ময়মনসিংহে একটি মাত্র শ্রেণিকক্ষেই নেয়া হচ্ছে সকল শ্রেণির ক্লাস!

৭ম শ্রেনীর ক্লাস হচ্ছে। শিক্ষার্থী উপস্থিত ৮ জন। গাদাগাদি অবস্থা। ছোট একটা কক্ষে বেঞ্চ তিনটি। বাইরে শিক্ষার্থীরা এলোমেলো ঘোরাফেরা করছে। পাশেই মসজিদের বারান্দায় ক্লাশ চলছে এবতেদায়ী শাখার। শিক্ষার্থীরা জানায়, সরকারীভাবে নতুন ভবন বরাদ্দের পর মাদরাসাটির পুরাতন ভবন বিক্রি করে দিয়েছে মাদরাসা পরিচালনা কমিটি। মাদরাসা খুলার পর থেকে এভাবেই ক্লাশ করছে তারা।

ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার বালুঘাট ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসার এ অচলাবস্থায় রীতিমত ক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী।

সরেজমিন রোববার (১৯ সেপ্টেম্বর) বালুঘাট ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসা পরিদর্শন করে দেখা গেছে ছোট একটি কক্ষে তিন বেঞ্চে ৮ জন শিক্ষার্থীকে গাদাগাদি করে বসিয়ে ক্লাশ নিচ্ছেন সহকারী মৌলবী আশরাফুল আলম। শিক্ষার্থীরা জানায় ১২ সেপ্টেম্বর মাদরাসা খুলার পর থেকে ঐ দাখিল মাদরাসা ও এবতেদায়ী শাখার শিক্ষার্থীরা পালাক্রমে একটি মাত্র কক্ষে গাদাগাদি করে ক্লাশ করে থাকেন। বাইরের গাছতলায় ঘোরাফেরা করা শিক্ষার্থীরা জানায়, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি তাদের পুরাতন মাদরাসা ভবন বিক্রি করে দিয়েছেন। তাদের গাছতলা ছাড়া বসার আর কোন জায়গা নেই।

মাদরাসার অফিস রুমে গিয়ে কথা হয় মাদরাসার সুপার আবুবকর সিদ্দিকের সাথে। তিনি জানান, সরকারী ভাবে নতুন ভবন আসার পর তারা পুরাতন ভবনের ১১ কক্ষ বিশিষ্ট টিনসেডের ভবন বিক্রি করে দিয়েছেন। তারা মনে করেছিলেন করোনাকাল আরও দীর্ঘস্থায়ী হবে। সে পর্যন্ত নতুন ভবনের কাজ শেষ হয়ে যাবে। নতুন ভবন নির্মান কাজ শেষ করতে এখনো অনেক সময় লাগবে। পুরাতনভবন বিক্রির পর নতুন করে ক্লাশ পরিচালনার জন্য কোন ঘর তারা তৈরি না করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সভাপতি ঘর বিক্রি করায় টাকার অংক তার জানা নেই বলে জানান। মাদরাসার ২৫০ জন শিক্ষার্থীর কথা মাথায় না রেখে ভবন বিক্রি করে বেকাদয় পড়েছেন এততেদায়ী শাখা শিক্ষকরাও। এবতেদায়ী প্রধান ইউসুফ আলী জানান, আমার শিক্ষার্থী আছে ১৪০ জন। মাদরাসা খুলার পর উপায় না দেখে মসজিদের বারান্দায় ক্লাশ নিতে বাধ্য হচ্ছেন। কোমলমতী শিক্ষার্থীরা মসজিদের বারান্দায় ক্লাশ করে স্বাচ্ছন্দবোধ করছে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক জানায়, মাদরাসা খুলার পর কোন লেখাপড়া হচ্ছে না। ক্লাশ করার কক্ষ না থাকায় শিক্ষার্থীরা ক্লাশে মাদরাসায় যাচ্ছে না। মাদরাসা সুপার ও সভাপতি মিলে বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবন বিক্রি করে দেয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সুষ্ঠ তদন্ত করে তাদের বিরু্েদ্ধ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানান।

মাদরাসা পরিচালনা কমিটি কমিটির সভাপতি আব্দুল খালেক জানায়, মাদরাসার প্রয়োজনেই পুরাতন ভবন ৭৬ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। ক্লাশ পরিচালনার জন্য মাদরাসার মাঠে ছাপরা ঘর তৈরি করে দেয়া হবে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ বেলায়েত হোসেন জানান, মাদরাসার পুরাতন ভবন বিক্রি করার বিষয়টি তার জানা নেই। শ্রেনী কক্ষ পরিচালনার ব্যবস্থা না করে ভবন বিক্রি এটা দুঃখজনক। তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহনের কথা বলেন ঐ কর্মকর্তা।

Share this post

scroll to top