ময়মনসিংহে জ্বর, সর্দিতে মারা যাওয়া ব্যক্তিরা নতুন কোন ভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন নাতো?

Columnময়মনসিংহে করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে যারা করোনার উপসর্গ যেমন: শ্বাসকষ্ট, জ্বর ও সর্দি নিয়ে মারা যাচ্ছেন তাদের মধ্যে অনেকেই শ্বাসকষ্ট, জ্বর ও সর্দিতে সহজেই মারা যাওয়ায় ময়মনসিংহের স্বাস্থ্য বিভাগকে আরো সচেতন হতে হবে। শ্বাসকষ্ট, জ্বর ও সর্দিতে যদিওবা তারা মারা গেছেন, তবুও এই শ্বাসকষ্ট, জ্বর ও সর্দি কি সাধারণ শ্বাসকষ্ট, জ্বর ও সর্দি রোগ না ভিন্ন কোন রোগে আবির্ভূত হচ্ছে তাও ভাবার বিষয়! এই শ্বাসকষ্ট, জ্বর ও সর্দি নিয়েও যথেষ্ট গবেষণা প্রয়োজন। নতুন কোন ভাইরাস ভিন্ন আঙ্গিকে এসব উপসর্গ নিয়ে আক্রমণ চালাতে পারে যা অকল্পনীয় কিছু নয়। তবে এই মুহূর্তে নতুন কোন ভাইরাস নিয়ে চিন্তিত নন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল অপরদিকে জ্বর, সর্দি ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হওয়ার পর সঠিক চিকিৎসা মিলছে কিনা তাও ভাবার বিষয়। গত দু’মাসে এমন কিছু রোগী মারা গেছেন যাদের সাধারণ জ্বর ও সর্দির চিকিৎসা করাতে তেমন কোন বেগ পেতে হত না, চিকিৎসার খরচের চিন্তাও করতে হতনা। যদি তারা সাধারণ জ্বর সর্দিতেই মারা গিয়ে থাকেন তবে তা হবে আমাদের জন্য আরেকধরণের হুমকি। কারণ, গত ৮ জুন শ্বাসকষ্ট ও জ্বরে মারা যান ময়মনসিংহের সিলভার ক্যাসেল হোটেল এর মালিক আনোয়ারুল ইসলাম আনু বেগ (৭০)। ১৫ এপ্রিল জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে নগরীর গোলপুকুর পাড় এলাকার ডা. শামস জাভেদ জ্বর ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। তিনি কিশোরগঞ্জের উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ৮ জুন বিকেলে ভালুকায় নিজ বাড়িতে জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে রমিজউদ্দিন নামে এক আনসার সদস্য মারা যান। রমিজউদ্দিন ঢাকায় কর্মরত ছিলেন। ৬ জুন সকালে নগরীর এসকে হাসপাতালে করোনার উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ত্রিশাল উপজেলার ধলা আদর্শ কিন্ডারগার্টেনের প্রধান শিক্ষক কামরুল হুদা শাকের  মারা যান। ১৫মে জ্বর, সর্দি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে হালুয়াঘাটে আয়শা আক্তার (২৫) নামের এক শিক্ষিকা মারা যান। বেশ কিছু বিষয় লক্ষ করলে দেখা যায় যে, এসব সচেতন শ্রেণির মানুষরা হয়তবা সাধারণ জ্বর ও সর্দিতে চিকিৎসা নেয়ার বাকি রাখেনি! কিন্তু প্রশ্ন উঠতেই পারে যে, তাহলে এই জ্বর, সর্দি ও শ্বাসকষ্ট কি ভিন্ন কোন রোগের ইঙ্গিত দিচ্ছে? মারা যাওয়া এসব রোগীদের থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগকে আরো বেগবান হতে হবে। এগুলো শুধুই জ্বর বা সর্দি হলে উল্লেখিত লোকগুলো চিকিৎসা ছাড়া মারা যাওয়ার কথা না। হয়তবা কোভিড-১৯ বা অন্য কোন ভাইরাস নতুন কোনরূপে বিস্তার ঘটাতে চাচ্ছে আমাদের মাঝে। এদিকে গত দুই মাসের হিসেবে ময়মনসিংহে করোনার উপসর্গ অর্থাৎ জ্বর, সর্দি ও শ্বাসকষ্টে মারা গেছেন ২০-৪০ বছর বয়সী বেশ কয়েকজন। মারা গেছেন বৃদ্ধও। ময়মনসিংহের ভালুকার সাতেঙ্গা গ্রামে সর্দি, জ্বর ও কাশি নিয়ে হাফেজ আলী আজগর নামে মসজিদের এক ইমামের মৃত্যু হয়েছে। ২২ এপ্রিল ফুলবাড়িয়ার ১৭ বছরের এক কিশোর জ্বর ও শ্বাসকষ্টে ভুগলে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির পর আইসোলেশনে নেওয়া হলেও, দুপুর ২টার দিকে সে মারা যায়। ১৪ এপ্রিল ময়মনসিংহের ত্রিশাল পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের মুর্শিদা আক্তার (৪০) নামের এক নারী ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই শ্বাসকষ্ট ও জ্বর নিয়ে মারা যান। ২২ শে এপ্রিল ত্রিশাল উপজেলার চরপাড়া গ্রামের আরাফাত (১৭) নামের এক কিশোর করোনার উপসর্গ নিয়ে ময়মনসিংহ নগরীর এস কে (সূর্য্য কান্ত) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ভালুকার মেদুয়ারী ইউনিয়নের সোয়াইল গ্রামের আজগর আলীর ছেলে মো. নজরুল ইসলাম (৪৫) শ্বাসকষ্ট ও জ্বর নিয়ে মারা যান। গফরগাঁওয়ের পাগলা থানার দত্তেরবাজার ইউনিয়নে পগলা কোনাপাড়া গ্রামে সর্দি, শ্বাসকষ্ট ও জ্বর নিয়ে চঞ্চল মিয়া (৩২) নামর এক গার্মেন্টস কর্মী মারা যান। তিনি নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রামের বাড়ি গফরগাঁওয়ের পাগলা কোনাপাড়ােএসেছিলেন। যদিও তার মৃত্যুরপর নমুনা সংগ্রহ করা হয়নি। ৬ এপ্রিল ঈশ্বরগঞ্জের মোস্তফাপুর গ্রামের রইস উদ্দিন (৪২) নামের এক কৃষক জ্বর, সর্দি নিয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১৪ নাম্বার ওয়ার্ডের মেডিসিন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। ৬ এপ্রিল ভালুকা উপজেলার মেদুয়ারী ইউনিয়নে ৪ নং ওয়ার্ডের সোয়াইল গ্রামের লাইড্ডা বাড়ির নজরুল ইসলাম মিস্ত্রি (৪৫) করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যান। ১৪ এপ্রিল ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের ৩২নং ওয়ার্ডে চরকালীবাড়ি এলাকার আব্দুর রহমান (৬০)  জ্বর ও শ্বাসকষ্টে মারা যান। ৫ এপ্রিল রোববার করোনার উপসর্গ নিয়ে হালুয়াঘাটের কৃষ্ণনগর গ্রামের ৮০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি মরা যান।

