ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট মুক্তা চাষে সহযোগীতা দিচ্ছে

Pearl-Mukthaমুক্তা একটি মূল্যবান রত্ন। প্রাচীনকালে মুক্তার উৎপাদন কৌশল জানা ছিল না। তখন শুধুমাত্র প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত মুক্তাই সংগ্রহ করা হতো। পরবর্তী সময়ে চীন এবং জাপানে ঝিনুকের মুক্তা উৎপাদন কৌশল উদ্ভাবিত হয়। আশার কথা হচ্ছে, বাংলাদেশেও মুক্তাচাষের অপার সম্ভাবনা দেখা গেছে। এরই মধ্যে দেশীয় ঝিনুকে মুক্তাচাষের পদ্ধতি উদ্ভাবনে সফল হয়েছেন ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষকরা। মুক্তাচাষে আগ্রহীদের সার্বিক সহযোগীতাও করছে ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট।

মুক্তা চাষ এনে দিতে পারে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা। সেই সঙ্গে ভাগ্য খুলে যেতে পারে হাজারো বেকার যুবক-যুবতীর। অনেকেই উদ্বুদ্ধ হয়ে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরামর্শ নিয়ে মুক্তা চাষ শুরু করেছেন।

জানাযায়, প্রাকৃতিক জলাধার থেকে মান স¤পন্ন ঝিনুক সংগ্রহ করে ঝিনুকের মুখ ফাঁকা করে ঝিনুকের খোসার গুড়া ও ২ ধরনের রাসায়নিক দ্রব্যের সংমিশ্রণে বিভিন্ন ধরনের ডাইচের ভেতরে স্থাপন করা হয়। ৭ থেকে ৮ মাসের মধ্যে ঝিনুকের ভিতরে মুক্তা আহরণের উপযুক্ত হয়। আর এসকল কাজে ব্যয় হয় সর্বোচ্চ ১০০ টাকা। বাড়ির পাশে পুকুর ও জলাধারে এরকম মুক্ত চাষ সম্ভব ব্যয়ের পরিমাণ ও খুবই কম। উৎপাদিত মুক্তা প্রতিটি গড়ে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়। জুয়েলারি, ওষুধ শিল্পে, কসমেটিক্স, পেইন্টস ফরমুলেসনে মুক্তা ব্যবহৃত হয়ে থাকে। মুক্তা বিদেশ থেকে আমদানি করতে হচ্ছে। দেশের হাওড় ও বিলে প্রাকৃতিকভাবে মুক্তা পাওয়া যায়। এটি চাষের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হলে দেশীয় চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা ও অর্জন করা সম্ভব। এছাড়াও নদীনালা ও পুকুর থেকে ঝিনুক সংগ্রহ করে তা বাছাই করে প্লাস্টিকের ঝুড়িতে রাখা হয় পানিতে। এর পর ৭ মাস থেকে ৮ মাসের মধ্যে পাওয়া যায় কাঙ্খিত মুক্তা। ঝিনুকের জন্য বাড়তি কোনো খাবার দিতে হয় না। ক্যালসিয়ামের জন্য প্রতিমাসে একবার করে পুকুরে চুন প্রয়োগ করতে হয়।

মুক্তা চাষকে বাণিজ্যিকীকরণে ৪ বছর ধরে গবেষণা চালাচ্ছে ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) একদল উদ্যোমী বিজ্ঞানী। এরই মধ্যে তারা তাদের কাজে সাফল্য অর্জন করেছেন। তারা জানিয়েছেন, মুক্তা গবেষণা একটি দীর্ঘমেয়াদি, ধারাবাহিক ও জটিল কার্যক্রম। তবে মুক্তা চাষের জন্য নতুন ও উন্নত প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে তা কৃষক-খামারিদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারলে, মুক্তা আগামীতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশের বাইরে চীন, জাপান, ভিয়েতনাম, কানাডা, স্পেন, ফিলিপাইনসহ বিভিন্ন দেশে প্রণোদিত’ উপায়ে মুক্তা উৎপাদন এবং চাষ করা হচ্ছে। এতে চীন ও জাপান ঈর্ষণীয় সফলতা অর্জন করেছে।

বাংলাদেশের আবহাওয়া মুক্তা চাষের অনুকূল হওয়ায় এদেশেও মুক্তা চাষের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। সে লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মুক্তাচাষ উন্নয়ন বিষয়ক একটি গবেষণা প্রকল্প বিএফআরআই থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্প সূত্র জানায়, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) ছোট আকারের মুক্তা উৎপাদনের পাশাপাশি ইমেজ মুক্তা (চ্যাপ্টা আকৃতি) প্রযুক্তি উদ্ভাবনে সফল হয়েছেন।

Share this post

scroll to top