বিসিকের ময়মনসিংহ শিল্পনগরী পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার

বিসিক ময়মনসিংহজরাজীর্ণ ভবন, ভেঙে পড়া অবকাঠামো ও অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও শিল্পকারখানার উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ময়মনসিংহে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশনের (বিসিক) শিল্পনগরী মেরামত ও পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়। এ লক্ষ্যে ‘বিসিকের আটটি শিল্পনগরী মেরামত ও পুনর্নির্মাণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প গত ১১ ফেব্রুয়ারি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদিত হয়েছে। সরকারি অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বিসিক। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এসব শিল্পনগরীর রুগ্ণ শিল্পগুলো আবার চালুসহ বিদ্যমান শিল্পের সম্প্রসারণের সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, এ প্রকল্পের অধীনে ময়মনসিংহ বিভাগের ময়মনসিংহ ও জামালপুর, ঢাকা বিভাগের নরসিংদী, চট্টগ্রাম বিভাগের কুমিল্লা ও কক্সবাজার, সিলেট বিভাগের খাদিমনগর, রাজশাহী বিভাগের বগুড়া এবং খুলনা বিভাগের সাতক্ষীরার শিল্পনগরী মেরামত ও পুনর্নির্মাণ করা হবে। ৭৪ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ের দু’বছর মেয়াদি এ প্রকল্পের মেয়াদকাল ধরা হয়েছে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রকল্পটি ২০১৯-২০ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) নতুন অননুমোদিত প্রকল্প হিসেবে (ক্রমিক নম্বর ৩০৫) এবং এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত নতুন প্রকল্পের অগ্রাধিকার তালিকায় উচ্চ অগ্রাধিকার (ক্রমিক নম্বর ৬) প্রকল্প হিসেবে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

প্রকল্পের প্রধান কাজের মধ্যে রয়েছে চারটি শিল্পনগরীর মোট পাঁচ হাজার ৬৬৮ দশমিক ৯৩ বর্গমিটার অফিস ভবন পুনর্নির্মাণ। এর মধ্যে রয়েছে কুমিল্লার ৯৪৭ দশমিক ৯৭ বর্গমিটারের দোতলা ভবন, কক্সবাজারের দুই হাজার ২৭৬ দশমিক ৯৬ বর্গমিটারের ছয়তলা ভবন, সিলেটের ৫৮৪ বর্গমিটারের তিনতলা ভবন এবং বগুড়ার এক হাজার ৮৬০ বর্গমিটারের তিনতলা ভবন, ৬৩ হাজার ৫০৭ দশমিক ২০ বর্গমিটার রাস্তা কার্পেটিং, ৯ হাজার ২৮৯ দশমিক ২২ বর্গমিটারের রাস্তা সোল্ডারিং, ৩০টি কালভার্ট, দুই হাজার ৭৬৮ মিটার পানি সরবরাহ লাইন, একটি সাবমার্সিবল পাম্প, সাবমার্সিবল পাম্পসহ ছয় ইঞ্চি ডায়া ডিপ টিউবওয়েল একটি, ২১ হাজার ৮৮১ দশমিক ২৩ বর্গমিটার প্রধান ড্রেন, পাঁচ হাজার ৮৩৭ দশমিক ৫৫ বর্গমিটারের শাখা ড্রেন এবং ছয়টি এমএস গেট পুনর্নির্মাণ।

মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজের মধ্যে রয়েছে ছয়টি শিল্পনগরীর এক হাজার ১১ দশমিক ৯৮ বর্গমিটারের পাম্প ড্রাইভার কোয়ার্টার (নরসিংদী ৫২ দশমিক ৭৯ বর্গমিটার, ময়মনসিংহ ৫১ দশমিক ৭৯ বর্গমিটার, কুমিল্লা ১৩৯ দশমিক ৪০ বর্গমিটার, সিলেট ১২০ বর্গমিটার, সাতক্ষীরা ৪৯৮ বর্গমিটার, বগুড়া ১৫০ বর্গমিটার), বগুড়ার ২২৩ দশমিক শূন্য চার বর্গমিটারের রেস্ট হাউস, ময়মনসিংহের পাঁচ দশমিক ৯৫ বর্গমিটারের পাম্প হাউস, সীমানা প্রাচীর (সাধারণ) ৯৮৭ দশমিক ৩৭ মিটার, সীমানা প্রাচীর আরসিসি (৫৫৪ দশমিক ৭০ মিটার), পানির ট্যাংক একটি (সাতক্ষীরার ১০ হাজার গ্যালন) প্রভৃতি।

এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, বিদ্যমান পুরোনো আটটি শিল্পনগরীর বর্তমান অবকাঠামোর, যেমন পাম্পহাউস ও পাম্প ড্রাইভার কোয়ার্টার মেরামত, পানির ট্যাংক ও সীমানাপ্রাচীর প্রভৃতির মেরামত এবং অফিস ভবন, রাস্তাঘাট, ড্রেন, কালভার্ট, সাবমার্সিবল পাম্প, এমএস গেট ও পানি সরবরাহ লাইন প্রবৃতি) পুনর্নির্মাণ ও স্থাপন এবং শিল্পনগরীতে স্থাপিত শিল্পকারখানার উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিকরণ।

এ প্রকল্পটি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বিসিকের অন্যতম কার্যক্রম এসএমই শিল্পের জন্য শিল্পসহায়ক অবকাঠামো সৃষ্টি করে শিল্প স্থাপন ও সম্প্রসারণের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি ও জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধিতে সহায়তা করা যাবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে শিল্পনগরীর অবকাঠামোগত সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।

পরিকল্পনা কমিশনের মতে, প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পুরোনো ও জরাজীর্ণ আটটি বিসিক শিল্পনগরীর শিল্পসহায়ক অবকাঠামো মেরামত ও পুনর্নির্মাণ করা হবে। এতে এসব শিল্পনগরীতে অবস্থিত শিল্পগুলোর প্রয়োজনীয় কাঁচামাল ও উৎপাদিত পণ্য পরিবহন সহজ হবে। ফলে শিল্পগুলোর জন্য সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে এবং বিদ্যমান শিল্পগুলোর প্রসার ঘটবে ও নতুন শিল্প স্থাপনে উদ্যোক্তারা আগ্রহী হবে।

বিসিক চট্টগ্রাম ও সিলেটের বিভাগীয় আঞ্চলিক পরিচালক বাবুল চন্দ্র নাথ বলেন, ‘কুমিল্লা ও কক্সবাজারের বিসিক শিল্পনগরীর ভবনগুলো জরাজীর্ণ হয়েছে ও ভেঙে গেছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে এ দুটি শিল্পনগরীর নতুন ভবন নির্মাণ করা হবে। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট, ড্রেন প্রভৃতি মেরামত করা হবে।’

Share this post

scroll to top