ব্যক্তি সচেতনতাই পারে কোভিড-১৯ এর সংক্রমন ঠেকাতে : ময়মনসিংহ রেঞ্জ ডিআইজি

Range-DIG-Mymensinghকরোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) পৃথিবীব্যাপী মহামারী আকার ধারণ করেছে। সর্বশেষ পরিস্থিতি হল সারাবিশ্বে সর্বমোট প্রায় সতের লক্ষ মানুষ এ প্রাণঘাতী ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং এক লাখের উপর মানুষ মারা গিয়েছে। এটা সারা বিশ্বের জন্য একটা বড় সংকট, একটা বড় চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশে তুলনামূলকভাবে এর ভয়াবহতা এখনও অনেকটা কম। এ পর্যন্ত প্রায় ৬২১ জন আক্রান্ত এবং ৩৪ জনের প্রাণহানি হয়েছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রাজ্ঞ ও দূরদর্শি নেতৃত্বে যথাসময়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করার কারণে এ প্রাণঘাতী ভাইরাসের সংক্রমন অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে। গত ০৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম এ ভাইরাস সনাক্ত হয়। তার বেশ আগে জানুয়ারী থেকে বিদেশ হতে আগতদের বিমানবন্দরে স্ক্রিনিং করে সন্দেহভাজন যারা এ ভাইরাস বহন করতে পারে তাদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। ময়মনসিংহ রেঞ্জের চারটি জেলায় তাদের সংখ্যা ছিল প্রায় ৩,৬০০ এর মত। তাদের হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা হয়।

ময়মনসিংহ রেঞ্জের চারটি জেলায় এ পর্যন্ত ২১ জন আক্রান্ত হয়েছে এবং তাদের সবাইকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। আক্রান্তদের আশেপাশের বাড়িগুলো ইতোমধ্যে লকডাউন করা হয়েছে। অন্যদের থেকে তাদেরকে বিচ্ছিন্ন রাখা হয়েছে যাতে সন্দিগ্ধদের সংস্পর্শে এসে নতুনভাবে কেউ আক্রান্ত না হয়। লকডাউনের আওতায় থাকা মানুষদেরকে খাদ্য সামগ্রী ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তা সামগ্রী সরবরাহ সহ অন্যান্য জরুরী সেবা সরবরাহ করা হচ্ছে।

করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ৩১ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নে পুলিশ কাজ করছে। ইন্সপেক্টর জেনারেল, বাংলাদেশ পুলিশ মহোদয়ের দিক-নির্দেশনা এবং গতিশীল নেতৃত্বে আমরা ইতোমধ্যেই বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। “সামাজিক দূরত্ব” বজায় রাখা, অপ্রয়োজনীয় যাতায়াত (Non-essential Movement) নিয়ন্ত্রণ, আক্রান্ত ব্যক্তিকে আইসোলেশনে রাখা, ইতোমধ্যে আক্রান্ত ব্যক্তির সান্নিধ্যে আসা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করা, আক্রান্ত ব্যক্তির আশেপাশের বাড়িঘর স্থানীয়ভাবে লকডাউন করা ইত্যাদি কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।

করোনা ভাইরাস সংক্রমন প্রতিরোধকল্পে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। Micro Level এ জেলা/উপজেলা পর্যায়ে অপ্রয়োজনীয় যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। মহাসড়কে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য, ওষুধ সরবরাহ সহ অন্যান্য জরুরী সেবা/পরিবহন সচল রাখা হয়েছে। সড়ক ও মহাসড়কে চেকপোস্ট স্থাপনের মাধ্যমে যাত্রীবাহী যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। প্রতিটি জেলা/উপজেলার প্রবেশদ্বারে পুলিশ চেকপোস্ট বসানো হয়েছে যাতে অন্য এলাকার লোক অনুপ্রবেশ করতে না পারে। ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়েও স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করে ইউনিয়ন থেকে ইউনিয়ন এবং গ্রাম থেকে গ্রামে চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।

কোভিড-১৯ একটি ভয়ঙ্কর সংক্রামক ভাইরাস। এ ভাইরাসের সংক্রমন প্রতিরোধে “সামাজিক দূরত্ব” বজায় রাখা-ই উত্তম পন্থা। লোক সমাগম এড়িয়ে চলা, সন্দেহভাজন বা ইতোমধ্যে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে না আসা। আরো সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে বিনা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের না হওয়া। অত্যন্ত ছোঁয়াচে এ ভাইরাস খুব সহজে এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে সংক্রমিত হয়। কাজেই এ Transmission Link (পরিবহন যোগাযোগ) বিচ্ছিন্ন করতে হবে। এ লক্ষ্যে ময়মনসিংহ রেঞ্জ পুলিশ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা, লোক সমাগম হতে না দেয়া, অপ্রয়োজনীয় লোক চলাচল বন্ধ করা এবং স্থানীয়ভাবে Enforced Lockdown নিশ্চিত করা। মাইকিং করে লিফলেট বিতরন করে মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে এবং ক্ষেত্র বিশেষে আইন প্রয়োগের মাধ্যমে এটা নিশ্চিত করা হচ্ছে।

জননিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা বজায় রাখার পাশাপাশি করোনা ভাইরাস উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ময়মনসিংহ রেঞ্জ কার্যালয় ও রেঞ্জাধীন জেলা পুলিশ কর্তৃক শ্রমজীবী, গরীব, অসহায় ও দুঃস্থ ৭১৭০টি পরিবারের মধ্যে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী (চাল, ডাল, ভোজ্য তেল, আটা, লবণ, সাবান ইত্যাদি) এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্যক্তিদের মধ্যে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী (মাস্ক, হ্যান্ড ওয়াশ/হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সাবান ইত্যাদি) বিতরণ করা হয়েছে। এ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

জনবহুল এদেশে “সামাজিক দূরত্ব” (Social Distancing) বজায় রাখা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে প্রায় ১,১০০ জন লোক বাস করে। ঐতিহ্যগতভাবে এখানকার লোকজনের মধ্যে নিবিড় সামাজিক মিথষ্ক্রিয়া রয়েছে। কাজেই প্রান্তিক পর্যায়ে মানুষকে করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতা, এটি কিভাবে সংক্রমিত হয় এবং সংক্রমিত ব্যক্তির করুণ পরিনতির বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতন করা হচ্ছে।

এ কাজে স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করে এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হচ্ছে। ইতোমধ্যে রেঞ্জাধীন জেলাসমূহের বিভিন্ন পর্যায়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করা হয়েছে যাতে নিজে সতর্ক হওয়া ও অন্যকে সচেতন করা যায়। ফলে আওতাধীন এলাকার বাইরে থেকে কোন লোক আসলেই তাকে আলাদা করে রাখা হচ্ছে। তাকে ঘর থেকে বাহির হতে দেয়া হচ্ছে না। ব্যক্তি নিরাপত্তা সম্পর্কে বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পাশাপাশি পুলিশ সবাইকে সচেতন করছে। ব্যক্তি সচেতনতাই পারে কোভিড-১৯ এর সংক্রমন ঠেকাতে। ব্যক্তি তার নিজের এবং পাশে অন্যদের নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতনতাই পারে “সামাজিক দূরত্ব” কঠোরভাবে নিশ্চিত করতে। কাজেই “নিজে সচেতন হই এবং অন্যদেরকে সচেতন করি”, ‘সামাজিক দূরত্ব’ বজায় রাখি এর মাধ্যমে নিরাপদ থাকি এবং দেশকে করোনা ভাইরাস মুক্ত করি-এ হোক আমাদের আজকের প্রত্যয়।

Share this post

scroll to top