ভারতের দাবির সত্যতা পায়নি রয়টার্সসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম

পাকিস্তানে চালানো অভিযান সম্পর্কে ভারতের দাবির কোনো সত্যতা পায়নি রয়টার্স, ওয়াশিংটন, টেলিগ্রাফ, গাল্ফ নিউজসহ খ্যাতিমান সংবাদ সংস্থাগুলো। সরেজমিনে প্রত্যক্ষ করে এবং অনুসন্ধানের পরই তারা এ তথ্য জানিয়েছে।

ভারত দাবি করেছিল মঙ্গলবার রাতে পাকিস্তানে ঢুকে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে। এতে সেখানকার সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও ঘাঁটি ধ্বংস হয়ে যায়। মারা যায় দুই থেকে তিনশ মানুষ। পরে এ সংখ্যাটা আরো বেড়ে হয় ৩৫০।

কিন্তু ভারতের দাবির আগেই পাকিস্তান জানিয়েছিল, ভারতের কিছু বিমান পাকিস্তানের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে ভেতরে ঢুকেছিল ঠিকই। কিন্তু পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনীর ধাওয়ায় দ্রুতই তারা পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়ার পথে তারা কিছু জিনিস ফেলে গিয়েছিল। কিন্তু সেগুলো বোমা ছিল না, আর এতে কেউ মারা যায়নি।

ভারতের শীর্ষ পর্যায় থেকে পাকিস্তানের এ দাবি নাকচ করে নিজেদের দাবির ওপর অটল থাকে। এক পর্যায়ে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ প্রথমে স্থানীয় প্রতিনিধিদের বালাকোটে নিয়ে যায়। পরে ইসলামাবাদ থেকে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের এক দল সাংবাদিককে বুধবার বালাকোটের ঘটনাস্থলে নিয়ে যাওয়া হয়।

দুই পশ্চিমি নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’-এর প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন, বালাকোটে যেখানে ভারতীয় বিমান বোমা ফেলার দাবি করছে, সেখানে সত্যিই সশস্ত্র কোনো গোষ্ঠীর ঘাঁটি ছিল। কিন্তু ২০০৫-এ ভয়ঙ্কর ভূমিকম্পের পরে বিদেশি ত্রাণ সংস্থাগুলো ওই অঞ্চলে যাতায়াত শুরু করে। ফলে ধরা পড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় তারা বালাকোটের এই এলাকা ছেড়ে অন্যত্র সরে যায়। সুতরাং ভারতীয় বোমায় তাদের কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানায়, ‘ভারতীয় বিমান বোমা ফেলার পরে সে দেশে উৎসব পালন করা হচ্ছে। কিন্তু এই হামলায় বিশেষ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে মনে হয় না। কারণ বালাকোটের ওই ঘটনাস্থলের পাশের গ্রামবাসীরা রয়টার্সসহ অন্য সংবাদমাধ্যমগুলোকে জানিয়েছেন, রাতে চার-পাঁচটি বোমা বিস্ফোরণের শব্দ তারা শুনেছেন। তাতে কয়েকটি বাড়িতে ফাটল ধরেছে। একজন সামান্য জখমও হয়েছেন। কিন্তু ফাঁকা মাঠে বোমাগুলি পড়ায় তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।’

রয়টার্সের এই প্রতিবেদন লন্ডনের ‘দ্য গার্ডিয়ান’, ‘ডেইলি টেলিগ্রাফ’সহ বেশ কিছু সংবাদপত্র প্রকাশ করেছে। স্থানীয় যুবক মোহাম্মদ আজমল সকালেই ঘটনাস্থল ঘুরে এসে রয়টার্সের প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন, বেশ কিছু গাছ পড়ে গেছে। ফাঁকা মাঠে চারটি বড় বড় গর্তের দাগে প্রমাণ হচ্ছে, বোমাগুলো ওখানেই পড়েছে।’ এছাড়া সেখানে আর কিছু দেখা যায়নি বলে জানান তিনি।

‘ওয়াশিংটন পোস্ট’ও জানিয়েছে, ‘স্থানীয় থানার পুলিশ ও বাসিন্দারা নাম গোপনের শর্তে জানিয়েছেন, বালাকোট শহরের কয়েক কিলোমিটার বাইরে একটি পাহাড়ি এলাকায় ভারতীয় বিমান থেকে বোমা ফেলা হয়েছে। কিন্তু সেখানে মানুষ মারা যাওয়ার কোনো চিহ্ন তারা দেখেননি।’ এদিকে গাল্ফ নিউজ মন্তব্য করেছে, ‘ভারতীয় বিমান সম্ভবত নিশানা ভুল করেছে’।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top