মসজিদ ফান্ডের টাকা আত্মসাৎ নিয়ে ৩ শতাধিক টেটা-বল্লম নিয়ে সংঘর্ষে ২ গ্রুপ

মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে মসজিদ ফান্ডের টাকা আত্নসাৎকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ ও দু-পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ঘটনাস্থল থেকে বেশ কয়েকজনকে আটকসহ প্রায় তিন শতাধিক টেটা বল্লম উদ্ধার করে পুলিশ।

মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) বিকাল অনুমান ৩টা দিকে উপজেলার কাঠসাগড়া নয়াগাঁও গ্রামের মধ্যবর্তী স্থানে এ ঘটনা ঘটে। এঘটনায় দিপু (১৮) ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি রয়েছে।

সিরাজদিখান থানার অফিসার ইনচার্জ মো: ফরিদ উদ্দিন জানান, এই ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অপরাধে ঘটনাস্থল থেকে ৬ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলো সামসুদ্দিন (৩৮), সৌরভ মন্ডল (২২), আব্দুল কাদির (৫০), সাগর হোসেন (২১), রায়হান (৩০), শাহ আলম (৩৮)।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাদবরের হাট বাজার মসজিদ ফান্ডের অর্থ আত্নসাৎ ও মাদবরের হাট গরুর হাটের ইজারার অর্থ ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এস. এম সোহরাব হোসেন ও ব্যবসায়ী মোঃ জহির গ্রুপের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়।

গত ২৯ জুলাই সোমবার রাত ৯টার দিকে উপজেলার কাঠসাগড়া গ্রামের মসজিদের সামনে উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাাদক ও লতব্দী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এস.এম সোহরাব হোসেন ও তার গ্রুপের লোকজনদের সাথে মসজিদ ফান্ডের টাকা আত্নসাৎকে কেন্দ্র করে মোঃ জহির গ্রুপের লোকজনের সাথে তর্ক বিতর্কের এক পর্যায়ে মোঃ জহির গ্রুপের লোকজন সোহরাব হোসেনসহ তার লোকজনদের উপর হামলা চালায় মোঃ জহির গ্রুপের লোকজন।

এ ঘটনায় ওইদিন রাতে উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এস.এম সোহরাব সিরাজদিখান থানায় ১০ জনকে আসামী করে মোঃ জহির গ্রুপের লোকজনদের বিবাদী করে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পরদিন মঙ্গলবার উক্ত ঘটনার জের জেরে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

মাদবরের হাট বাজার মসজিদ কমিটির সভাপতি নুর ইসলাম জানান, আমি তেমন কিছু জানি না। তিনি নুর হোসেনের নাম্বার দিয়ে বলেন, সে বিষয়টি বলতে পারবে।

নুর হোসেন জানায়, আমরা মামলার হাজিরা দিতে মুন্সীগঞ্জ যাই। সেখানে এড. গৌতম বাবুর চেম্বারে অজ্ঞাত কয়েকজন লোক এসে আমাদের অস্ত্র ঠেকিয়ে বলছে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কোন কিছু করবি না। যদি করস তবে বাঁচতে পারবি না।

তিনি জানান, কংসপুরার রামকৃষ্ণ মুক্তিকে মারধর করে জহিরকে ফাঁসানের জন্য। পরবর্তীতে রাত দশটায় জহিরকে মারার জন্য ৭০-৮০ জন লোক জড়ো হয়ে টেটা বল্লম নিয়ে হামলা করে। তবে আজকে কি হয়েছে আমি জানি না।

এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এস. এম সোহরাব হোসেন জানান, লুতুব্দি ইউনিয়নের কিশোর গ্যাং লিডার শাহীন ফারুক এই হামলায় নেতৃত্ব দেয়। কিশোর গ্যাং লিডার শাহীনের গডফাদার জহির। শাহীন চুরি অপরাধে অপরাধি হয়। সেই চুরির বিচার করি সোমবার। মহিলা মেম্বার তাহেরুন্নেছার ভাগ্নে শাহীন। সে দায়িত্ব নেয় শাহীনকে ভাল করবে। কিন্তু সে পারেনি। এই শাহীনকে নিয়ে বিচার শালিস করি। শালিস করার পরে বাড়িতে যাওয়ার পথে আমার উপর জহিরের সন্ত্রাসী শাহীন ও ফারুকের নেতৃত্বে হামলা করে। সকালে তারা আবার সংঘবদ্ধ হয়ে টেটা বল্লম নিয়ে বাজারে এসে আমার লোকজনের বাড়িতে হামলা করে ভাংচুর করে। পুলিশকে খবর দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

ব্যবসায়ী মোঃ জহির জানান, মাদবরের হাট গরুর হাটের ইজারার অর্থ থেকে প্রতিবছর চেয়ারম্যান সোহরাব সাহেব ২০, ০০০ টাকা চাঁদা নেন। হাট থেকে বাকী যে টাকা উঠে তা বাজার মসজিদের উন্নয়নের জন্যই ব্যায় করা হয়। ২০, ০০০ টাকা চাঁদা নেয়াকে কেন্দ্র করেই মূলত এই সংঘর্ষ হয়েছে। তবে গতকালকের বিষয় ও আজকের সংঘর্ষের বিষয় আমি কিছুই জানি না। আমি একটি মামলার হাজিরা দিতে মুন্সীগঞ্জ আদালতে গিয়েছিলাম।

সিরাজদিখান থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ ফরিদ উদ্দিন জানান, ঘটনার সাথে পুলিশ ফোর্স পাঠিয়ে ৬ জনকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করা হয়েছে। দেড় শতাধিক টেটা বল্লম উদ্ধার করা হয়েছে। এই ঘটনার পর থেকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি এখন পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

Share this post

scroll to top