ভৈরব-ময়মনসিংহ-জামালপুর ‘রেলওয়ে উত্তরাঞ্চল’ ফাইলবন্দি

Rail line Trainরেল কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা আর উদাসীনতার কারণে উত্তরাঞ্চল রেলে এখনো আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি। বিশেষ করে ভৈরব-ময়মনসিংহ, জয়দেবপুর-জামালপুর, তারাকান্দি-বঙ্গবন্ধু পূর্ব, গৌরীপুর-নেত্রকোনা-মোহনগঞ্জ, শ্যামগঞ্জ-জারিয়া-ঝঞ্চাইল রেলপথে সেবার মান বাড়ানোর জন্য ন্যূনতম যে প্রচেষ্টা থাকা জরুরি, তা একেবারেই দৃশ্যমান নয়। ১৯১২-১৮ সালের মধ্যে এ পথে রেললাইন স্থাপন হয়। কিছু কিছু প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও তা এখনো আলোর মুখ দেখেনি।

রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ঢাকা-ময়মনসিংহ অঞ্চল নিয়ে একটি ‘রেলওয়ে উত্তরাঞ্চল’ গঠনের সিদ্ধান্ত এখনো ফাইলবন্দি। এ ছাড়া রাজধানীর সঙ্গে স্বচ্ছন্দে কম সময়ে যাতায়াতের জন্য জয়দেবপুর থেকে ময়মনসিংহ হয়ে জামালপুর পর্যন্ত সমান্তরাল দ্রুতগতির ১৬৬ কিলোমিটার ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্পের কোনো হদিসই নেই। অর্থাৎ ২০১৮ সালের দিকে প্রায় ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রাথমিক সমীক্ষা হলেও এখন পর্যন্ত প্রকল্পটির কোনো কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি নেই। অথচ বলা হয়েছিল, এ প্রকল্পটি ২০১৭ সালে শুরু হয়ে ২০২১ সালের জুনে শেষ হবে। এ পথে বর্তমানে ছয় জোড়া ট্রেন চলাচল করে আর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে অন্তত ১৬ জোড়া ট্রেন চালানো সম্ভব ছিল।

রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন যুগান্তরকে জানান, রেলে ব্যাপক উন্নয়ন করছে আওয়ামী লীগ সরকার। প্রকল্প বাস্তবায়নসহ নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণ করছে। ভৈরব-ময়মনসিংহ-জামালপুর তথা ওই অঞ্চলের রেলপথ উন্নয়নে ডাবল লাইন নির্মাণসহ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। জয়দেবপুর-জামালপুর ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ এগিয়ে যাচ্ছে।

রেলওয়ে অপারেশন ও ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এ পথের যাত্রী সব সময়ই বেশি হয়। কিন্তু পর্যাপ্ত ট্রেন ও রেলপথ না থাকায় যাত্রী পরিবহণ সম্ভব হয় না। বর্তমানে ঢাকা থেকে জামালপুর যেতে ছয় থেকে আট ঘণ্টা লাগে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টায় পৌঁছা সম্ভব। ময়মনসিংহবাসী সংগঠনের পক্ষ থেকে বারবার প্রধানমন্ত্রী, রেলপথমন্ত্রীসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন মহল বরাবর বারবার চিঠিপত্র দেওয়া হলেও তাদের কাঙ্ক্ষিত চাওয়া আজও পূরণ হয়নি। সংগঠনের নেতারা জানিয়েছেন, ব্রিটিশ-পাকিস্তান আমল পার হয়ে বাংলাদেশের অগ্রগতির সঙ্গে রেলওয়ের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন ময়মনসিংহ অঞ্চলে একেবারেই হয়নি।

