ময়মনসিংহের শরীফকে মাত্র ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে খুন করে

র‌্যাবগাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক কনস্টেবল শরীফ আহম্মেদ (৩৩) হত্যার রহস্য উন্মোচন করেছে র‌্যাব। ১০ হাজার টাকা চুক্তিতে ভাড়াটে খুনি দিয়ে শরীফকে খুন করা হয় বলে র‌্যাব কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

রোববার (১৫ মার্চ) দুপুরে কারওয়ানবাজার র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব কর্মকর্তারা জানান, শনিবার রাতে র‌্যাব-১ এর একটি দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গাজীপুরের শ্রীপুর থানার গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ী এলাকায় অভিযানর পরিচালনা করে। এ সময় মো. মোফাজ্জল হোসেন, মো. মাসুদ মিয়া ও মো. মনির হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। খুনে ব্যবহৃত তাকওয়া পরিবহনের একটি বাস, রক্তমাখা গাড়ির হুইল-রেঞ্জ, একটি চাকু উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাব-১ অধিনায়ক লে. কর্নেল শফিউল্লাহ বুলবুল আরও জানান, শরীফ গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগে কর্মরত ছিলেন। তার সঙ্গে মোফাজ্জল ও গাজীপুরের তাকওয়া বাসের চালক মনিরের পূর্ব পরিচয় ছিল। কিছুদিন আগে কনস্টেবল শরীফের সঙ্গে তাদের দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। মোফাজ্জল এবং মনির দুজনে শরীফকে খুনের পরিকল্পনা করে। যার মাস্টারমাইন্ড ছিল মোফাজ্জল। মোফাজ্জলের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ১ মার্চ কনস্টেবল শরীফকে খুন করার জন্য তার ময়মনসিংহের গ্রামের বাড়ির দুঃসম্পর্কের আত্মীয় কুখ্যাত ভাড়াটে খুনি মাসুদকে ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে খুনের চুক্তিতে ভাড়া করে। অগ্রীম পাঁচ হাজার টাকাও দেয়। ২ মার্চ খুনের চুক্তি অনুযায়ী তারা মাসুদকে গাজীপুরে নিয়ে আসে এবং মনিরের বাসায় বসে খুনের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে।’

সাংবাদিকদের প্রশ্নে র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘পরিকল্পনা অনুযায়ী ৩ মার্চ দুপুরে তাকওয়া বাসের ড্রাইভার মনির ৯৯ টাকায় মার্কেট থেকে একটি চাকু কিনে মাসুদকে দেয়। ওইদিন রাতে মোফাজ্জল কৌশলে কনস্টেবল শরীফকে ভোগড়া বাইপাস এলাকায় নিয়ে আসার পর তাকে তাকওয়া পরিবহনে উঠায়। ড্রাইভার মনির হোসেন বাসটিকে চালিয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ রোডে শ্রীপুরের মাওনার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। জয়দেবপুরের ভবানীপুর বাজার থেকে ইউটার্ন নিয়ে পুনরায় চান্দনা চৌরাস্তার দিকে যেতে থাকে। পথিমধ্যে চলন্ত বাসের দরজা-জানালা বন্ধ করে দেয়। ৪ মার্চ রাতে বাসটি গাজীপুর হোতাপাড়া আসার পর পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী মাসুদ বাসটিতে থাকা বাসের লোহার হুইল রেঞ্জ দিয়ে পিছন থেকে শরীফের মাথায় পর পর বেদম আঘাত করে। শরীফের মাথা ফেটে রক্ত পড়তে থাকলে সে অজ্ঞান হয়ে যায়। গাড়ির মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে। মোফাজ্জল ও মাসুদ মিলে নাইলনের রশি দিয়ে প্রথমে শরীফের দুই হাত বেঁধে গাড়ির পেছনের দিকে নিয়ে যায়। মোফাজ্জল শরীফের বুকের উপর বসে এবং ভাড়াটে খুনি মাসুদের সাথে থাকা ধারালো চাকু দিয়ে গলাকেটে জবাই করে। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর নিহত শরীফের সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোন, টাকা-পয়সা তিন জনে ভাগাভাগি করে নেয়। রাত আনুমানিক ২ টার সময় বাসটি ঢাকা-ময়মনসিংহ রোডের ন্যাশনাল পার্কের ৪নং গেটের সামনে পৌঁছলে বাসটি থামিয়ে ড্রাইভার মনিরসহ ৩ জন মিলে লাশটি  রাস্তার পাশে ফেলে দ্রুত পালিয়ে যায়।’

র‌্যাবের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ৪ মার্চ গাজীপুর মহানগরীর ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের ৪ নং গেইটের সামনে থেকে অজ্ঞতনামা এক যুবকের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ৮ মার্চ বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে গাজীপুর মহানগরীর পূর্ব চান্দনা কবরস্থানে দাফন করা হয়। ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। নির্মম হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষিতে র‌্যাব-১ তাৎক্ষণিকভাবে হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে দ্রুততার সাথে ছায়া তদন্ত শুরু করে। ১২ মার্চ পিবিআই কর্তৃক লাশের ফিঙ্গার প্রিন্টের মাধ্যমে নিহত যুবকের পরিচয় শনাক্ত করা হয়।

Share this post

scroll to top