ভরিতে ২০০০ টাকা শুল্ক দিয়ে স্বর্ণ আমদানির সুযোগ

প্রথমবারের মতো ভরিতে দুই হাজার টাকা শুল্ক দিয়ে স্বর্ণ আমদানি করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে। শুধুমাত্র ভ্যাট প্রদানকারী জুয়েলারি দোকানদার এ সুবিধা পাবেন। তাই-ই নয়, ব্যাগেজ রুলের আওতায় বিদ্যমান প্রতি ভরি তিন হাজার টাকা শুল্ক দিয়েও যে কেউ বিদেশ থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ স্বর্ণ নিয়ে আসতে পারবেন। আগামী সপ্তাহেই এ সম্পর্কে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। এ ছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকের ১০ বছরে জমানো ৯৬৩ কেজি স্বর্ণ শিগগিরই নিলাম করা হচ্ছে। একই সাথে দেশে থাকার অঘোষিত স্বর্ণ কেউ বৈধ করতে হলে তাকে ভরিপ্রতি শুল্ক গুণতে হবে এক হাজার টাকা। এ জন্য একটি মেলার আয়োজন করা হতে পারে।

গতকাল স্বর্ণ নীতিমালা নির্ধারণ সংক্রান্ত কমিটির সভায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জমানো স্বর্ণ নিলাম ও ভরি প্রতি স্বর্ণ আমদানি নীতিমালার ট্যাক্স নির্ধারণ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গত ১০ বছরে ব্যাংকের কোনো নিলাম হয়নি। এর আগে এই স্বর্ণ দুইবার নিলাম হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের জমানো স্বর্ণ ২০০৮ সালের ২৩ জুলাই সবশেষ নিলাম হয়েছিল। তাই এই স্বর্ণ এখন নিলাম দেয়ার সময় হয়েছে। শিগগরিই এ নিলাম ডাকা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, শিগগিরই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড স্বর্ণ নীতিমালার এসআরো জারি করবে। তখনই স্পষ্ট হবে স্বর্ণ আমদানি করতে কত শুল্ক দেয়া লাগবে। এখন এই সম্পর্কে বিস্তারিত বলা সম্ভব নয়।

বৈঠকে অর্থ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব আবদুর রউফ তালুকদার, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মফিজুল ইসলাম, এনবিআর কর্মকর্তাসহ বাংলাদেশ জুয়েয়ারি সমিতির (বাজুস) প্রেসিডেন্ট গঙ্গা চরণ মালাকার উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে বাংলাদেশ জুয়েলারি অ্যাসোসিয়েশনের মালাকার সাংবাদিকদের বলেন, স্বর্ণ আমদানির শুল্ক ভরিতে দুই হাজার টাকা, ভ্যাট ৫ শতাংশ আর অবৈধ স্বর্ণ ভরি পতি বৈধকরণ ট্যাক্স এক হাজার টাকা ধার্য করা হয়েছে। আমরা চেয়েছিলাম, স্বর্ণ আমদানি শুল্ক প্রতি ভরি দুই হাজার টাকার পরিবর্তে দেড় হাজার টাকা, ভ্যাট ৫ শতাংশের জায়গায় ৩ শতাংশ করা হোক। কিন্তু আমাদের এই প্রস্তাব বিবেচনায় নেয়া হয়নি।

জানা গেছে, জুয়েলারি সমিতির পক্ষ থেকে ভ্যাটের হ্রাসের যে প্রস্তাব দেয়া হয় তা নাকচ করে দেয়া বৈঠকে। বলা হয়, এখন দেশে সর্বনি¤œ ভ্যাটের হার রয়েছে ৫ শতাংশ। শুধুমাত্র একটি পণ্যের জন্য ভ্যাটের হার কমানো সম্ভব নয়।

এর আগে গত ৩ অক্টোবর‘স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮’ অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। এই নীতিমালায় ‘দেশের অভ্যন্তরে বাণিজ্যিক ব্যবহার এবং রফতানির উদ্দেশ্য পূরণ করার লক্ষ্যে স্বর্ণ আমদানি প্রক্রিয়া সহজীকরণ, আমদানি ও পরবর্তী বাণিজ্যিক প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট আমদানিকারক কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করার কথা বলা হয়েছে। স্বর্ণালঙ্কার রফতানিতে উৎসাহ এবং নীতি সহায়তা দেয়ার মাধ্যমে রফতানি বৃদ্ধিকরণ। স্বর্ণালঙ্কার রফতানির ক্ষেত্রে বিদ্যমান শুল্ক ও বন্ড সুবিধা যৌক্তিকীকরণ ও সহজীকরণ। স্বর্ণখাতে ব্যবসায়বান্ধব পরিবেশ বজায় রাখার লক্ষ্যে কার্যকর নিয়ন্ত্রণ, সমন্বয়, পরিবীক্ষণ ও তদারকি ব্যবস্থা। ভোক্তা- ক্রেতা-স্বর্ণ ব্যবসায়ীসহ এ খাত সংশ্লিষ্ট অংশীজনের স্বার্থ সংরক্ষণ। সব অংশীজনের অংশীদারিত্ব, কার্যকর সমন্বয় নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে স্বর্ণ খাতের টেকসই বিকাশের জন্য একটি সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি।’

