ভারতে লোকসভা নির্বাচনে চতুর্থ দফায় ভোট গ্রহণ চলছে

ভারতে লোকসভা নির্বাচনের চতুর্থ দফায় আজ সোমবার ৯টি রাজ্যের ৭২টি আসনে ভোট গ্রহণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে মহারাষ্ট্রে ১৭টি, রাজস্থানে ১৩টি, উত্তরপ্রদেশে ১৩টি, পশ্চিমবঙ্গে আটটি, মধ্যপ্রদেশে ছয়টি, উড়িষ্যায় ছয়টি, বিহারে পাঁচটি, ঝাড়খণ্ডে তিনটি এবং জম্মু ও কাশ্মিরে একটি আসন রয়েছে। এসব আসনে মোট ৯৫৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

মোট সাত দফার মধ্যে প্রথম তিন দফায় ভোট হয়েছে ৩০৩টি আসনে। গতকালের চতুর্থ দফাসহ শেষের চার দফায় আসন আছে ২৩৯টি। ২০১৪ সালের নির্বাচনে এ ২৩৯টির ভেতর ১৬১টি আসন পেয়েছিল বিজেপি। তাদের ভোটের হারও বেড়েছিল। কংগ্রেস পেয়েছিল মাত্র ৯টি আসন। তাদের ভোটও কমেছিল। অথচ ২০০৯ সালেও ৮৮টি আসন দখল করেছিল কংগ্রেস।

তবে গত পাঁচ বছরে পরিস্থিতি বদলে গেছে। কয়েকটি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে তার আঁচ পাওয়া গেছে। ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থানে বিজেপিকে হারিয়েছে কংগ্রেস। অন্য দু’টি রাজ্যেও বিজেপি জিতেছে সামান্য ব্যবধানে। ভোটও কমেছে বিজেপির। সব মিলিয়ে বাকি দফার ভোটে যে লড়াই কঠিন লড়াই হবে তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে বিজেপি। ২০১৪ সালের তুলনায় বিজেপি এবার কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বিজেপি।

আজকের ভোটে পশ্চিমবঙ্গের আটটি আসনে লড়ছেন ৯ মহিলাসহ ৬৮ জন প্রার্থী। হেভিওয়েট প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন অভিনেত্রী মুনমুন সেন থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় এবং সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া। বিহারে পাঁচটি আসনে তিন মহিলাসহ ৬৬ জন প্রার্থী লড়ছেন। এখানে জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সাবেক সভাপতি কানহাইয়া কুমারের বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিং। এ ছাড়া রামবিলাস পাসোয়ান এবং উপেন্দ্র কুশওয়া লড়ছেন নির্বাচনে। ঝাড়খণ্ডের তিনটি আসনে লড়ছেন দুইথজন মহিলাসহ ৫৯ জন প্র্রার্থী। এ রাজ্য থেকেই প্রার্থী হয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুদর্শন ভগত। মধ্যপ্রদেশের ছয়টি আসনের জন্য লড়ছেন ১০ জন মহিলাসহ ১০৮ প্রার্থী। হেভিওয়েট প্রার্থী তালিকায় আছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কমলনাথের ছেলে নকুলনাথসহ কয়েকজন।

মহারাষ্ট্রের ৪৮টি আসনে লড়ছেন ৭৫ জন মহিলাসহ ৮৬৩ জন প্রার্থী। হেভিওয়েট প্রার্থী বলতে রয়েছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মিলিন্দ মুরলী দেওরা, অভিনেতা সুনীল দত্তের মেয়ে প্রিয়া দত্ত এবং পার্থ পাওয়ারসহ কয়েকজন।

উড়িষ্যার ২১টি আসনে লড়ছেন ২৫ মহিলাসহ ১৭৪ জন প্রার্থী। এখান থেকে লড়ছেন রবীন্দ্র কুমার জেনা এবং বৈজয়ন্তপাণ্ডার মতো প্রার্থীরা। রাজস্থানের ১৩টি আসনে লড়ছেন সাত নারীসহ ১২১ জন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পিপি চৌধুরী, গজেন্দ্র সিংয়ের পাশাপাশি আছেন মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটের ছেলে বৈভব গেহলট।

