ব্যাটে বলে দলকে জেতালেন আফ্রিদি

তারকা অলরাউন্ডার শহীদ আফ্রিদির অলরাউন্ড নৈপুণ্যে এবারের পাকিস্তান সুপার লিগে প্রথম জয় পেল মুলতান সুলতান্স। শনিবার রাতে লো স্কোরিং ম্যাচে তারা হারিয়েছে ইসলামাবাদ ইউনাইটেডকে।

শুরুতে বল হাতে নাকানি চুবানি খাইয়েছেন ইসলামবাদের ব্যাটসম্যানদের। চার ওভারে মাত্র ১৮ রান খরচ করে তুলে নিয়েছেন দুটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। লেগ ব্রেক, গুগলি, টপস্পিনার, ফ্লিপারের পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন যেন ৩৯ বছর বয়সী এই তারকা। বয়সকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে বলে একের পর এক এতো বৈচিত্র এনেছেন যে ব্যাটসম্যানরা বুঝতেই পারেননি তার বল কিভাবে মোকাবেলা করতে হবে। ৩১ বলে ৫১ রান করে বড় স্কোরের পথ দেখাচ্ছিলেন ইসলামাবাদের ওপেনার লুক রনকি, কিন্তু আফ্রিদির কাছে হার মানতে হয় তাকে।

আফ্রিদি সপ্তম ওভারে প্রথমবারের মতো বোলিংয়ে আসেন। সেই ওভারেই তাকে একটি ছক্কা হাকিয়ে ঝড় তোলার আভাস দেন লুক রনকি। পরের ওভারে আন্দ্রে রাসেলের পরপর তিন বলে ৬, ৬, ৪ হাকিয়ে পৌছে যান হাফ সেঞ্চুরিতে। ইসলামাবাদের স্কোররও তখন ২ উইকেটে ৫৬, তার মধ্যে ৫০-ই রনকির। ব্যাটে তখন আরো বড় ঝড় ওঠার আভাস, বড় স্কোরের স্বপ্ন দেখছে ইসলামাবাদ। কিন্তু আফ্রিদি পরের ওভারে বল হাতে এসেই ফেরান রনকিকে। জুনায়েদ খানের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান, ইনিংসের নবম ওভারে সেটি। নিজের পরের ওভারেই আফ্রিদি তুলে নিয়েছেন ইংলিশ ব্যাটসম্যান ফিলিপ সল্টকে।

এরপর আর ঘুরে দাড়াতে পারেনি মোহাম্মাদ সামির দল। পুরো বিশ ওভার খেললেও এই ধাক্কা সামলে ওঠা সম্ভব হয়নি দলটির পক্ষে। ২০ ওভার শেষে ৭ উইকেটে ১২৫ রানের বেশি তুলতে পারেনি স্কোর বোর্ডে। মুলতানের আরেক বোলার আলী শফিকও দারুণ বল করেছেন, মাত্র ১১ রান খরচ করে তিনিও নিয়েছেন ২ উইকেট।

এই রান মোকাবেলা করতে নেমে দুবাইয়ের মরা পিচে বিপদের আশঙ্কা জাগিয়েছিলো মুলতানের ব্যাটসম্যানরা। অধিনায়ক শোয়েব মালিক একপ্রান্তে অপরাজিত ৩১ রান করলেও অন্য প্রান্তে কেউ ক্রিজে সেট হতে পারেননি। তবে আবারো দলটির ত্রাতা হয়ে দেখা দেন সেই আফ্রিদি। ৭ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে ২ ছ্ক্কায় ৮ বলে ১৬ রান করে দলের জয় নিশ্চত করেন বুমবুম আফ্রিদি।

শেষ দুই ওভারে মুলতানের দরকার ছিলো ১৪ রান। দুবাইয়ের পিচে এদিন রান তোলা ছিলো সবচেয়ে দুরূহ কাজ। তাই এই স্কোরেই ম্যাচের ভাগ্য নিয়ে সৃষ্টি হয়েছিল অনিশ্চয়তা। কিন্তু শহীদ আফ্রিদি ক্রিজে থেকে অতীতে বহুবার এমন অনিশ্চয়তা থেকে দলকে বাঁচিয়েছেন, এদিনও আরো একবার তাই করে দেখালেন। ওয়াকাস মাকসুদের প্রথম বলে একটি সিঙ্গেল নেন আফ্রিদি। স্ট্রাইক পেয়ে আবারো সিঙ্গেল নেন শোয়েব মালিক। স্ট্রাইকে আসেন আফ্রিদি। ১০ বলে তখন দরকার ১২ রান। তৃতীয় বলে পেছনের পায়ে ভর করে সোজা এক্সটাকভার অঞ্চল দিয়ে বল পাঠিয়ে দেন গ্যালারিতে- ছক্কা। পরের বলটিকেও একই পরিণতি দিতে কার্পণ্য করেননি এতটুকু! আবারো ছ্ক্কা হাকিয়ে দলের জয় নিশ্চত করেন। ৮ বল হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌছে যায় দলটি। ৫ উইকেটের এই জয় দিয়ে এবারের আসরে জয়ের খাতা খুললো শোয়েব মালিকের দল।

বয়স যাই হোক- এখনো যে ব্যাট বল হাতে দুই ভুমিকায়ই দলের জন্য অবদান রাখতে পারেন তা আরো একবার দেখালেন আফ্রিদি। তার বয়সি ক্রিকেটারদের মধ্যে প্রায় সবাই অবসরে। কিন্তু আফ্রিদি প্রতিনিয়ত ভেল্কি দেখিয়ে যাচ্ছে মাঠে। তার যে ফিটনেস হয়তো আরো অন্তত দুই বছর তাকে দেখা দেখা যেতে পারে ক্রিকেট মাঠে। ভক্তদের মাতিয়ে রাখতে চার-ছক্কার আনন্দে।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top