ময়মনসিংহে বছর ধরে অর্ধ দিবসে চলছে মাদরাসাঃ প্রিন্সিপালের গড় হাজিরা

এবতেদায়ী থেকে ফাজিল কাগজে শিক্ষার্থী ৬ শতাধিক। এক বছর ধরে অর্ধ দিবসে চলছে মাদরাসা। মাদরাসার প্রিন্সিপাল গড় হাজিরা দিয়ে মাসের পর মাস তুলছে বেতন। দুশ্চিন্তায় কপালে ভাঁজ পড়েছে অভিভাবকদের।

ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার এনায়েতপুর ফাজিল মাদরাসা এখন অর্ধ দিবসের মাদরাসা হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে। শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া নিয়ে চরম হতাশায় ভুগছে।

মাদরাসা সূত্র জানায়, ১৯৬৭ সালে ৬ একর জমিতে স্থাপিত হয় মাদরাসাটি। ২ একর কৃষি জমি থেকে মাদরাসার একটি বাড়তি আয় হয়ে থাকে। তিন বছর আগে মাদরাসায় প্রিন্সিপাল হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয় মোঃ আব্দুর রাজ্জাককে। চতুর্থ শ্রেনী পদে ২০২১ সালে নিযোগ সংক্রান্ত জটিলতা নিয়ে মাদরাসায় বিরোধ বাড়তে থাকে। আয়া পদে সুমি আক্তার নামে এক প্রার্থীর কাছ থেকে মাদরাসার প্রিন্সিপাল ৯ লাখ ৭৫ হাজার টাকা নেয়ার পর নিয়োগ না দিতে পারায় আদালতে প্রিন্সিপালকে আসামী করে মামলা করা হয়। আদালত আগামী ৪ সেপ্টেম্বর প্রিন্সিপালকে উপস্থিত থাকার জন্য সমন জারি করেছেন। মার্চ মাস থেকে কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ায় এডহক কমিটি দিয়ে চলছে মাদরাসাটি। ২০২১ সালে আরও নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হলে মাদরাসার প্রিন্সিপাল আব্দুর রাজ্জাক মাদরাসায় আসা বন্ধ করে দেন। প্রতি মাসে একবার মাদরাসায় এসে পুরো মাসের স্বাক্ষর দিয়ে বেতন উতোলন করে আসছেন। তিন বছর ধরে নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হলেও ২০২১ সালে জটিলতা বেশি দেখা দেয়। এক বছর ধরে মাদরাসাটি চলছে অর্ধ দিবসে। শিক্ষার্থীরা মাদরাসায় আসার পরও নিয়মিত ক্লাশ না হওয়ায় তাদের মধ্যে লেখাপড়ার প্রতি অনীহা সৃষ্টি হয়েছে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, মাদরাসাটির এবতেদায়ী মাদরাসায় দুটি রয়েছে। দরজা জানালা নেই।উপরে টিনের চালা বাতাসে নড়বড় করছে। দাখিল শাখা গুলোতে প্রতিটি কক্ষের অবস্থা একই। নেই দরজা জানালা। কক্ষগুলো সর্ব্বোচ্চ বেঞ্চ দুটি তিনটি। আলিম কক্ষে বিদ্যালয়ের ভাঙ্গাচোরা কাঠের স্তুপ। একটি ব্ল্যাক থাকলেও তা ব্যবহারের অনুপযোগী। শিক্ষার্থীরা চাঁদা তুলে কিনেছে একটি হোয়াইট বোর্ড। টয়লেটগুলো ব্যবহার অনুপযোগী। একটি টয়লেট ভাল থাকলেও সেটিতে থাকে তালা দেয়া।
একটা বাজার সাথে সাথে মাদরাসাটি ছুটি হয়ে যায়। যা এখন নিয়মে পরিনত হয়েছে। ৮ম শ্রেনীর শিক্ষার্থী মৌমিতা, ৭ম শ্রেনীর শিক্ষার্থী মাইমুনা বিদ্যালয় মাঠে জানান, দুপুরের আজান হওয়ার আগেই মাদরাসা ছুটি হয়ে যায়। কোন দিন ক্লাস হয় কোন হয় না। ১০ম শ্রেনীর শিক্ষার্থী জাহিদ হাসান জানান, তাদের ক্লাশে ১০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। সকলেই বিজ্ঞান শাখার। আমি মাঝে মধ্যে ক্লাশ করার জন্য আসি কিন্ত কোন ক্লাশ হয় না। আমাদের খুব খারাপ লাগে পরিক্ষায় আমরা কি পাশ করবো। আলিমের শিক্ষার্থী সজিব জানান, আমাদের ক্লাশে ৫৩ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। আমাদের কক্ষের এক পাশে মাদরাসার পুরাতন ভাঙ্গাচোরা কাঠের স্তুপ। সামনে থাকা ব্ল্যাক বোর্ডটি ব্যবহার অনুপযোগী। প্রিন্সিপালকে ব্ল্যাক বোর্ডটি মেরামত করে দেয়ার কথা বললে তিনি বলে থাকেন” টাকা নেই, আমি কি বাপের জমি বিক্রি করে ব্ল্যাকবোর্ড ঠিক করে দিব”। আমরা শিক্ষার্থীরা চাঁদা তুলে একটি হোয়াইট ব্ল্যাক বোর্ড কিনেছি। তারপরও নিয়মিত ক্লাশ হয় না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অভিভাবকরা জানান, এক বছর ধরে অর্ধ দিবসে চলছে মাদরাসাটি। প্রশাসনের কোন ব্যবস্থা নেই। আর করে ক্লাশ হবে পরিক্ষা তো এসেই পড়লো।

