বিদ্বেষপ্রসূত বাড়াবাড়ি নিন্দনীয়

সারা বিশ্বেই বিদ্বেষের ব্যাপকতা রয়েছে এবং এই বিদ্বেষের কারণে নানা অপরাধ সমাজ ও রাষ্ট্রে সংঘটিত হচ্ছে। ভারতে যেসব দাঙ্গা সংঘটিত হয়, তা মূলত ধর্মীয় বিদ্বেষের কারণে। বিশেষ করে মুসলিমরাই ভারতে বিদ্বেষের শিকার। এ সম্পর্কে ইসলামী দৃষ্টিকোণ ব্যাখ্যা করছি প্রধানত কুরআন থেকে- সূরা মায়েদার ২ নম্বর আয়াতের একটি অংশে বলা হয়েছে, ‘আর দেখো একদল লোক তোমাদের জন্য মসজিদে হারামের পথ বন্ধ করে দিয়েছে; সে জন্য তোমাদের ক্রোধ যেন তোমাদিগকে এত দূরে উত্তেজিত করে না দেয় যে, তোমরাও তাদের মোকাবেলায় অবৈধ বাড়াবাড়ি শুরু করবে।’ আয়াতটি যদিও মুসলিমদের উদ্দেশ করে শুরু হয়েছে, তথাপি এর মূলনীতিটি সবার জন্য প্রযোজ্য।

এ প্রসঙ্গে একজন তাফসিরকারক বলেছেন, যেহেতু কোরাইশরা মুসলিমদেরকে হজ করতে দিচ্ছিল না, সে জন্য মদিনার মুসলিমরা তাদের আশপাশ দিয়ে যেসব মুশরিকরা হজে যেত তাদের হজে বাধা দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদেরকে সাবধান করে দিলেন, কোরাইশদের প্রতি বিদ্বেষ যেন তাদেরকে আরেকটি অন্যায় করতে প্রণোদিত না করে। কেননা, হজ হজরত ইব্রাহিম আ:-এর পর থেকে চালু ছিল এবং আরবের মুশরিকরাও হজ আদায় করত। হজের মধ্যে যেসব পরিবর্তন হয়েছিল অবশ্যই পরবর্তীকালে রাসূল সা: তা সংশোধন করেন।
এ থেকে বোঝা যায়, আল্লাহ তায়ালা বিদ্বেষের কারণে অন্য জাতির কোনো ন্যায়সঙ্গত কাজে বাধা দেয়া পছন্দ করেন না।

এরপর সূরা মায়েদার ৮ নম্বর আয়াত উল্লেখ করছি- ‘হে ঈমানদারগণ, আল্লাহর ওয়াস্তে সত্য নীতির ওপর স্থায়ীভাবে দণ্ডায়মান এবং ইনসাফের সাক্ষ্যদাতা হও। কোনো বিশেষ দলের শত্রুতা তোমাদেরকে যেন এত দূর উত্তেজিত করে না দেয় যে, (তার ফলে) ইনসাফ ত্যাগ করে ফেলবে। ন্যায়বিচার করো। বস্তুত খোদাপরস্তির সাথে এর গভীর সামঞ্জস্য রয়েছে। আল্লাহকে ভয় করে কাজ করতে থাকো। তোমরা যা কিছু করো, আল্লাহ সে সম্পর্কে পুরোপুরি ওয়াকিবহাল রয়েছেন।’
এ আয়াতে দেখা যায়, আল্লাহ তায়ালা সত্য নীতি ও ইনসাফের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে বলেছেন এবং কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর শত্রুতা যেন আমাদেরকে ইনসাফ ত্যাগ করতে বাধ্য না করে, সে ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছেন।

এখন একই ধরনের আরেকটি বিষয় উল্লেখ করব। সেটি হচ্ছে, অন্য জাতিকে সামগ্রিকভাবে বিদ্রুপ বা নিন্দা করা। আল্লাহ তায়ালা এটাকে নিন্দা করেছেন। কেননা কোনো জাতির সবাই খারাপ নয়। আমরা যেমন বলে থাকি- ওই জেলার লোক খারাপ, ওই এলাকার লোক খারাপ অথবা ওই ধর্মের লোক খারাপ, ওই জাতির লোক খারাপ। কিন্তু বিশেষ কোনো গোষ্ঠীর সবাই খারাপ হয় না। এ ব্যাপারে আল কুরআনের সূরা হুজরাতের ১১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘হে ঈমানদার লোকেরা, তোমরা অন্য কোনো জাতিকে বিদ্রুপ করবে না, হতে পারে যে, তারা তোমাদের চেয়ে ভালো।’ এ থেকেও বোঝা যায়, সামগ্রিকভাবে কোনো গোষ্ঠী বা এলাকার নিন্দা করা আল্লাহ তায়ালা পছন্দ করেন না। তাই এ থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন।

এখন আমি বলব, কোনো জাতির প্রতি অন্য জাতির বিদ্বেষের কারণে বাড়াবাড়ি করা, অসঙ্গত আচরণ করা, তাদের ক্ষতি করা এবং তাদের ন্যায়সঙ্গত কাজে বাধা দেয়াকে আল্লাহ তায়ালা পছন্দ করেন না। একই সাথে আল্লাহ তায়ালা কোনো গোষ্ঠীকে সামগ্রিকভাবে বিদ্রুপ করা পছন্দ করেন না। বাংলাদেশে এসব অনৈতিক কাজকর্ম আছে- এই বিষয়ে সব মসজিদের ইমাম, সারা দেশের আলেমগণ, সারা দেশের ইসলামী সংগঠনগুলোকে বলব- তারা যেন এই আয়াতগুলোর ভিত্তিতে আলোচনা করেন, খুতবা দেন এবং জনগণকে জানান বা লিখেন; যাতে এই ভুল ধারণা সমাজ থেকে বিতাড়িত হতে পারে। এগুলো ছোট বিষয় নয়। আল্লাহ তায়ালা এগুলোকে ছোট বা সামান্য বিষয় বলেননি। তিনি শক্ত ভাষায় এগুলোর নিন্দা করেছেন। এগুলো পরিত্যাগ করতে বলেছেন। আশা করি, সবাই এ ব্যাপারগুলোর দিকে খেয়াল করবেন।

লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top