জয়দেবপুর থেকে পাবনা ঈশ্বরদীর মধ্যে রেললাইন স্থাপন প্রকল্পের উদ্যোগ নেওয়া হয় ২০১৯ সালে। শুরুতেই এ পথে মিশ্র গেজ ডাবল লাইন নির্মাণের প্রতি কিলোমিটার ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৫৯ কোটি টাকা। এ পথে চলমান লাইন খুবই জরাজীর্ণ। উনিশ থেকে কুড়ি হলেই লাইনচ্যুতসহ বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। ৮০ শতাংশ রেল ব্রিজ জরাজীর্ণ ও মেয়াদোত্তীর্ণ। নেত্রকোনা-মোহনগঞ্জ রুটে পাথর নেই বললেই চলে। বেশিরভাগ স্থানেই নাট-বল্টু চুরি হয়ে গেছে। একই রকম জীর্ণদশা ময়মনসিংহ-ঢাকা রুটের গফরগাঁও রেলপথে। দিনে দিনে এ পথ পাথরশূন্য হয়ে পড়েছে। স্থানে স্থানে স্লিপারের নিচ থেকে সরে যাচ্ছে মাটি। রেলওয়ে প্রকৌশল বিভাগ বলছে, ময়মনসিংহ-ঢাকা, ময়মনসিংহ-মোহনগঞ্জ, ময়মনসিংহ-দেওয়ানগঞ্জ বা ময়মনসিংহ-ভৈরব রেলপথের মোট ২০২ কিলোমিটার রেলপথের পুরো লাইনটিই জরাজীর্ণ। রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে সচল রাখা হচ্ছে। এসব রেলপথে ৩০-৪৫ কিলোমিটার গতি নিয়ে ট্রেন চালাতে হচ্ছে।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, দেশের তিনটি অর্থনৈতিক অঞ্চলে রেলপথ সংযোগের উদ্যোগ নেয় সরকার। মীরসরাই, জামালপুর ও ফেনী অর্থনৈতিক অঞ্চলে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) অনুরোধে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ জন্য পৃথক তিনটি সংযোগের মধ্যে জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চলে রেললাইন সংযোগের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শীর্ষক প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে চার কোটি পাঁচ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। অন্যদিকে মীরসরাই ও ফেনী অর্থনৈতিক অঞ্চলে রেললাইন নির্মাণে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শীর্ষক আলাদা প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে চার কোটি ৬৬ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। দুই প্রকল্পে মোট আট কোটি ৭২ লাখ ২৯ হাজার টাকা ব্যয় ধরা হয়। এ প্রকল্প দুটি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) অনুমোদিত প্রকল্প হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

যুগ যুগ ধরে জরাজীর্ণ জারিয়া-ঝঞ্চাইল রেলপথে চলা লোকাল ট্রেনগুলো ২০-৩০ কিলোমিটারের বেশি গতি তুলতে পারে না। জামালপুর থেকে দুর্গাবাড়ি পর্যন্ত নতুন একটি রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করেছে রেল। গত বছর এ প্রকল্পে মাঠ পর্যায়ে সমীক্ষার জন্য নির্ধারিত ব্যয় ধরা হলেও কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি নেই। প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, উল্লিখিত রেলপথগুলোয় রেল ব্রিজগুলোর মেয়াদকাল ছিল সর্বোচ্চ ৬০ বছর। এগুলোর বেশিরভাগের বয়স ১১০-১২০ বছর। ‘দি আর্লি হিস্ট্রি অব দ্য ইস্ট ইন্ডিয়ান রেলওয়ে ১৮৪৫-১৮৭৯’ গ্রন্থের লেখক হেনা মুখার্জির তথ্য মোতাবেক, যুগ যুগ পার হয়ে ২০১৮ সালের দিকে ভৈরব-ময়মনসিংহ চলমান রেলপথের সঙ্গে সিঙ্গেল ডাবল লাইনসহ জরাজীর্ণ পুরাতন রেলপথ সংস্কারে প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও ২০২১ সালের শুরু পর্যন্ত সমীক্ষার কাজই শেষ হয়নি। দৈনিক যুগান্তেরের সৌজন্যে

Share this post

scroll to top