মেডিটেশনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ কমতে পারে

বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় ছাত্রজীবন মানেই হচ্ছে নানান রকম প্রতিযোগিতা এবং পড়ালেখার চাপ। তাছাড়া পরীক্ষার সময় ঘনিয়ে আসলেতো কথাই নেই। প্রজেক্ট শেষ করা, ফাইনাল পেপার তৈরি করা, প্রেজেন্টেশন দেওয়া এবং অবশ্যই পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেয়া—সবকিছু মিলিয়ে একটা হুলুস্থুল অবস্থা। এর পাশাপাশি যদি চাকরিজনিত জটিলতা থাকে, তবে প্রশান্ত মন নিয়ে থাকাটা বেশ মুশকিল হয়ে যায়। এ সমস্ত চাপজনিত টেনশনে থেকেও মনকে প্রশান্ত রাখার জন্য মেডিটেশনের কোনো জুড়ি নেই।

বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রমাণ করেছে যে, রোজ মেডিটেশন সব ধরনের মানুষের জন্য, বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের জন্য দারুন কিছু সুফল বয়ে নিয়ে আসে। শুধু তাই নয়, নানা ধরনের মানসিক চাপ মোকাবেলা করতে এবং শিক্ষার্থী জীবনটাকে আরো আনন্দপূর্ণ করে তোলে নিয়মিত মেডিটেশন চর্চা। শিক্ষার্থীদের ওপর বিভিন্ন গবেষণা থেকে বেশ চমকপ্রদ ফলাফল পাওয়া গেছে।

অঙ্ক ও ইংরেজিতে ভালো করতে পারছিল না ক্যালিফোর্নিয়ার এমন ১৮৯ শিক্ষার্থীর ওপর ২০০৯ সালে একটি গবেষণা চালানো হয়। তিন মাস ধরে প্রতিদিন দুবেলা তাদেরকে মেডিটেশন করতে বলা হয়। ফলাফল চমৎকার। দেখা গেল তিন মাস পর এদের মধ্যে ৭৮ জনই শুধু অঙ্ক আর ইংরেজিই নয়, সব বিষয়েই আগের চেয়ে ভালো করছে। বাকিরাও ভালো করছিল তাদের চেয়ে, যারা এই মেডিটেশন প্রোগ্রামের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল না।

সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের চাপ কমাতে অভিনব এক পদ্ধতি চালু করেছে নেদারল্যান্ডসের একটি বিশ্ববিদ্যালয়।

জানা গেছে, দেশটির নিজমেগনে অবস্থিত রেডবাউড বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের মন থেকে পরীক্ষার চাপ কমাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনেই খোলা কবর খুঁড়ে মেডিটেশনের ব্যবস্থা করেছে। সেখানে মেডিটেশনের জন্য রাখা হয়েছে একটি মাদুর এবং একটি কম্বল। শিক্ষার্থীদের মধ্যে এরই মধ্যে কৌতুহল সৃষ্টি করেছে খোলা কবরে শুয়ে মেডিটেশনের এ পদ্ধতি।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, পদ্ধতিটি শিক্ষার্থীদের একাগ্রতা বাড়াচ্ছে। একই সঙ্গে স্নায়ুগুলি শিথিল হয়ে ধীরে ধীরে তাদের মানসিক চাপ কেটে যাচ্ছে। মাটির মধ্যে সম্পূর্ণ নিস্তব্ধতা মানসিক চাপ কাটিয়ে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করছে।

এদিকে, গা ছমছমে অনুভূতি নিয়ে থাকতে হলেও খোলা কবরে মেডিটেশনের জন্য শিক্ষার্থীরা ব্যাপক উৎসাহ দেখাচ্ছে। অগ্রিম বুকিংয়ের জন্য অনেকেই অনলাইনে আবেদন করছেন। অনেকে আবার রয়েছেন অপেক্ষমান তালিকায়।

এ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী শান ম্যাকলফ্লিন জানান, তিনি এবং তার রুমমেট দেড় সপ্তাহ আগে খোলা কবরে মেডিটেশন করার জন্য অনলাইনে আবেদন করেছেন। কিন্তু পদ্ধতিটি এতটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে যে অপেক্ষমান তালিকা থেকে তাদের সিরিয়াল আসেনি। অধীর আগ্রহে তারা নিজেদের সিরিয়ালের অপেক্ষায় আছেন।

এরই মধ্যে এ প্রকল্পের পক্ষে ‘ মনে রেখো, তুমি মরে যাবে’ শিরোনামে ক্যাম্পাস পোস্টারও লাগানো হয়েছে। আর খোলা কবরে অভিজ্ঞতা নেওয়ার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ মিনিট থেকে ৩ ঘণ্টা পর্যন্ত।

Share this post

scroll to top