বিনা বেতনের স্কুল ‘অদম্য পাঠশালা’

মাগুরার শহরতলীর গ্রাম ‘দোয়ার পাড়`।  এ গ্রামেই ‘অদম্য পাঠশালা’ খুলেছেন শম্পা বসু নামে এক নারী।  স্থানীয়রা বলেন, বিনা বেতনের স্কুল। করোনাকালে সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা সহায়তার জন্যই এই উদ্যোগ।

অনলাইনে ক্লাস করার বা গৃহশিক্ষক রেখে প্রাইভেট পড়ার সামর্থ্য নেই যাদের, তাদের জন্যই গাছের নীচে উন্মুক্ত এই বিনা বেতনে পড়ার পাঠশালা।  করোনা দুর্যোগে পড়াশুনা অব্যাহত রাখতে শম্পা বসু এখানে সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের নিয়মিত পড়িয়ে যাচ্ছেন।  সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ব্যাচ করে পড়াচ্ছেন তিনি।  শুক্রবার (৪ সেপ্টেম্বর) শম্পা বসুর এই অদম্য পাঠশালার ১০০ দিন পার হলো।

জানা গেছে, ২৮ মে ২০২০ বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ এর উদ্যোগে এবং সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সহযোগিতায় মাগুরা শহরে ‘অদম্য পাঠশালা’র যাত্রা শুরু।  শিক্ষার্থীরা যাতে এই করোনা দুর্যোগকালে শিক্ষাক্ষেত্র থেকে ঝরে না পরে সেই লক্ষ্যে বিনা বেতনে স্বেচ্ছাশ্রমে শিক্ষা সহায়তা ক্লাস চালু করা হয়।  মাগুরা শহরে দু’টি ইউনিটে অদম্য পাঠশালা পরিচালিত হয়।

অদম্য পাঠশালার প্রতিষ্ঠাতা শম্পা বসু বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলেন।

শম্পা বসু বলেন, শুরুতে ৬০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে আমরা যাত্রা শুরু করি।  এখন শিক্ষার্থী সংখ্যা বেড়ে হয়েছে একশ জন।  মাগুরা জেলায় অদম্য পাঠশালার কার্যক্রমে উৎসাহিত হয়ে এখন সারাদেশে ২২টি জেলায় ৩৭টি ইউনিটে এই কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে ।

শম্পা বসু বলেন, করোনার সময়েও অনলাইনে ক্লাস-প্রাইভেট-ব্যাচ সবই চলছে।  কিন্তু দেশের ৮০ভাগ স্কুলশিক্ষার্থীরই তো সামর্থ্য নেই অনলাইন ক্লাস করার।  যাদের খাদ্যেরই অনিশ্চয়তা আছে, যেসব ছাত্র-ছাত্রীকে বাবা-মায়ের সাথে কাজে বেরোতে হয়, যখন স্কুল ছিল তখন খালিপেটে স্কুলে যেতে হতো—কিভাবে তারা পড়াশুনা করবে? এদের কথা না ভেবে, এদেরকে বাদ দিয়ে কি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা ভাবা যাবে? দেশের সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখা যাবে?

তিনি বলেন, এ দেশ আমাদের, একে বাসযোগ্য রাখার দায়িত্ব আমাদেরকেই নিতে হবে।

সংস্কৃতিক কর্মী রুপব আইচ জানান, অতি দরিদ্র পরিবার স্কুলের সামান্য ফিও সময় মতো জোগাড় করতে পারে না।  এসব পরিবারের অধিকাংশ ক্ষেত্রে মা গৃহকর্মীর কাজ করেন।  ফলে বাড়ির সকল গৃহস্থালি কাজ মেয়েকে করতে হয়।  দারিদ্র্যতার কারণে কোচিং বা প্রাইভেট শিক্ষকদের কাছে পড়াশোনা করার সুযোগ তাদের হয় না।  স্কুলে পড়াশোনা করানো বাবা-মার জন্য কঠিন হয়ে পড়ে।  অদম্য পাঠশালা এসব সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের জন্য পড়ালেখার ব্যবস্থা করে দিয়েছে।

শিক্ষার্থী জবা জানায়, গত বছর অষ্টম শ্রেণির ফাইনাল পরীক্ষার সময় জবার বাবা মারা যান।  অভাব আরও জেঁকে বসে। পরীক্ষায় ফেল করে জবা।  অতঃপর পড়াশোনা বন্ধ।  অদম্য পাঠশালা তাকে আবারও পড়াশোনায় ফিরিয়ে এনেছে।

Share this post

scroll to top