ময়মনসিংহের কলসিন্দুর নির্ভরশীলতা কমছে নারী ফুটবলে

women-football-Mymensinghদেশে যখন মেয়েদের ফুটবল চর্চা শুরু হয় তখন হাতে গোনা কয়েকটি জেলাই ছিল ভরসা। দল গড়তে হলে বাফুফেকে নির্ভর করতে হতো যশোর, নারায়নগঞ্জ, সাতক্ষীরা, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ির মেয়েদের ওপর।

সে অবস্থা থেকে আস্তে আস্তে বের হয়ে আসছে নারী ফুটবল। এখন পুরো দেশের মেয়েদের মধ্যেই ফুটবলের চর্চা পৌঁছে গেছে। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের অধীনে যে মেয়েরা এখন অনুশীলন করেন সেখানে রয়েছে দেশের ২৬ জেলার প্রতিনিধি।

মেয়েদের ফুটবলের দ্রুত পরিবর্তনটা হয়েছে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় পুরো দেশে বঙ্গমাতা প্রাথমিক বিদ্যালয় স্কুল ফুটবল শুরুর পর। আর এই টুর্নামেন্ট শুরুর পর মেয়েদের ফুটবলে বড় জাগরণ হয় ময়মনসিংহে।

ওই জেলার কলসিন্দুর স্কুলতো আলোড়ন সৃষ্টি করে মেয়েদের ফুটবলে। তখন জাতীয় দল বা বয়সভিত্তিক দল করতে গেলে সিংহভাগ মেয়েই নিতে হতো কলসিন্দুরের। দেশের মেয়েদের ফুটবল মানেই কলসিন্দুর- সেই অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে ধীরে ধীরে।

একটা পরিসংখ্যান দেয়া যাক। মেয়েদের জাতীয় দল সর্বশেষ খেলেছে গত বছর নেপালে অনুষ্ঠিত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে। সেখানে যে ২১ জনের দল ছিল তার মধ্যে ৮ জন ছিলেন ময়মনসিংহের।

মাহমুদ আক্তার, শামসুন্নাহার (সিনিয়র), শামসুন্নাহার (জুনিয়র), মারিয়া মান্ডা, সানিজদা আক্তার, শিউলি আজিম, মারজিয়া আক্তার, তহুরা খাতুনরাই ছিলেন সর্বশেষ জাতীয় দলের মূল ভূমিকায়। ছিলেন রংপুরের মিসরাত জাহান মৌসুমী, সিরাত জাহান স্বপ্না, ইসরাত জাহান রত্না, সাতক্ষীরার মসুরা পারভীন, রাজিয়া খাতুন, সাবিনা খাতুন, কুস্টিয়ার নীলুফা ইয়াসমীন নীলা, ইয়াসমিন আক্তার জবা, রাঙ্গামাটির রূপনা চাকমা, খাগড়াছড়ির মনিকা চাকমা, টাঙ্গাইলের কৃষ্ণা রানী সরকার, রাজশাহীর নার্গিস খাতুন ও সিরাজগঞ্জের আঁখি খাতুন।

কিন্তু এর বাইরেও বেশ কয়েকজন আছেন যারা জাতীয় দলে খেলার যোগ্যতা রাখেন। আগামীতে দল করতে গেলে জাতীয় ফুটবল দলের প্রধান কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনকে পরিবর্তন আনতে হবে। কারণ, এখন প্রতিযোগিতা আগের চেয়ে অনেক বেশি।

নারী ফুটবলারের সংখ্যা বেড়ে যাওয়াটাকে সবচেয়ে বড় ইতিবাচক দিক হিসেবে দেখছেন গোলাম রব্বানী ছোটন, ‘খেলোয়াড়ের সংখ্যা বাড়ার পর সবার মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বীতাও বেড়েছে। এখন জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়াটাই চ্যালেঞ্জিং। প্রতিযোগিতা করে টিকতে হবে সবাইকে। খারাপ করলেই বাদ পড়বে। তাই সবাই এখন আরো সিরিয়াস থাকবে।’

ইউনিসেফের পৃষ্ঠপোষকতায় বাফুফে যশোর স্টেডিয়ামে ক্যাম্প করেছিল ৮৩জন মেয়ে নিয়ে। সেখান থেকে ৫০ জন বাছাই করা হয়েছে। ৩০ জন আনা হয়েছিল ঢাকায়। যাদের বাফুফে ভবনে রেখে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছিল। করোনার কারণে ক্যাম্প ছুটি হওয়ার সময় ৫৮ জন মেয়ে ছিলেন। এর বাইরে ২৩ জন ছিলেন বসুন্ধরা কিংস ও এএফসি উত্তর বঙ্গের ক্যাম্পে।

যে জেলাগুলো থেকে এখন নারী ফুটবলার যোগ হচ্ছে বাফুফের ক্যাম্পে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে লালমনিরহাট ও মাগুরা। দুটি জেলা থেকেই ৮ জন করে মেয়ে সুযোগ পেয়েছেন বাফুফের ক্যাম্পে। সিরাজগঞ্জের মেয়ে বাড়ছে এখন। কিছুদিন এ জেলার আঁখিই ছিলেন একা। এখন আরো দুইজন সুমী খাতুন ও রত্না খাতুন যোগ হয়েছেন।

মৌসুমী, রত্না ও স্বপ্না ছাড়াও রংপুর থেকে উঠে আসছেন আরো নারী ফুটবলার। সুলতানা, বৃষ্টি, জয়নব, লাবনী, শাপলা, সুমাইয়ারা জাতীয় দলের আগামী দিনের খেলোয়াড়। ঠাকুরগাঁয়ের মুন্নী, সোহাগী কিসকু, কোয়াতি কিসকু, ছোট স্বপ্না, কাকলীরা এখন নিজেদের প্রস্তুত করছেন।

কৃষ্ণা রানী সরকারের টাঙ্গাইল থেকেও ইতি, মাহমুদা খাতুন, মিম খাতুন (১) মিম খাতুন (২) নামের আরও চারজন উঠে এসেছেন। ঝিনাইদহের উন্নতি খাতুনতো ইতিমধ্যেই নিজেকে চিনিয়েছেন বঙ্গমাতা ফুটবলে সেরা খেলোয়াড় হয়ে। নীলফামারীর তিনজন ভালো ফুটবলার উঠে এসেছেন বলেও জানালেন প্রধান কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন।

বাফুফের ক্যাম্পে যে মেয়েরা অনুশীলন করেন তাদের মধ্যে ৩৭জন আছেন বেতনের আওতায়। এর মধ্যে সাবিনা খাতুন নিজে অনুশীলনের পাশপাশি জুনিয়রদের কোচিং করান বলে ২০ হাজার টাকা করে পান। ৩ জন আছে যাদের বেতন ১২ হাজার টাকা করে। বাকিদের বেশিরভাগের মাসিক বেতন ১০ হাজার টাকা। কয়েকজন আছে পান ৬ হাজার টাকা করে। অন্যরা এখনো বেতনের আওতায় আসেননি।

Share this post

scroll to top