তরকারী ব্যবস্থা নিবেন এই আশা ময়মনসিংহবাসীর।

Share this post

scroll to top