ম্যালেরিয়া মোকাবেলায় নতুন আবিষ্কার

আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণাংশের দেশগুলোতে অন্যতম মহামারি রোগটির নাম ম্যালেরিয়া। সম্প্রতি এক হিসাবে দেখা গেছে যে, বিশ্বে প্রতি বছর ২০ কোটিরও বেশি মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে থাকে। মারা যায় পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ।

এই আক্রান্তদের একটি বড় অংশ থাকেন সাব সাহারান আফ্রিকায়।

গত বছরের এক হিসাব অনুযায়ী, শুধুমাত্র উগান্ডায় গত বছর সাড়ে নয় লাখ মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিল। এরমধ্যে মারা গেছে ৫ হাজার ১শ জনেরও বেশি।

এই সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করার অন্যতম কারণ হল আক্রান্তরা রোগটি শনাক্ত করতে দেরি করে ফেলেন।

ম্যালেরিয়া এমন একটি রোগ যেটির চিকিৎসা সঠিক সময়ে না করলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

কিন্তু আক্রান্তের ২৪ ঘন্টার মধ্যে চিকিৎসা নিলে দ্রুত সুস্থ হওয়া সম্ভব।

হাসপাতালে দেখা যায় লিভিয়ানা মুলি নামে এক মা তার দুই সন্তানকে ভর্তি করতে এসেছেন।

তার ছয় মাসের নবজাতক এবং পাঁচ বছর বয়সী শিশু দুজনই ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত। মিসেস মুলি জানান,

“আমার ৬ মাস বয়সী মেয়ের অনেক জ্বর। জ্বরে গা পুড়ে যাওয়ার অবস্থা। খালি বমি করছে। এতোই দুর্বল হয়ে পড়েছে যে বুকের দুধ খেতে চাইছে না। ৫ বছর বয়সী মেয়েরও একই অবস্থা। জ্বরে তার কাঁপুনি হচ্ছে। ম্যালেরিয়া আমাদের জন্য অনেক বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

জাদুর যন্ত্র মাটিবাবু:

একটি ছোট বেসরকারি ক্লিনিকের পরীক্ষাগারে দেখা হয় ব্রায়ান গিটা নামে ২৬ বছর বয়সী এক উদ্যোক্তার সঙ্গে।

কাম্পালার মাকেরেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সাবেক ছাত্র মনে করেন তার কাছে ম্যালেরিয়া মোকাবিলার উপায় আছে।

এজন্য তিনি মাটিবাবু নামে স্যুটকেসের আকারের সমান একটি যন্ত্রের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। উগান্ডার স্থানীয় ভাষা সোয়েহিলিতে মাটিবাবু বলতে “চিকিৎসা” কে বোঝায়।

তিনি ও তার বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন বন্ধু মিলে এই যন্ত্রটি উদ্ভাবন করেন।

যেটি দামেও কম আবার পুনর্ব্যবহার যোগ্য। সবচেয়ে বড় কথা এতে রক্ত নেয়ার প্রয়োজন হয়না।

এ কারণে শিশুদেরও সুঁইয়ের খোঁচা খাওয়ার ভয় থাকেনা।

এবং এই পরীক্ষা সম্পন্ন হয় মাত্র দুই মিনিটের মধ্যেই। ব্রায়ান গিটা জানান এটা কিভাবে কাজ করে।

“এই যন্ত্রটি মূলত আলো আর চুম্বক শক্তির সাহায্যে কাজ করে। মূলত এর লাল আলো আঙুলের চামড়া ভেদ করে নমুনা সংগ্রহ করে। এরপর চৌম্বকশক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি যে সেই ব্যক্তির নমুনায় ম্যালেরিয়া রোগের জীবাণু বা ম্যালেরিয়ার বাই প্রোডাক্ত হেমোজিন ক্রিস্টাল আছে নাকি নেই।”

রাজধানী কাম্পালার মুলাগো হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ড. রিচার্ড ইজো জানান, তাদের এখানে ভর্তি হওয়া বেশিরভাগ শিশুই তীব্র ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত। তাদের মধ্যে আবার অনেকেই খিঁচুনি, রক্তস্বল্পতা আর জন্ডিসে ভুগছে।

তিনি মনে করেন মিস্টার গিটের উদ্ভাবন পরিস্থিতির নাটকীয় পরিবর্তনে ভূমিকা রাখবে। ডা. ইজো বলেন,

“যদি এই যন্ত্রটি নির্ভুলভাবে রোগ পরীক্ষা করতে পারে। এবং এই প্রযুক্তিটি ফোনের যদি মতো হালকা আর সহজলভ্য করা যায়। সেইসঙ্গে পরীক্ষায় নির্ভুলতার হার যদি ৯০ শতাংশ থেকে শতভাগ নিশ্চিত করা যায়, তাহলে এটি হবে ম্যালেরিয়া শনাক্তের একটি আদর্শ যন্ত্র।”

মাটিবাবুতে রোগ পরীক্ষার নির্ভুলতার হার এখনও মাত্র ৮০ শতাংশ।

তবে আরও উন্নয়নের মাধ্যমে এর মাধ্যমে শতভাগ নির্ভুল রোগ নির্ণয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী মিস্টার গিটা।

“আমি এই যন্ত্রটির উন্নয়নে চার বছর ধরে কাজ করছি। আমি দেখেছি যন্ত্রটির কয়েকটি প্রোটোটাইপ বা প্রাথমিক সংস্করণ কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছে। সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে সূক্ষ্মতা আনতে আরও গভীরভাবে কাজ করেছি।’

মিস্টার গিটা আরও বলেন,”আমরা জানি যে এই যন্ত্রটা এখন কোন পর্যায়ে আছে এবং এটাকে কোন পর্যায়ে নিতে হবে। এটি এক শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ তারপর ধীরে ধীরে ৮০ শতাংশ নির্ভুলতায় পৌঁছেছে। আমার বিশ্বাস যে এই যন্ত্রটি সামনের দিনে আরও নিশ্চিত ফলাফল জানাতে পারবে।”

এই উদ্ভাবনের জন্য মিস্টার গিটা সম্প্রতি সিয়া আফ্রিকান পুরস্কার অর্জন করেন।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top