মাদরাসার ভাইস প্রিন্সিপাল আ ন ম মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের প্রিন্সিপাল অযোগ্য। তার ছেলেরা মাদরাসার সকল কাজ করে থাকেন। প্রিন্সিপালের দুই পুত্র লুৎফর রহমান ও মোস্তাফিজুর রহমান মাদরাসার অনলাইন কাজের বিভিন্ন আইডি, গোপন পাসওয়ার্ড নেয়ার চেষ্টা করলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসে উদ্ধার করেন। এ নিয়ে আমরা থানায় জিডিও করেছি। যেখানে প্রিন্সিপাল মাদরাসায় আসেন সেখানে লেখাপড়ার পরিবেশ থাকে কিভাবে।

প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে আদাতে মামলা করা সুমি আকতার বলেন,” আমরা গরীব মানুষ। জায়গা জমি বিক্রি করে চাকরীর আশায় প্রিন্সিপালকে ৯লাখ ৭৫ টাকা দিয়েছি। চাকরী দেন না টাকাও দেন না বাধ্য হয়ে আদালতে মামলা করেছি।
প্রিন্সিপাল আব্দুর রাজ্জাক চাকরী দেয়ার নাম করে টাকা নেয়ার বিষয়ে বলেন,” আমি এত টাকা নেই নাই। কিছু টাকা নিয়েছি। মাদরাসায় না আসার বিষয়ে তিনি বলেন,” আমি অসুস্থ এ কারনে আসা হয় না।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বেলায়েত হোসেন জানান, মাদরাসার অবস্থা খারাপ শুনেছি এত খারাপ আমার জানা ছিল না। এক বছরের মধ্যে তিনি ঐ মাদরাসা পরিদর্শন করেছেন কিনা জানতে চাইলে, তিনি জানান, আমি পরিদর্শন করি নাই।
ফুলবাড়ীয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নাহিদুল করিম জানান, দীর্ঘ দিন ধরে অর্ধ দিবস ক্লাশ হচ্ছে এমনটা আমার জানা নেই। খোজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহনের কথা জানান ঐ কর্মকর্তা।

Share this post

scroll to top