এব্যাপারে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা: লক্ষীনারায়ণ মজুমদার ময়মনসিংহ লাইভকে বলেন, সাধারণ জ্বর, সর্দি ও শ্বাস কষ্টে যারা মারা যাচ্ছে তারা কি নতুন কোন ধরণের ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে কিনা তা এখনও চিন্তা করিনি। যে ভাইরাস নিয়ে আমরা আছি সেটা নিয়েই কাজ করছি। তবে এখন কারো জ্বর, সর্দি বা শ্বাসকষ্ট হলে শুধু কোভিড-১৯ পরীক্ষা করে পজেটিভ ও নেগেটিভ জেনে নেয়া উচিত। সাধারণ জ্বর, সর্দি বা শ্বাসকষ্টে যারা মারা যাচ্ছেন তারাতো নিশ্চয়ই জ্বর সর্দির চিকিৎসা নিয়েছেন, তারপরও ঐধরণের সচেতন মানুষরা জ্বর সর্দিতে মারা যাচ্ছেন এ ক্ষেত্রে আপনি কি মনে করেন এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এখন শুধু করোনা পজেটিভ- নেগেটিভ নিয়েই কাজ। এত ব্যাখ্যা দেয়া যাবেনা।

এব্যাপারে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগীয় প্রধান ডা. সালমা আহমেদ ময়মনসিংহ লাইভকে বলেন, করোনার উপসর্গ নিয়ে যেমন সাধারন জ্বর, সর্দি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে যারা মারা যাচ্ছে তারা কি নতুনরূপে আসছে এমন কোন ধরণের ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে কিনা সে তথ্য আমাদের হাতে নেই। আমরা যা করি তা হচ্ছে, একজনের স্যাম্পল নেয়ার পর যদি ল্যাব টেস্টে ৬৫% পজেটিভ আসে তবে ঐ রোগীর স্যাম্পলকে করোনা শনাক্ত করি। বাকি ৩৫% এর ক্ষেত্রে নেগেটিভ ধরা হয়। আর ভাইরাসের স্বভাবই পরিবর্তন হওয়া। নতুন কোন ভাইরাস নতুন রূপে আসতেও পারে। কিন্তু সেটার তথ্য এখনও আমাদের কাছে নেই।

Share this post

scroll to top