ময়মনসিংহে জিনের বাদশা গ্রেফতার

মো. আব্দুল আউয়াল : ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে  বাবুল (৪০) নামের কথিত জিনের বাদশাকে আটক করেছে পুলিশ। নিখোঁজ শিশু উদ্ধারের নামে জিনের বাদশা সেজে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে তাকে আটক করা হয়। গতকাল সোমবার মামলার পর ওই জিনের বাদশাকে আজ আদালতে পাঠানো হবে। আটক বাবুল উপজেলার মাইজবাগ ইউনিয়নের কবিরভুলসোমা গ্রামের মো.সব্দর আলীর ছেলে।

ভুক্তভোগি পরিবারের লোক ও অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, নরসিংদি জেলার রায়পুরা উপজেলার বাছাইকান্দি গ্রামের রূপচাঁন কাজীর  মাদ্রাসা পড়ুয়া ছেলে দুলাল কাজী(১২) নিজ এলাকার একটি মাদ্রাসা থেকে গত ১৮ নভেম্বর হারিয়ে যায়। এরপর বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও কোথাও তার সন্ধান করতে পারেনি।

তার বড় ভাই রিয়াদুল ইসলাম হৃদয় জানান,ভাই নিখোঁজের খবর পেয়ে তাঁর বাড়ির পাশে রাজমিস্ত্রি কাজ করা সাদ্দাম হোসেন(৪০) নামে এক ব্যক্তি বলেন,তার বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার লক্ষীগঞ্জে। তার বাড়ির পাশেই এক ব্যক্তি জিন নামিয়ে হারানো বা নিখোঁজ হওয়া কোনো কিছু সহজেই উদ্ধার করে দেন। এ অবস্থায় তাঁর নিখোঁজ ভাইকে পেতে মাত্র চারঘন্টা সময় লাগবে। এতে কিছু টাকা খরচ হবে। এ কথা শুনে দুইদিন পর সাদ্দামের সাথে এসে ওই জিনের বাদশা বাবুলের কাছে আসেন।

বাবুল তাৎক্ষনিক বলেন,এই শিশু উদ্ধারে মাত্র চার ঘন্টা লাগবে। এই জন্য টাকা দিতে হবে পাঁচ লাখ। দফা রফা করে ৫০ হাজার টাকা কমে সাব্যস্থ করা হয়। নগদ দেওয়া হয় দুই লাখ টাকা। বিশ্বাস যোগ্যতার জন্য কোরআন শপথ করেন। বাকী টাকা উদ্ধারের পর দেওয়া হবে শর্তে জিন নামানোর কাজ শুরু করে বাবুল। এক পর্যায়ে জানানো হয় যে কোনো সময় চলে আসবে নিখোঁজ শিশু। এ অবস্থায় তাঁদের বাড়ি যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। রিয়াদুল আরও জানান বাড়িতে গিয়ে দুইদিনেও নিখোঁজ হওয়া ভাই না আসায় ফের জিনের বাদশা বাবুলকে জানালে তিনি বাকী টাকা দাবি করেন। না দিলে উদ্ধার প্রক্রিয়া বিলম্ব হবে। এমতাবস্থায় আর বাকী টাকা বিকাশের মাধ্যমে পাঠানো হয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছু না হলে তাঁরা পরিবারের লোকজন নিয়ে বাবুলের বাড়ি ঈশ্বরগঞ্জের মাইজবাগ ইউনিয়নের কবিরবুলসোমা গ্রামে যান। এ সময় বাবুল আবার টাকা চাইলে তাঁরা টাকা দিতে অস্বীকার করে বাকী টাকা ফেরত দেওয়া জন্য বলতেই বাবুলের স্ত্রীসহ ৫/৬জন মিলে অস্ত্র দেখিয়ে চলে যেতে বলে। অন্যথায় জীবনে মেরে ফেলার হুমকী দেয়। এ ঘটনা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান,মেম্বার ও এলাকাবাসিকে জানানো হয়। এক পর্যায়ে চেয়ারম্যান  ঘটনাটি নিয়ে আলোচনা করার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের ডেকে পাঠালেও অভিযুক্ত বাবুল মিয়া আসেননি। পরে ঘটনাটি ময়মনসিংহ পুলিশ সুপারকে লিখিত ভাবে জানানো হয়। সেখান থেকে গত শনিবার ঈশ্বরগঞ্জ থানাকে নির্দেশ দেওয়া হয় ঘটনা তদন্ত করে প্রয়োজনী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।

ঈশ্বরগঞ্জ থানার ওসি মোখলেছুর রহমান আকন্দ জানান,অভিযুক্ত বাবুলসহ চক্রটিকে ধরতে বিশেষ অভিযান চালানো হয়। বাবুল মিয়াকে আটক করা হয়েছে। বাকীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

Share this post

scroll to top