বিদ‌্যুতের ভুতুড়ে বিল, দায় কার

লকডাউনের সময় প্রতিদিন বিদ্যুতের চাহিদা ছিল গড়ে ১২ হাজার মেগাওয়াট। এ সময় কলকারখানা বন্ধ থাকায় ধরে নেওয়া হয় যে, বিদ‌্যুৎ ব‌্যবহার হয়েছে শুধু আবাসিক এলাকায়। এদিকে, করোনাভাইরাসের কারণে বিদ্যুৎকর্মীরা বাসায় বাসায় গিয়ে মিটার দেখতে পারেননি বলে বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। এই দুই কারণকে সামনে রেখে আনুপাতিক ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে গত দুই মাসের বিদ্যুৎ বিল তৈরি করেছে বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা কোম্পানিগুলো। এতে অস্বাভাবিক হারে বাড়তি বিল এসেছে বলে অভিযোগ করছেন গ্রাহকরা।

চলতি মাসের বিদ্যুৎ বিলের সাথে বাড়তি বিল সমন্বয় করার কথা বলছে বিদ্যুৎ বিভাগ। তবে এই ভুতুড়ে বিলের জন্য তারা কাউকে দায়ী করছেন না। বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, করোনা পরিস্থিতির কারণে কর্মীরা মিটার পরিদর্শনে যেতে পারেননি।

বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ড. সুলতান আহমেদ বলেছেন, ‘করোনাকালে প্রতিদিন গড়ে ১২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা ছিল। যেহেতু এ সময় কলকারখানা বন্ধ ছিল, স্বাভাবিকভাবেই ধরে নেওয়া যায় এ বাড়তি চাহিদা ছিল আবাসিক গ্রাহকদের। এ সময়ে মিটার রিডিং সম্ভব না হওয়ায় গত বছরের এই সময়ে গ্রাহকের ব্যবহার এবং গত কয়েক মাসের ব্যবহার মিলিয়ে আনুপাতিক হার করে গত দুই মাসের বিল তৈরি করা হয়। এতে গ্রাহকদের মনে হতে পারে, বাড়তি বিল এসেছে। অনেক সময় সিলিং অতিক্রম করলে বাড়তি ট্যারিফের আওতায় চলে যান গ্রাহক। অনেকের ক্ষেত্রে এ ধরনের ঘটনাও ঘটতে পারে। এ মাসে বিল সমন্বয় করা হলে তখন বিষয়টি পরিষ্কার হবে।’

তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিতরণের কাজে নিয়োজিত সকল প্রতিষ্ঠানকে চলতি মাসে বিল সমন্বয় করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কাউকে বাড়তি বিল দিতে হবে না।’

একই ধরনের কথা বলেন দেশের বৃহত্তম বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন) এ টি এম হারুন অর রশিদ।

বুধবার দুপুরে তিনি বলেন, ‘গত দুই মাসের বিলে অসঙ্গতির বিষয়ে আমরা সভা করেছি। এই মাসে শতভাগ মিটার পরিদর্শন নিশ্চিত করতে এবং ব্যবহার অনুযায়ী বিল তৈরি করতে সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশ দিয়েছি।’

সে ক্ষেত্রে গত দুই মাসের বাড়তি বিলের কী সমাধান হবে, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘চলতি মাসের বিলে একজন গ্রাহকের সর্বশেষ ব্যবহৃত ইউনিট অনুযায়ী বিল তৈরি হবে। ফলে আগের দুই মাসে বাড়তি বিল দেখানো হলে সেটা চলতি মাসের বিলে সমন্বয় হয়ে যাবে। অর্থাৎ, যে পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ হয়েছে সে অনুযায়ী অতিরিক্ত বিল সমন্বয় করা হবে।’

এদিকে, ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ান বলেছেন, ‘করোনা ঝুঁকির কারণে বিদ্যুৎকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মিটার দেখতে পারেননি। তাই মার্চ-এপ্রিল এই দুই মাসের বিল করা হয়েছে মিটার না দেখে। এ কারণে বিদ‌্যুৎ বিল কারো বেশি, কারো কম এসেছে।’

তিনি বলেন, ‘বিল নিয়ে গ্রাহকদের অভিযোগ নিষ্পত্তি করার জন্য আমরা একটি সেল গঠন করছি। অভিযোগ জানানোর জন্য আমাদের অ্যাপসও রয়েছে। কোনো গ্রাহক অভিযোগ জানালে মুহূর্তে তা নিষ্পত্তি করা হবে।’

বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বপ্রাপ্ত অপর প্রতিষ্ঠান ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (ডেসকো) পক্ষ থেকেও একই রকম প্রস্তুতির কথা জানানো হয়েছে।

কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাওসার আমীর আলী বলেন, ‘আমাদের কাজ নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেওয়ার পাশাপাশি গ্রাহকদের সন্তুষ্ট রাখা। গত দুই মাসের বিল সমন্বয় করে চলতি মাসের বিল প্রস্তুত করার জন্য আমরা নির্দেশনা দিয়েছি।’

ঢাকার বাইরের অতিরিক্ত বিল প্রসঙ্গে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) পক্ষ থেকেও একই ধরনের প্রস্তুতির কথা বলা হয়েছে। এছাড়া, ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) এবং নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানিও (নেসকো) চলতি মাসে বিল সমন্বয় করছে বলে জানিয়েছে।

সামগ্রিক বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, ‘চলতি মাসে অতিরিক্ত বিল সমন্বয় করে গ্রাহকদের নতুন বিল পাঠানোর জন্য বিতরণ কোম্পানিগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি প্রিপেইড মিটারে অতিরিক্ত টাকা কেটে নেওয়ারও কিছু অভিযোগ আমরা পেয়েছি। সেগুলোও সমাধান করার জন্য সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে।’

Share this post

scroll to top