মাংস খেয়ে দুই দাঁতের ফাঁকে মাড়িতে ব্যথা? কী করবেন

কুরবানির ঈদে প্রায় সবাই কমবেশি মাংস খেয়ে থাকেন। টানা মাংস খাওয়ার পর উচ্ছিষ্ট দাঁতের ফাকে জমে থেকে মাড়িতে ব্যথা হতে পারে। অনেক সময় প্রদায়ও দেখা দেয়।

এ সমস্যায় করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ দিয়েছেন রাজধানীর কলাবাগানের রাজ ডেন্টাল সেন্টারের ডেন্টাল সার্জন ডা. মো. আসাফুজ্জোহা রাজ।

প্রতি বছর কুরবানির ঈদের পর ডেন্টাল ক্লিনিকগুলোতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোগী আসে মাড়ি ও দাঁতের নানা সমস্যা নিয়ে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে যার কারণ অতিরিক্ত মাংস ও হাড় চিবানো।
বয়স বাড়ার সঙ্গে বা অন্য কোনো কারণে দুই দাঁতের মধ্যবর্তী স্বাভাবিক সংযোগ কেন্দ্র নষ্ট হয়ে যেতে পারে, তখন যে কোনো খাবার বিশেষ করে মাংসের আঁশ ঢুকে ব্যথার সৃষ্টি করে।

ঈদের সময় অতিরিক্ত মাংস চর্বণে মাংসের আঁশ সহজেই এখানে ঢুকে থাকে। প্রাথমিক পর্যায়ে অস্বস্তি বা মৃদু ব্যথা কমাতে টুথ পিক, কাঠি, পিন বা হাতের কাছে যা থাকে সেটা দিয়েই পরিষ্কারের চেষ্টা করে অনেকে কিন্তু এখান থেকে মাড়িতে প্রদাহ ও সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি, দুই দাঁতের মধ্যবর্তী ফাঁকাও বেড়ে যায়, পেরিওপকেট নামক বিশেষ স্থান তৈরি হয়ে দাঁতের ধারক কলা বা পেরিওডোন্টাল রোগের সৃষ্টি করে।
একপর্যায়ে মাড়ি ফুলে যাওয়া, রক্তপড়া, ব্যথা, দুর্গন্ধ, দাঁত শিনশিন, কামড়ে ব্যথা ও দাঁত নড়ে যাওয়াসহ নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়। অনেক সময় টুথপিকের অংশ ভেঙে মাড়ির মধ্যে ঢুকে জটিল অবস্থার তৈরি করে।
বড় ফিলিং বা ক্যাপ খুলে যাওয়ার আশংকা থাকে। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, মুখের যত্নে অবহেলা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, ধূমপান প্রভৃতিতে টুথপিক বা কাঠি ব্যবহারে জটিলতা দ্রুত শুরু হয়, অন্যদিকে অতিরিক্ত খাবার থেকে এসব রোগের মাত্রা বেড়ে গিয়ে মুখের অভ্যন্তরেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলে।
টুথপিক ব্যবহারে এল ৯২৯ বৃদ্ধিতে ফাইব্রোব্লাস্ট তৈরির মাধ্যমে ক্যান্সারে রূপান্তরিত হওয়ার বিষয়টিও গবেষণায় উঠে আসছে।

আক্কেল দাঁতের জটিলতাও বাড়তে পারে, এই দাঁত সম্পূর্ণ না উঠলে বা বাঁকা হয়ে উঠলে দাঁতের চারপাশের মাড়ির মধ্যে গৃহিত খাদ্য বিশেষ করে মাংস ঢুকে কষ্টদায়ক প্রদাহের সৃষ্টি করতে পারে।

কেউ আবার টুথ ব্রাশ দিয়ে জোরে ব্রাশ করে খাবার বের করার চেষ্টা করে, যা থেকে দাঁত ও মাড়ি উল্টো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সাধারণ টুথ ব্রাশের ব্রিসল্ দুই দাঁতের মধ্যবর্তী স্থান পরিষ্কার করতে পারে না, টুথ ব্রাশ কেবল মাত্র দাঁতের ৭০ শতাংশের মতো পরিষ্কার করতে পারে।

কী করবেন

দাঁতের ফাঁক পরিষ্কারের সঠিক মাধ্যম হলো বাজারজাত ডেন্টাল ফ্লস নামক বিশেষ সুতা বা ইন্টার ডেন্টাল ব্রাশ। খাবার জমার প্রবণতা থাকলে ঈদের আগেই এটা জোগাড় করে নিতে হবে, ব্যবহারবিধি না জানলে মনগড়া পদ্ধতিতে না গিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ অথবা ইন্টারনেটের সাহায্যে জেনে নিতে হবে।
জীবাণুনাশক মাউথ ওয়াশ যেমন ১ শতাংশ পোভিডন আয়োডিন, ক্লোরহেক্সিডিন বা Dl&T পানিতে লবণ মিশিয়ে খাবারের পর কুলকুচি করলেও ভালো ফল পাওয়া যায়।
আগে থেকেই যারা মাড়ি রোগে ভুগছেন তাদেরকে চিকিৎসকের পরামর্শে চিকিৎসা নেওয়া জরুরি, অন্যদিকে দুই দাঁতের সংযোগ স্থানে গর্ত বা অস্বাভাবিক ফাঁকা থাকলে সেখানেও চিকিৎসা প্রয়োজন।

Share this post

scroll to top