বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজ (বোয়িং-৭৭৭-ইআর) তিন দিন ধরে গ্রাউন্ডেড হয়ে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের হ্যাংগারে পড়ে আছে। হজ ফ্লাইটের যাত্রীদের জন্য নির্ধারিত উড়োজাহাজটি হঠাৎ গ্রাউন্ডেড হওয়ায় এর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে ফিরতি হজ এবং নিয়মিত জেদ্দা-রিয়াদের শিডিউল ফ্লাইটগুলোতে।
শুক্রবার রাত থেকে গতকাল শনিবার পর্যন্ত ঢাকা থেকে জেদ্দা-রিয়াদগামী ফ্লাইটের যাত্রীদের দুই দেশের বিমানবন্দরে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সর্বশেষ শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টায় যে ফ্লাইটটি জেদ্দার উদ্দেশে ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল সেটি গতকাল শনিবার সকাল পৌনে ৮টায় ছেড়ে গেছে। কারণ এই যাত্রীদের গ্রাউন্ডেড হওয়া ফ্লাইটে জেদ্দা যাওয়ার শিডিউল ছিল। জানা গেছে, শুধু একটি ফ্লাইট নয়, গতকাল সকাল থেকে গন্তব্যের উদ্দেশে মোট ছয়টি ফ্লাইট নির্ধারিত সময়ের অনেক বিলম্বে ছেড়ে গেছে।
তবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রধান প্রকৌশলী বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিমানের যে উড়োজাহাজটি গ্রাউন্ডেড হয়ে আছে, সেটি সচল হতে আরো এক সপ্তাহের বেশি সময় লেগে যেতে পারে। কারণ ওই উড়োজাহাজের ইঞ্জিনে ত্রুটি ধরা পড়েছে। আর এটি পরিবর্তন না করা পর্যন্ত কোনোভাবেই এয়ারক্রাফট উড্ডয়ন করানো যাবে না।
শাহজালাল বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নিজস্ব বোয়িং-৭৭৭ ইআর শিডিউল ফ্লাইটের যাত্রীদের নিয়ে জেদ্দার উদ্দেশে ঢাকার ছাড়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই বিমান কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে যাত্রীদের জানানো হয়, ফ্লাইটটি নির্ধারিত সময়ের ৮ ঘণ্টা পর গতকাল শনিবার সকাল ৮টায় ছেড়ে যাবে। সেই হিসাবে সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে ফ্লাইটটি ঢাকা ত্যাগ করে। একইভাবে বিমানের শিডিউল ফ্লাইট (বিজি-০৩৯) শনিবার সকাল পৌনে ৯টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। সেটি নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে যায়নি। একইভাবে (বিজি-০৩৯) ফ্লাইটের শিডিউল পরিবর্তন করে রাত দেড়টায় নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন সেটি নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে যায় কি না তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন ওই ফ্লাইটের যাত্রীরাও।
গতকাল রাতে বিমানের একাধিক কর্মকর্তা নয়া দিগন্তকে বলেন, ফিরতি হজ ফ্লাইট নির্বিঘœ করতে বিমানের নিজস্ব চারটি বোয়িং এবার প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। তার মধ্যে থেকেই একটি এয়ারক্রাফট বোয়িং-৭৭৭ গত বৃহস্পতিবার থেকেই টেকনিক্যাল কারণে গ্রাউন্ডেড হয়ে আছে। এখন ফিরতি ফ্লাইটের হাজীদের আনার জন্য বিমান কর্তৃপক্ষ এয়ার এশিয়া থেকে লিজে আনা দু’টি এয়ারক্রাফট (এয়ারবাস) হজ ফ্লাইটে অন্তর্ভুক্ত করেছে। কিন্তু এই দু’টি ফ্লাইটের প্রতিটির সিট ক্যাপাসিটি ৩৭৭টি। আর বিমানের বোয়িংয়ের একটির ক্যাপাসিটি হচ্ছে ৪১৯ জন। যত দিন পর্যন্ত এয়ারক্রাফট সচল না হবে তত দিন পর্যন্ত প্রতি ফ্লাইটে ৩৮ জন করে যাত্রীকে সৌদি আরবের জেদ্দায় অফলোড করতে হবে। অপর দিকে শিডিউল ফ্লাইটের যাত্রীদের ঢাকা থেকে যথাসময়ে জেদ্দা ও রিয়াদে না নিতে পারায় এখানেও সমস্যা দেখা দিবে। মোট কথা হজ এবং শিডিউল ফ্লাইট সবই এখন লণ্ডভণ্ড হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তারা বলেন, ঢাকা থেকে বেশি সমস্যা হবে জেদ্দায়। হাজীরা বিমানবন্দরে এসে যখন দেখবে ফ্লাইট বিলম্ব, তখন বিমানকে সৌদি কর্তৃপক্ষ জরিমানা করবে। হাজীদের হোটেল দিতে হবে। থাকা-খাওয়া দিতে হবে। একইভাবে ঢাকার ফ্লাইটের যাত্রীদেরও হোটেল দিতে হবে। এতে বিমানকে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।
গতকাল শনিবার রাতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জেনারেল ম্যানেজার নুরুল ইসলাম হাওলাদারের (এয়ারপোর্ট) সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তবে অপর এক কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে বলেন, এখন পর্যন্ত ঢাকা এয়ারপোর্টে কোনো ধরনের সমস্যা হয়নি। ওই কর্মকর্তা বলেন, উড়োজাহাজ সমস্যার কারণে জেদ্দায় যেসব হাজীকে অফলোড করা হবে তাদের ভালো মানের হোটেলে রাখা এবং থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বিমানের পক্ষ থেকে। তবে জেদ্দা থেকে হাজীদের নিয়ে ঢাকাগামী ফ্লাইট সর্বোচ্চ কতক্ষণ বিলম্ব হচ্ছে সেটি তিনি বলতে পারেননি। এর আগে সন্ধ্যায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রধান প্রকৌশলী (প্রডাকশন) কায়সার জামান নয়া দিগন্তকে বলেন, বোয়িং-৭৭৭-ইআর (এটুএএইচএম) একটি উড়োজাহাজ গ্রাউন্ডেড হয়ে আছে। ইঞ্জিনে একটু প্রবলেম আছে। সমস্যার কথা জানানোর পর মেনুফ্যাকচারিং কোম্পানি থেকে আমাদের জানানো হয়েছে, এই অবস্থায় এয়ারক্রাফট চালু করা ঠিক হবে না। ইঞ্জিন আগে পরিবর্তন করতে হবে। আমরা এখন ইঞ্জিন পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ইঞ্জিনটা জার্মানি থেকে আসছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা আশা করছি আগামী ২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে উড়োজাহাজটি উড্ডয়নযোগ্য হবে।