ময়মনসিংহের প্রান্ত স্পেশালাইজড হাসপাতালকে দালাল বললেন ডা. তুষার

বাংলাদেশে ফ্রি ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে বিদেশি চিকিৎসকদের হাসপাতালের প্রচারণার বিষয়টি নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন জনপ্রিয় টিভি উপস্থাপক ও নাগরিক টিভির প্রধান নির্বাহী ডা. আবদুন নূর তুষার।

চলতি মাসের ২৯ ও ৩০ তারিখে ময়মনসিংহের চরপাড়া এলাকায় বিনামূল্যে রোগী দেখবেন ভারতের চেন্নাইয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালের তিন চিকিৎসক। সেসব ডাক্তারদের যেসব ডিগ্রী রয়েছে তার বেশিরভাগই বিএমডিসি অনুমোদিত নয়। সেখানে ময়মনসিংহের প্রান্ত স্পেশালাইজড হাসপাতালসহ শহরের ম্যাগনাস মেডি, উপশম হাসপাতাল তাদের স্পন্সর করেছে বলে ডা. আবদুন নূর তুষার দাবি করেছেন। শুধু তাই নয়- ময়মনসিংহের এসব প্রতিষ্ঠানকে তিনি দালাল বলে নিজ ফেসবুক টাইমলাইনে একটি স্ট্যাটাসও দিয়েছেন। এনিয়ে দেশজুড়ে চলছে আলোচনা ও সমালোচনা। ইতোমধ্যে দেশের জনপ্রিয় দৈনিক যুগান্তর এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। দৈনিক যুগান্তরের সৌজন্যে সংবাদসহ স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

শনিবার রাত ১০ টা ১ মিনিটে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন ডা. আবদুন নূর তুষার। তার সেই স্ট্যাটাসটি পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হলো-

‘বিএমডিসি বলেছে, দেশের ডাক্তাররা নামের শেষে নানারকম অক্ষরে লেখা বিএমডিসি অননুমোদিত ডিগ্রীর সংক্ষিপ্তরুপ লিখতে পারবেন না। দেশের ডাক্তাররা সেটা মেনে নিয়েছেন।

তারা বলেছে সব চিকিৎসককে প্রেসক্রিপশন ও কার্ডে, সব দৃশ্যমান স্থানে যেখানে তাদের নাম পরিচয় লেখা আছে সেখানে তাদের রেজিস্ট্রেশন নং লিখতে হবে। দেশের ডাক্তাররা সেটাও মেনে নিয়েছেন।

সরকার বলেছেন, রোগী দেখার জন্য ছুটির দিন নিজ জেলা থেকে অন্য জেলায় যাওয়া যাবে না। গেলে অনুমতি লাগবে। ডাক্তাররা সেটা মেনে না নিলেও এটা নিয়ে তেমন উচ্চবাচ্য করছেন না।

অথচ বিদেশি ডাক্তার এসে রোগী দেখছে হরদম। মিথ্যা ফ্রি চিকিৎসার নামে প্রচারণা চালাচ্ছে।

দেশে বিদেশি ডাক্তারদের কাজ করার জন্য অনুমতি পেতে গেলে তাদের জন্য মোট ১২টি ধারা সম্বলিত নীতিমালার অধীনে অস্থায়ী নিবন্ধন নিতে হয়।

এসব বলে ডা. আবদুন নূর তুষার পাঁচটি ছবি পোস্ট করেছেন যেখানে ময়মনসিংহে ভারতীয় চিকিৎসকদের ওই ফ্রি চিকিৎসাসেবার প্রচারণা চালানো হয়েছে।

ডা. তুষার আরো লেখেন, ময়মনসিংহের চরপাড়ায় ২৯ নভেম্বর অবতীর্ণ হবেন তিন ভারতীয় চিকিৎসক। তারা বিনামূল্যে পরামর্শ দিবেন। তাদের হাসপাতালের নাম দিয়ে তারা প্রচারণা করছেন। অ্যাপোলো স্পেকট্রা হাসপাতাল , চেন্নাই।

কি দেবতার অবতার! চেন্নাই থেকে ময়মনসিংহ চরপাড়ায় আসেন ফ্রী চিকিৎসা দিতে।

তাদের পেছনে যেসব এবিসিডি ডিগ্রীর বহর তার বেশিরভাগই বিএমডিসি অনুমোদিত নয়।

তাদের রেজিস্ট্রেশন নাম্বার কই?

দেশের ডাক্তার পিজিটি লিখলে দোষ। ফেলোশিপ এর নাম লিখলে সমস্যা। এফসিপিএস পার্ট ওয়ান কোর্স লিখলে তাদের ওপরে আইন খড়গহস্ত।

কিন্তু ডা. থিরুভেনগিতা লিখেছেন। তিনি DNB, NBE, AO, LACKS Advanced course. উনি কোর্সের নাম লিখলে সমস্যা নাই।

ডা ডকসিনি DRM এবং তিনি ওমেন ড. অ্যাসোসিয়েশনের মেম্বার। ভাই আমি বিএমএর মেম্বার। এটা আমি লিখব? দেশের ডাক্তাররা পারবে না। কিন্তু ডকসিনি পারবেন।

ডা. বালাজি রামনি দুই কাঠি সরেস। তিনি MCH DNB ইনক্লুডিং HIPEC ( হাইপারথার্মিক ইনট্রাপেরিটোনিয়াল কেমোথেরাপি)। মানে তিনি বিশেষ পদ্ধতিতে একটা ঔষধ শরীরে প্রবেশ করাতে পারেন। এটা কি কোন ডিগ্রী?

