ময়মনসিংহে ২৬২ বছরের ঐতিহ্যবাহী হুমগুটি খেলা অনুষ্ঠিত

হুম গুটিময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলায় লক্ষ্মীপুরের বড়ই আটায় তালুক-পরগনার সীমানায় ঐতিহ্যবাহী হুমগুটি হল খেলা অনুষ্ঠিত হয়। বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) বিকেল চারটার দিকে খেলা শুরু হয়।

নাইওরি এসেছে বাড়িতে। শিশুদের জন্য কেনা হচ্ছে জামা। ঠিকঠাক করে সুর তোলা হচ্ছে পুরনো বাদ্যযন্ত্রে। পিঠাপুলি বানানোর সমস্ত আয়োজন শেষ করছেন গৃহবধূরা। উৎসবে জবাই করা হবে যে গরু, তাও আনা হয়েছে কিনে। উপলক্ষ্য রবিবার পৌষের শেষ বিকালে ২৬২ বছরের ঐতিহ্যবাহী গুটি খেলা হবে ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার দেওখোলা ইউনিয়নের লক্ষীপুর জমিদার আমলের তালুক-পরগনা সীমানায়।

এই দিনটি অনুষ্ঠানের জন্য এমনভাবে নির্ধারিত যে নতুন করে আর কোনো দিনক্ষণের প্রয়োজন পড়ে না। সময়মতো লাখো মানুষের জমায়েত ঘটে চিরচেনা এই খেলার মাঠে।

পিতলের তৈরি ১ মণ ওজনের গুটি করায়াত্ত করে নিজ গ্রামে নিয়ে গুম করা পর্যন্ত চলে এই খেলা। আর এই খেলাকে কেন্দ্র করে ফুলবাড়ীয়া উপজেলার গ্রামে গ্রামে চলে অন্যরকম উৎসাহ উদ্দীপনা। গোটা পরিবেশ হয়ে ওঠে উৎসবমুখর। ফুলবাড়ীয়ার লক্ষীপুর ও দশ মাইলের মাঝামাঝি বড়ই আটা বন্ধে (মাঠে) খেলার কেন্দ্রস্থল।

জানা যায়, মুক্তাগাছার জমিদার রাজা শশীকান্তের সাথে ত্রিশালের বৈলরের হেম চন্দ্র রায় জমিদারের জমির পরিমাপ নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়। জমিদার আমলের শুরু থেকেই তালুকের প্রতি কাঠা জমির পরিমাপ ছিল ১০ শতাংশে, পরগনার প্রতি কাঠা জমির পরিমাপ ছিল সাড়ে ৬ শতাংশে।

একই জমিদারের ভূখণ্ডে দুই নীতির প্রতিবাদে তীব্র প্রতিবাদ গড়ে ওঠে। জমির পরিমাপ নিয়ে সৃষ্ট বিরোধ মীমাংসার জন্য লক্ষ্মীপুর গ্রামের বড়ই আটা নামক স্থানে প্রথমবারের মতো আয়োজন করা হয় এই গুটি খেলার।

শর্ত ছিল, গুটি যে দিকে যাবে তা হবে তালুক, পরাজিত অংশের নাম হবে পরগনা। জমিদার আমলের গুটি খেলায় মুক্তাগাছা জমিদারের প্রজারা বিজয়ী হন। তালুক পরগনার সীমান্তে জিরো পয়েন্টে ব্রিটিশ আমলে জমিদারী খেলার গোড়াপত্তন।

Share this post

scroll to top