বেদের মেয়ে জোছনা’ – এক আশ্চর্য্য কিংবদন্তী!

Beder-meya-josna বেদের মেয়ে জোছনা‘বেদের মেয়ে জোছনা’ বাংলাদেশের সবচেয়ে ব্যবসাসফল মুভি এটা প্রায় সকলেরই জানা। সেই ৮৯ সালে মাত্র ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত মুভিটি ২০ কোটি টাকা আয় করেছিলো। যেই রেকর্ড এখন অবধি অন্য কোনও বাংলা মুভির পক্ষে ভাঙ্গা সম্ভব হয়নি। লোকজ পটভূমিতে প্রসিদ্ধ যাত্রাপালা অবলম্বনে নির্মিত মুভিটি ঠিক কি কারনে এতো জনপ্রিয় হয়েছিলো তা নিয়ে সেই সময় থেকে এই প্রজন্ম পর্যন্ত প্রায় সকলের কাছেই একটা অরাধ্য রহস্য হয়ে রয়েছে। মুভি গবেষকরা তা নিয়ে নানান মতামত দিয়েছেন। আমি সেই প্রসঙ্গে যাবোনা। এখানে সেই সময়ে মুভিটির উত্ত্যুঙ্গ জনপ্রিয়তা নিয়ে ঘটে যাওয়া দু একটা ঘটনার কথা বলবো। যেগুলো সে সময় আমরা বিভিন্ন মাধ্যম থেকে শুনেছি। যা পরবর্তীতে গল্প গাঁথার মতো হয়ে যায়। পত্রিকান্তরে সেই সময় এইসব ঘটনার অনেকগুলোই সংবাদ হিসেবে প্রকাশও পেয়েছিলো। আমার স্মরণশক্তি খুব একটা ভালো না। যতদূর মনে পড়ছে তাই তুলে ধরছি। স্থান, কাল, পাত্র তাই ডিটেইলস দিতে পারছি না।

একটা কথা সকলের মনে রাখতে হবে, সেই সময় বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা, তথ্য প্রযুক্তি এতো উন্নত ছিলো না। স্যাটেলাইট চ্যানেল, মোবাইল, ইন্টারনেট ইত্যাদিও ছিলো না। মানুষগুলো ছিলো অনেক বিষয় সাধারন, সরল ও আবেগতাড়িত।

♣ঘটনা-১:
এটা এক বিভাগীয় শহরের ঘটনা। জনৈক রিকশাচালক স্বামী সারাদিন কাজ সেরে বস্তিতে এসে তিনদিন স্ত্রীকে না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়েছিলো। তার স্ত্রী এই তিনদিন বস্তির অন্যান্য মহিলাদের সাথে সন্ধ্যার শো তে ‘বেদের মেয়ে জোছনা’ – এক আশ্চর্য্য কিংবদন্তী!’ দেখতে গিয়েছিলো। বিক্ষুব্ধ স্বামী চতুর্থ দিন স্ত্রীকে ঘরে না পেয়ে সরাসরি সিনেমা হলে চলে যায়। স্ত্রীকে প্রহার করতে করতে হলের বাইরে নিয়ে এসে মৌখিকভাবে তালাক দিতে উদ্যত হয়। হলের বাইরে থাকা পরবর্তী শো দেখার জন্য অপেক্ষামান জোসনা ভক্তরা এই ঘটনার প্রতিবাদে সেই রিকশাচালককে ব্যাপক গনপিটুনি দেয়। পুলিশ ও স্থানীয় নেতাদের হস্তক্ষেপে ঘটনার ইতি ঘটে ও স্বামী-স্ত্রীর মিটমাট হয়।

♣ঘটনা-২:
এটা একটা জেলা শহরের ঘটনা। উপজেলার এক কলেজ ছাত্রীর পরীক্ষার সিট পড়েছিলো জেলা সদরে। পরীক্ষার দিন সে একঘন্টার পথ বাসযোগে পরীক্ষা দিতে আসতো আবার চলে যেতো। এক পরীক্ষার দিন শেষে সে আর বাড়ীতে ফিরে না গিয়ে তার এক পরীক্ষার হলে পরিচিত হওয়া শহরের বান্ধবীর সাথে তাদের বাসায় চলে যায়। উদ্দ্যেশ্য, সেই রাতটা এখানে কাটিয়ে পরেরদিন ‘বেদের মেয়ে জোছনা’ – এক আশ্চর্য্য কিংবদন্তী!’ দেখবে। এদিকে মেয়েটির উদ্বিগ্ন স্বজনেরা নিকট আত্মীয়, মেয়েটির কাছের বান্ধবীদের বাসা, স্থানীয় থানা ও হাসপাতালে মেয়েটির খোঁজে চষে ফেলছে। পরেরদিন যখন শহরে মেয়েটির খোঁজে রিকশাযোগে নিখোঁজ সংবাদের মাইকিং করা হচ্ছে তখন সেই দুঃসাহসিক জোসনা ভক্ত মেয়ে বান্ধবী সমেত শহরের এক সিনেমা হলে মনের আনন্দে সিনেমা দেখায় ব্যস্ত ছিলো। সেইদিন সন্ধ্যায় মেয়েটি বাড়ীতে ফিরে গেলে ঘটনার ইতি ঘটে।

♣ঘটনা-৩:
‘বেদের মেয়ে জোছনা’ – এক আশ্চর্য্য কিংবদন্তী!’ কোনোও কোনোও হলে টানা দু-তিনমাস চলার রেকর্ডও ছিলো। সম্ভবত দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের কোনো জেলায় একজন জোসনা ভক্ত টানা পঞ্চাশবার মুভিটি দেখায় হল কর্তৃপক্ষ বাদবাকি শোগুলো ফ্রি করে দেয়।

♣ঘটনা-৪:
যতদূর শুনেছি, এটা বৃহত্তর ময়মনসিংহের ঘটনা। ‘বেদের মেয়ে জোছনা’ দেখার লোভ সামলাতে না পেরে মফস্বলের একজন অন্তস্বত্ত্বা মহিলা তার চূড়ান্ত অবস্থা গোপন করে বাড়ীর অন্যান্যদের সাথে কাছের সিনেমা হলে আসে। মুভি চলা অবস্থাতেই তার প্রচন্ড প্রসব ব্যাথা উঠে এবং অন্যান্য শারীরিক উপসর্গ শুরু হয়। এ অবস্থায় মহিলাকে হল ম্যানেজারের কক্ষে জরুরীভাবে নিয়ে যাওয়া হলো। মুভি দেখতে আসা নিজ বাড়ীর ও অন্যান্য কয়েকজন দর্শক মহিলাদের সহায়তায় সে সিনেসা হলের ম্যানেজারের কক্ষেই একজন সুস্থ-স্বাভাবিক কণ্যা সন্তান প্রসব করে। আলহামদুলিল্লাহ! শিশুটির নাম রাখা হয় ‘জোসনা’!

পরিশেষে একটা কথা। অনেকেই আজকালকার বাংলা মুভি নিয়ে অনেক সার্কাসম বা ট্রল করেন। কিন্তু ‘বেদের মেয়ে জোছনা’ – এক আশ্চর্য্য কিংবদন্তী!’ নিয়ে এরকমটা করার সাহস কিন্তু কেউ করে না। কেমন করে জানি এটা একটা ইতিহাস। এ এক আশ্চর্য্য কিংবদন্তী!

Share this post

scroll to top