উত্তরপ্রদেশের ১৩টি আসনে লড়ছেন ১৮ নারীসহ ১৪২ জন প্রার্থী। ২০১৪ সালের নির্বাচনে এ ১৩টি আসনের মধ্যে ছয়টি জিতেছিল বিজেপি। এবার এসব আসনে বিজেপির সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে অখিলেশ ও মায়াবতীর দলের মহাজোট। শাহজাহানপুর, খেরি, হরদই, মিসরিখ, ইটাওয়া, ঝাঁসি এবং কনৌজু সাতটি আসনেই দাপট মহাজোটের। বাকি ছয়টি আসন নিয়েও চিন্তায় বিজেপি। কারণ মহাজোট ছাড়াও এ আসনগুলোতে আছে কংগ্রেস ও অখিলেশের চাচা শিবপাল যাদবের দল। ফলে এবার সেখানে কয়টি আসন পাবে তা নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে বিজেপি।

বিড়ালের গলায় আমিই ঘণ্টা বাঁধব মোদিকে চ্যালেঞ্জ মমতার : প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ‘বিড়াল’ বলে কটাক্ষ করলেন মমতা ব্যানার্জি। কাঁথিতে নির্বাচনী জনসভায় তৃণমূল নেত্রী বলেন, ‘বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধার দায়িত্বটা আমি নিয়েছি।’

সভা থেকে নরেন্দ্র মোদির প্রচার-প্রচারণা নিয়ে আক্রমণ করে মমতা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সভায় কত খরচ হচ্ছে, টাকার উৎস কী, কোন এজেন্সিকে দিয়ে কাজ করাচ্ছেন তিনি? প্রচারে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছে বিজেপি। গাড়ি কিনে দিচ্ছে অভিযোগ করে এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনকে খোঁজখবর নেয়ার দাবি জানান তিনি। এ ছাড়া হুগলির জনসভায় মমতা গুজরাট দাঙ্গা ও গোধরা হত্যাকাণ্ড নিয়েও মোদিকে খোঁচা দেন।

প্রধানমন্ত্রী পদে রাহুল নন মমতাকে চান পাওয়ার : বিজেপির যে এবার ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা খুব কম সে বিষয়টি অনেকটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন প্রবীণ রাজনীতিক ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি (এনসিপি) প্রধান শারদ পাওয়ার। তিনি বলেছেন, আগামী সরকারের প্রধানমন্ত্রী পদে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী নয়, বরং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান মমতা ব্যানার্জি, উত্তর প্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও বহুজন সমাজ পার্টির (বসপা) প্রধান মায়াবতী অথবা অন্ধ্রপ্রদেশের চন্দ্রবাবু নাইডুর মধ্যে যেকোনো একজনকে তার পছন্দ। কারণ কংগ্রেস সভাপতির থেকে তারা ভালো। রাহুলকে প্রধানমন্ত্রী করা নিয়ে ভিত্তিহীন কথা হচ্ছে বলেও তিনি মনে করেন। এ তিনজনের মধ্যে মায়াবতী প্রধানমন্ত্রী হতে আগ্রহী বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। অন্য দিকে মমতা এবং নাইডু জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর পদ নয়, বিজেপিকে ক্ষমতা থেকে সরানোই তাদের লক্ষ্য।

নির্বাচনী ফলাফলের পর সংসদ ত্রিশঙ্কু হলে বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন শারদ পাওয়ার। নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর রাজনৈতিক হিসাব নিকাশ বদলে যেতে পারে বলে মনে করছেন প্রবীণ এ নেতা। তিনি জানিয়েছেন, দেশে ভালো নেতার অভাব নেই,থ এ কথায় জোর দিয়ে পাওয়ার বলেন, থনির্বাচনী ফলাফলের পরেই সিদ্ধান্ত হবে। অনেক ভালো নেতানেত্রী আছেন। সুতরাং প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য এখনই কারো নাম নেয়া অনুচিত হবে।

মোদি-অমিতের বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার হুমকি কংগ্রেসের : প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বিজেপি প্রধান অমিত শাহ বারবার মডেল কোড ভঙ্গ করছেন। কিন্তু এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে কংগ্রেস বলেছে, এ জন্য তারা আদালতে যেতে পারে।

শনিবার সংবাদ সম্মেলন করেন কংগ্রেস নেতা অভিষেক মানু সিংভি। তিনি বলেন, মডেল কোড লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আদালতে যাওয়ার অধিকার আছে আমাদের। আমরা সেদিকে যেতে পারি। এ সময় তিনি নির্বাচন কমিশনকে ‘মেগা পুলিশম্যান’ আখ্যায়িত করে বলেন, তাদের চোখ অন্ধ হয়ে গেছে। এ সময় তিনি নির্বাচন কমিশনকে কটাক্ষ করে ‘ইলেকশন অমিশন’ বলে আখ্যায়িত করেন।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top