ময়মনসিংহে ব্যক্তি মালিকানা জমি দিয়ে সরকারি রাস্তা

Dubaoura Landময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় ব্যক্তি মালিকানা জমি দিয়ে সরকারি রাস্তা নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। প্রতিকার চেয়ে কোন সমাধান পাচ্ছে না ভোক্তভোগীরা। জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়ার।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায় ধোবাউড়া উপজেলা পরিষদের সামনে থেকে বহুমুখী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় খেলার মাঠ ও শশ্মান ঘাট পর্যন্ত একটি রাস্তা নিমার্ণ করছেন এলজিইডি। তবে অভিযোগ রয়েছে নির্মাণাধীন হাফ কিলোমিটার রাস্তা সরকারি হালট দিয়ে না নিয়ে ব্যক্তি মালিকানা জমি দিয়ে নেয়া হচ্ছে। এতে করে প্রায় কোটি টাকার জমি হারাতে হচ্ছে মতিউর রহমান ফকির গংদের।

জমির মালিকানা দাবিদার মতিউর রহমান ফকির বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামের আগ থেকেই তার বাব-দাদারা এখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করছে। ৩০ বছর পূর্বে স্কুলের খেলার মাঠে যাওয়ার জন্য কোন রাস্তা ছিল না। তাই তারা তাদের জমিতে ব্যক্তি উদ্যোগে চলাচলের জন্য একটি রাস্তা করে দিয়ে ছিলেন। এখন তাদের এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস এবং ভূমি অফিসের কার্যালয় নির্মাণ করা হয়েছে। জমির শতাংশও হয়েছে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা। সাম্প্রতি এলজিইডি অফিস তাদের ব্যক্তি উদ্যোগে নির্মিত রাস্তার উপর পাকা রাস্তা নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন। যদিও পাশ দিয়ে সরকারি রাস্তা নির্মাণ করার মতো জায়গা রয়েছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মতিউর রহমান।

সোহেল ফকির বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাদের জমির উপর দিয়ে জোরপূর্বক রাস্তা নির্মাণের কাজের উদ্বোধন করেছেন। বিষয়টি বারবার অবগত করার পরেও রাস্তার কাজ বন্ধ করা হয়নি। এলাকার সমস্ত লোকজন অবগত রয়েছে যে এটি আমাদের ব্যক্তি মালিকানা রাস্তা। তবুও সরকারি লোকজন আমাদের কোন কথাই মানছে না।

লুৎফর রহমান ফকির বলেন, এদিক দিয়ে রাস্তা নেয়ার মতো যদি সরকারি জায়গা না থাকতো তাহলে আমরা আমাদের জমি দিয়ে রাস্তা দিতাম কোন সমস্যা ছিল না। সরকারি জায়গা থাকা সত্তে¡ও কেন আমাদের জমির উপর দিয়ে রাস্তা তা কোন ভাবেই বুঝে উঠতে পারছি না। আমাদের প্রায় কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা নজরুল ইসলাম ও জুলহাস উদ্দিন বলেন, তারা মতিউর রহমান ফকিরদের কাছ থেকে জমি কিনে ২৫ থেকে ৩০ বছর ধরে এখানে বসবাস করছেন। রাস্তাটি তারা ব্যক্তি উদ্যোগেই চলাচলের জন্য করে ছিলেন। এখন সরকারি জায়গা থাকতেও তাদেরকে না জিজ্ঞেস করেই রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রশাসনেরও তারা কোন সহযোগিতা পাচ্ছে না।

শিক্ষার্থী আশরাফুল আলম বলেন, এই রাস্তাটি শুধু ব্যক্তি মালিকানার জমির উপর দিয়েই যাচ্ছে না। আমাদের খেলার মাঠের উপর দিয়েও যাচ্ছে। খেলার মাঠের উপর দিয়ে রাস্তা যাওয়ায় মাঠটি ছোট হয়ে গেছে। খেলাধুলার সমস্যা হচ্ছে।

স্থানীয় সার্ভেয়ার আবুল কালাম বলেন, এখানে কিছু দিন পর পরেই জমি বিক্রি হয়। তাই তাকে জমি মেপে দিতে হয়। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি বলেন, নির্মাণাধীন রাস্তাটি ব্যক্তি মালিকানা জমির উপর দিয়ে নেয়া হচ্ছে। প্রশাসন ইচ্ছা করলেই তাদের জমি দিয়ে রাস্তা নিতে পারে।

ধোবাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাফিউজ্জামান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সাধারন মানুষ এ রাস্তা দিয়েই চলাচল করে আসছে। কখনও কেউ বলেনি এটি ব্যক্তি মালিকানা রাস্তা। কাজ শুরু করার পর থেকেই একটি পক্ষ রাস্তাটি তাদের বলে দাবি করছে। আদালতের নির্দেশে আপাতত কাজ বন্ধ রয়েছে।

ময়মনসিংহ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো.শহিদুজ্জামান খান বলেন, বাংলাদেশের সকল জমির মালিক সরকার। সেই অনুযায়ী জেলাতে জেলা প্রশাসক এবং উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সকল জমির মালিক। যেহেতু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাস্তাটি অনুমোদন দিয়েছে এবং রাস্তার কাজও চলছে সেহেতু সেখানে আমাদের করার কিছু নেই। কাজ শুরুর আগে বললে হয়তো বিষয়টি বিবেচনা করা যেতো।

জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান বলেন, সরকারি রাস্তা রেখে ব্যক্তি মালিকানা জমি দিয়ে রাস্তা নির্মাণের বিষয়ে তিনি অবগত নন। কেউ যদি লিখিত অভিযোগ করে তাহলে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Share this post

scroll to top