মাস্ক একাধিকবার ব্যবহার: যা জানা জরুরি

করোনাভাইরাসের মহামারির সময়ে মাস্ক এর স্বল্পতার কারণে সাধারণ মানুষ এবং স্বাস্থ্য সেবার সঙ্গে জড়িত লোকজন বিড়ম্বনায় পড়েছে। ফলে তারা মাস্ক একাধিকবার ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছে, যদিও এটি তেমন ফলপ্রসূ নয়।

স্বাস্থ্যক্ষেত্রে সাধারণত দুই ধরনের ফেস মাস্ক ব্যবহার হয়ে থাকে। এ দুটিই ডিসপোজেবল মাস্ক। সার্জিক্যাল মাস্ক ব্যক্তির নিজের জীবাণু বাইরে ছড়ানো থেকে রক্ষা করে। সাধারণত স্বাস্থ্যকর্মীরা নিজের মুখের জীবাণু থেকে রোগীকে সুরক্ষার জন্য এটি ব্যবহার করে থাকে। তাছাড়া এটি অসুস্থ ব্যক্তির থুথু কিংবা কাশির সাথে নির্গত ক্ষুদ্র কণা থেকে যেন জীবাণু বাইরে ছড়াতে না পারে সেজন্য তাদের মুখে ব্যবহার করা হয়।

অন্যদিকে এন৯৫ মাস্ক বাতাসের সাথে মিশে থাকা কণাসমূহের ৯৫ শতাংশ ফিল্টার করতে পারে। ফলে ব্যবহারকারী বাইরের জীবাণু থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে। এটি সাধারণত জরুরি পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যকর্মীরা ব্যবহার করে থাকে, যেন অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শে এসে তারাও আক্রান্ত না হন।

বার্নেট মেডিকেল সেন্টারের জেনারেল সার্জন হান্স রেসটেইনার বলেন, ‘সার্জিক্যাল মাস্ক এবং এন৯৫ মাস্ক উভয়টিই ব্যবহারের পর ধ্বংস করে ফেলতে হবে।’ পুনরায় ব্যবহার উপযোগী যেসব মাস্ক রয়েছে সেগুলো চিকিৎসাক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় না। এসব মাস্কগুলো সাধারণত ধোঁয়া কিংবা ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্যাদি থেকে সুরক্ষার জন্য ব্যবহার করা হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা শ্বাস-প্রশ্বাসের ফলে নোংরা হওয়া মাস্ক ফেলে দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে এবং ব্যবহার করা মাস্ক পুনরায় ব্যবহার করতে নিষেধ করেছে। স্বাভাবিক অবস্থায় যখনই সেবা প্রদানকারী আক্রান্ত রোগীর সেবা দেওয়া শেষ করবেন, তখনই ব্যবহৃত মাস্ক ফেলে দিতে হবে।

সার্জিক্যাল মাস্ক এবং এন৯৫ মাস্কগুলো দ্রুত নষ্ট হয় না, যদিও এতে ব্যবহৃত ফাইবার এবং ইলাস্টিক ব্যান্ডগুলো কিছুটা দূর্বল হয়ে যায়। রেসটেইনার বলেন, উৎপাদনের সময় থেকে ৫ বছরের মধ্যে মাস্কগুলোর ব্যবহার সর্বোত্তম, যদিও সংকটকালীন সময়ে একেবারে ব্যবহার না করার চেয়ে পুরোনো মাস্ক ব্যবহার করাই শ্রেয়।

করোনা মহামারির সময়ে স্বাস্থ্যকর্মীরা উভয় ধরনের মাস্ক-এর সংকটে পড়েছে। ফলে একই মাস্ক পুনরায় ব্যবহার অথবা দীর্ঘক্ষণ যাবত একই মাস্ক পরে সেবা দিতে হচ্ছে তাদের। মাস্ক এর এই সংকটের কথা মাথায় রেখে সিডিসি কিছু নির্দেশনা দিয়েছে। যদিও তারা মাস্ক পরিষ্কার করার কথা বলেনি, তবে নিরাপদ ব্যবহারের জন্য কিছু অভ্যাসের কথা বলেছেন।

সার্জিক্যাল কিংবা এন৯৫ উভয় ধরনের মাস্ক একই ব্যক্তির দ্বারা ব্যবহৃত হতে হবে। কখনো একাধিক ব্যক্তি একই মাস্ক ব্যবহার করা যাবে না।

একই মাস্ক বারবার ব্যবহার করার চেয়ে একবারে দীর্ঘক্ষণ ব্যবহার করাই ভালো। এতে ব্যক্তির হাত বারবার মুখে স্পর্শ করতে হয় না। যদিও একটি মাস্ক কতবার ব্যবহার করা যাবে তার নির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা নেই, তাই যথাসম্ভব বিবেচনার মাধ্যমেই সেটি পুণঃব্যবহার করতে হবে।

ব্যবহারের সময় ছাড়া মাস্কটি বায়ু চলাচল করতে পারে এমন কোনো পাত্রে রাখতে হবে। এজন্য কাগজের ব্যাগ ভালো ফল দিতে পারে।

কোনো বস্তুতে করোনাভাইরাস ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। তাই পর্যায়ক্রমে তিনটি মাস্ক ব্যবহার করাই আদর্শ উপায় বলে মনে করেন রেসটেইনার। তিনি বলেন, ‘যদি আপনি অতিরিক্ত নিরাপদ থাকতে চান তবে তিনটি মাস্ক ব্যবহার করুন এবং প্রতিদিন একটি করে পরিবর্তন করুন। ব্যবহৃত মাস্কটি বায়ু চলাচল করতে পারে এমন জায়গাতে রাখুন যেন ভাইরাসগুলো ধ্বংস হয়ে যায়।’

মাস্কের সংকটের কারণে অনেকেই বাড়িতে কাপড়ের মাস্ক তৈরি করে ব্যবহার করছেন। গবেষণা বলছে, সুতি কাপড়ের তৈরি মাস্ক সার্জিক্যাল মাস্কের তুলনায় এক-তৃতীয়াংশ সংক্রমণ রোধ করতে পারে। তবে ব্যবহারকারী থেকে বাইরে জীবাণুর বিস্তার রোধে এটিও ভালো কার্যকরী।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ১৩৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় করোনাভাইরাস ধ্বংস হয়। তাই আপনি যদি কাপড়ের মাস্ক ব্যবহার করেন তাহলে সাবান-পানি দিয়ে ধুয়ে নিন এবং উচ্চ তাপে শুকিয়ে ব্যবহার করুন।

যদিও বিশেষজ্ঞরা বার বারই বলছেন, সুস্থ থাকলে মাস্ক পরার প্রয়োজন নেই। সর্দি-কাশি-হাঁচির উপসর্গ থাকলে অথবা এমন কোনো ব্যক্তির সান্নিধ্যে থাকেন, যার ফ্লু হয়েছে কিংবা করোনায় আক্রান্ত বলে সন্দেহ, তা হলে অবশ্যই আপনাকে মাস্ক পরতে হবে।

Share this post

scroll to top