নীতিমালায় অনুমোদিত ডিলার সম্পর্কে বলা হয়েছে, দ্য ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্ট-১৯৪৭ এর অধীন বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক অনুমোদিত মনোনীত অথরাইজড ডিলার, ব্যাংক অথবা বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত একক মালিকানাধীন কোনো অংশীদারি প্রতিষ্ঠান বা লিমিটেড কোম্পানি অনুমোদিত ডিলার হিসেবে গণ্য হবে।’ ‘অলঙ্কারের সংজ্ঞায় বলা আছে, স্বর্ণ দ্বারা প্রস্তুতকৃত অলঙ্কার এবং স্বর্ণের পরিমাণ নির্বিশেষে স্বর্ণের সাথে হীরক, রৌপ্য ও অন্যান্য মূল্যবান ধাতু ও পাথর মিশ্রণে প্রস্তুতকৃত অথবা সাধারণ পাথর দ্বারা খচিত অলঙ্কার।’

জানা গেছে, নীতিমালা অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্বিক তত্ত্ব¡াবধানে দেশের অনুমোদিত ডিলার দুই সরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের (এডি ব্যাংক) মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা স্বর্ণের বার আমদানি করতে পারবে। নীতিমালা অনুযায়ী স্বর্ণবার ছাড়া কোনো অলঙ্কার বা অন্য কোনো আকারে স্বর্ণ আমদানি করা যাবে না। স্বর্ণবার আমদানি করতে চাইলে অন্তত ১৫ দিন আগে চাহিদাপত্র দাখিল ও মোট মূল্যের ৫ শতাংশ জামানত দিতে হবে। জুয়েলারি দোকান এই স্বর্ণবার আমদানি করতে হবে। তবে সেসব জুয়েলারি দোকানই ব্যাংকের মাধ্যমে এই আমদানির সুযোগ পাবে যদি প্রতিষ্ঠানটি ভ্যাট নিবন্ধিত হোন। ভ্যাট নিবন্ধন ছাড়া কোনো জুয়েলারিকে স্বর্ণবার আমদানি সুযোগ দেয়া হবে না।

‘আমদানি নীতিতে বলা হয়েছে, বর্তমান নীতির অতিরিক্ত হিসেবে দেশের অভ্যন্তরীণ স্বর্ণ অলঙ্কারের চাহিদা পূরণকল্পে অনুমোদিত ডিলারের মাধ্যমে স্বর্ণবার আমদানি নতুন পদ্ধতি প্রবর্তন করা হবে। অনুমোদিত ডিলার নির্বাচন বাংলাদেশ কর্তৃক সম্পন্ন করা হবে। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক গাইডলাইন প্রস্তুত করছে।’ ‘অনুমোদিত ডিলার সরাসরি বা প্রস্তুতকারী বা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হতে স্বর্ণবার আমদানি করবে। অনুমোদিত ডিলার স্বর্ণ অলঙ্কার প্রস্ততকারকের কাছে বিক্রি করতে পারবে। আর অলঙ্কার প্রস্তুত হলে রফতানি আকারে বিদেশে যাবে। যাতে দেশের রফতানি সেক্টর যাতে চাঙ্গা হয়।’
জানা নীতিমালা অনুযায়ী, ‘আমদানিকারকেরা মাসের শুরুতে স্বর্ণের হিসাব মূসক কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিল করবেন। স্বর্ণমান যাচাইয়ের জন্য সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে হলমার্ক ব্যবস্থার প্রবর্তন করতে হবে। স্বর্ণ, স্বর্ণালঙ্কার ক্রয়-বিক্রয়ে হলমার্ক বাধ্যতামূলক করতে হবে। খাদের পরিমাণ সুনির্দিষ্ট করতে হবে। ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য বিক্রয় ক্যাশ মেমোর সাথে স্বর্ণ অলঙ্কারের হলমার্ক স্টিকার বাধ্যতামূলকভাবে প্রদান করতে হবে। ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণে ভোক্তা সংশ্লিষ্ট অ্যাসোসিয়েশনগুলো কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারবে।’ নীতিমালায় আগের মতোই লাগেজে ১০০ গ্রাম পর্যন্ত স্বর্ণ বিনা শুল্কে আনা যাবে। ২৩৪ গ্রাম পর্যন্ত শুল্ক দিয়ে আনা যাবে। এই হার হচ্ছে ভরিতে এক হাজার টাকা।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top