যেমন আমি NTNPFTI (Normo Thermic Naso Pharyngeal Feeding Tube Insertion) পারি। মানে আমি নাক দিয়ে নল ঢুকিয়ে খাওয়াতে পারি। লিখব এটা?

তিনি চারটা অ্যাসোসিয়েশনের মেম্বার , সেগুলোকে সংক্ষেপে লিখেছেন যাতে ডিগ্রী মনে হয়। তিনি ‘রিচার্স এক্সপার্ট’। এটা আবার কি?

ধারা ১১ তে আছে কোন প্রতিষ্ঠান তাদের বিষয়ে কোন বিজ্ঞাপন করতে পারবে না।

ব্যানার দেখেন। ছবি সহ বিজ্ঞাপন। তাদের স্পন্সরদের নাম আছে নিচে।

ম্যাগনাস মেডি। ভারতের মেডিকেল ট্যুরিজম সংক্রান্ত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। ট্রাভেল ইনসাইডার। ভ্রমন সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠান।

উপশম হাসপাতাল। দেশিয় দালাল। ময়মনসিংহের ব্রীজের মোড়ে অবস্থান তার।

প্রান্ত স্পেশালাইজড হাসপাতাল। ৬৭ চড়পাড়া। আরেক দালাল।

ডাক্তার কমিশন খায় না, এরা রোগী বিদেশ পাঠিয়ে কমিশন বানিজ্য করে।

আর আছে রোটারী ক্লাব অব ময়মনসিংহ। রোটারিয়ানদের বিদেশি ডাক্তার দেখানোর ভীষন আগ্রহ।

ফ্রী চিকিৎসায় ভারতীয় ট্যুরিজম সংস্থা আর দেশি কিন্তু আন্তর্জাতিক ট্রাভেল সাইটের উৎসাহ কেন?

ফ্রী যাদের দেখা হবে তারা কি গবিব? গবিব না হলে ফ্রী দেখছে কেন?

এই গবিবেরা কোন দেশে বেড়াতে যাবে যে, এখানে ম্যাগনাস মেডি আর ট্রাভেল ইনসাইডার স্পন্সর হয়?

দেশিয় দালাল ও রোটারী ক্লাবের সেখানে কি উৎসাহ? কেন?

এটা কোনো ফ্রি চিকিৎসাকেন্দ্র নয়। দেশিয় রোগীদের ভারত নেবার প্রচারণা। গাইনী ও অর্থোপেডিকসের চিকিৎসার জন্য দেশ ছেড়ে বিদেশে কেন যাবে রোগীরা? দেশে ইনফার্টিলিটির ভালো চিকিৎসা হয়।

আর ক্যান্সার? অ্যাপোলো তো বাংলাদেশেই আছে। অ্যাপোলো স্পেকট্রা তে রোগী যাবে কেন? ঢাকা আসলেই তো হয়।

এসবই ব্যবসায়িক ধান্দা।

ব্যবসায়িক কারনে, প্রচারনা চালিয়ে ১১ ধারা ভঙ্গ করা, উদ্ভট ডিগ্রী নামক অননুমোদিত এবিসিডি ব্যবহার করা এবং ধারা ৩.৩ অনুযায়ী সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত না থাকা, তাদের সঙ্গে ধারা ৭ অনুযায়ী বাংলাদেশি চিকিৎসককে ক্যাম্পে না রাখা, বিএমডিসি অনুমোদন না নেয়া এবং একাধিক বেসরকারি হাসপাতালের সংযুক্তি, ধারা ১০ ভঙ্গ করে অন্যত্র রোগী দেখা, এসব কারনে এই অবৈধ কর্মকান্ডের জন্য প্রতিবাদ করছি।

ময়মনসিংহে দেশের সেরা একটি মেডিকেল কলেজ আছে। সেখানে ফ্রি ক্যাম্প করানোর জন্য বহু যোগ্য ডাক্তার আছেন।

সেখানে এই শহরে বিদেশি ডাক্তারদের অবৈধ তৎপরতার সঙ্গে তিনি কিভাবে সংযুক্ত হলেন? তার তো পরীক্ষা করে দেখা উচিত ছিল এদের উদ্দেশ্য কি?

একজন জনপ্রতিনিধি কি করে পারেন নিজের দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দেয়া অনুষ্ঠানে হাজির হবার সম্মতি দিতে?

তীব্র নিন্দা জানিয়ে এই বেআইনি ব্যবসায়িক ভন্ডামীর ফ্রি ক্যাম্প বন্ধ করার দাবি জানাচ্ছি।’ সৌজন্যে- দৈনিক যুগান্তর অনলাইন

ডা-তুষারের-স্ট্যাটাস

ডা-তুষারের-স্ট্যাটাস

Share this post

scroll to top