ভারতীয় আদালতে কোরআনের আয়াত বাতিলের রিটের প্রতিবাদে হাটহাজারীতে প্রেসব্রিফিং

হাট হাজারীভারতীয় আদালতে কোরআন শরীফের ২৬টি আয়াত বাতিলের রিট, ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহার জিহাদবিরোধী ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য এবং দেশব্যাপী মসজিদ-মাদ্রাসার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে “হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ হাটহাজারী উপজেলা ও পৌরসভা শাখা’র জরুরী প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ (১৫মার্চ) বিকেল চারটায় হাটহাজারী আল আমিন সংস্থার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় সংবাদ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়।

ব্রিফিংয়ে নেতারা বলেন,আপনাদের মূল্যবান সময় ব্যয় করে আজকের এই জরুরী প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত হওয়ায় আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

আপনারা অবশ্যই অবগত আছেন যে, ভারতের শিয়া ওয়াকফ বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ওয়াসিম রেজভী কর্তৃক পবিত্র কুরআন শরীফের ২৬টি আয়াতের উপর আপত্তি তুলে তা পরিবর্তনের আবেদন, ভারতের সুপ্রিমকোর্টে তা গ্রহণ, ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহার জিহাদবিরোধী ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য, ‘আড়ং’সহ বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে দাড়ি-টুপি ও হিজাবের বিরুদ্ধে অবস্থান এবং সারাদেশে মসজিদ-মাদরাসার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের কারণে আপামর মুসলিম জনতার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ হাটহাজারী উপজেলা ও পৌর শাখার পক্ষ থেকে আজ বাদ আছর হাটহাজারী ডাক বাংলো চত্বরে এক বিশাল প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করা হয়েছিল।

আমরা অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, আজকের এতবড় একটি ঈমানী আন্দোলনকে বিভিন্ন অযুহাত দেখিয়ে কৌশলে স্থগিত করে দেয়া হয়েছে। ফলশ্রুতিতে আপনাদের মাধ্যমে আমরা আমাদের অবস্থান জানানোর জন্য এই জরুরী প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করেছি।

প্রিয় সাংবাদিক ভাইয়েরা!
আপনারা জানেন যে, পবিত্র কুরআনুল কারীম নাজিল হওয়ার পর থেকে আজ সাড়ে চৌদ্দশ বছরে একটি নোকতাও পরিবর্তন হয়নি এবং তা কখনো পরিবর্তন হবেও না। এ বিষয়ে কুরআন অবতীর্ণকারী মহান আল্লাহ তা’আলা চ্যালেঞ্জ করে ঘোষণা দিয়েছেন, “কুরআন আমি নাজিল করেছি এবং আমিই তার হেফাজত করব।” আজ পর্যন্ত এই চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করার দুঃসাহস কারও হয়নি, ইনশাআল্লাহ হবেও না।

সম্প্রতি ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাম্প্রদায়িক বিজেপির নেতা অমিত শাহা জিহাদের মত ইসলামের পবিত্র একটি বিধানের বিরুদ্ধে তার বক্তব্যের মাধ্যমে চরমভাবে উস্কানী দিয়েছে। সে তার বক্তব্যে বলেছে- “জিহাদকে রুখতে যত ত্যাগ স্বীকার করতে হয়, তা আমরা করব।”

আমরা মনে করি, তার এই উস্কানীমূলক বক্তব্যে উৎসাহিত হয়েই টাকার লোভে জনৈক শিয়া নেতা ওয়াসিম রেজভী এই রিট দায়ের করেছে। ভারতের সুপ্রীমকোর্ট এই রিট গ্রহণ করায় অসাম্প্রদায়িকতার দাবীদার ভারতের উপর সোয়া দুইশ কোটি মুসলমান চরমভাবে ক্ষুব্ধ হয়েছে। আমাদের প্রাণের দাবী হলো, অনতিবিলম্বে এই রিট খারিজ করতে হবে এবং অমিত শাহার বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, জিহাদ সন্ত্রাস নয় এবং সন্ত্রাস জিহাদ নয়।

আপনারা জানেন, বিশ্বের ইতিহাসে যতদিন পর্যন্ত রাষ্ট্রীয়ভাবে শরীয়াহ সম্মত জিহাদ চলমান ছিল তথা খুলাফায়ে রাশেদিনের যুগ, বিশ্বের ইতিহাসে সেই যুগকে বিশ্বশান্তির সোনালী যুগ বলে আখ্যায়িত করা হয়; বরং জিহাদই সন্ত্রাস নির্মূলের একমাত্র পথ। ভারতের বিতর্কিত সাম্প্রদায়িক প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চাইলে এই রিট গ্রহণ না করে এবং অমিত শাহাকে বিতর্কিত বক্তব্য থেকে বিরত রেখে ভারতের অসাম্প্রদায়িক চেতনা সমুন্নত রাখতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। যার ফলে বিশ্বমুসলিমদের অন্তরে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।

প্রিয় সাংবাদিক ভাইয়েরা!
আপনারা জানেন, দেশে আড়ংসহ বেশকিছু ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান দাড়িটুপির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে মুসলমানদের ঈমানে চরমভাবে আঘাত করছে। অপরদিকে চট্টগ্রাম নার্সিং কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বোরকা-হিজাবের বিরুদ্ধে নোটিশ ঝুলিয়ে দেশের সংখ্যাগরিষ্ট মুসলিম নাগরিকের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্টের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। অপরদিকে প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থাকা কিছু বামপন্থী নাস্তিক দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্টের হীন স্বার্থে বিভিন্ন অযুহাতে একেরপর এক মসজিদ-মাদরাসা বন্ধ করে দিয়ে দেশে অরাজকতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। এহেন পরিস্থিতিতে ঈমানদার দেশপ্রেমিক সংখ্যাগরিষ্ট নাগরিকরা বসে থাকতে পারে না। এ অপতৎপরতা বন্ধের ঈমানী দায়িত্ব আমরা-আপনারা সকলের।

প্রিয় সাংবাদিক ভাইয়েরা!
আজকে আমীরে হেফাজত আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী সফরে রয়েছেন। তিনি আসলে পরামর্শক্রমে দেশব্যাপী জাতীয় পর্যায়ে কর্মসূচী দেওয়া হবে। ইনশাআল্লাহ, উক্ত ঈমানী কর্মসূচী বাস্তবায়নে আপনাদের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করছি।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, মাওলানা মীর ইদরিস নদভী, জনাব মুহাম্মদ আহসান উল্লাহ, মাওলানা মাহমুদ হুসাইন, মাওলানা এমরান সিকদার, মাওলানা আমিনুল হক,মাওলানা নেজাম সাঈদ,মাওলানা কামরুল ইসলাম, মাওলানা আসাদুল্লাহ আসাদ,মাওলানা আব্দুল মাবুদ,মাওলানা জুনাইদ বিন ইয়াহইয়া,মাওলানা আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।

Share this post

scroll to top