‘বিএনপি-জামায়াতের কিছু সাংবাদিকের জ্ঞান-গরিমা নেই’

সাংবাদিকতায় কিছু বিএনপি-জামায়াতের লোকজন আসছে জানিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন বলেছেন, তাদের কোনো জ্ঞান-গরিমা নেই, সরকারের ভাবমূর্তি কোথায় গেলো না গেলো এরা তা দেখে না।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মিড ডে মিল নিয়ে তৈরি করা একটি প্রকল্পে কর্মকর্তাদের বিদেশে প্রশিক্ষণ বিষয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে একথা বলেন তিনি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, কিছুদিন আগে মিড-ডে মিল নীতি একনেকে পাস হয়। ডিপিপি প্রণয়নের কাজ চলছে। এই নিউজটা একদিকে মন্ত্রণালয় ও অন্যদিকে সরকারের জন্য ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের মতো মনে হয় আমার কাছে। প্রাইমারি স্কুলের অধিকাংশ শিক্ষার্থী গ্রামে বসবাস করে। খেটে খাওয়া মানুষের বাচ্চারাই বেশি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। অনেক বাচ্চাকাচ্চা আছে পুষ্টিহীনতায় ভোগে। নানা অসুখবিসুখে ভোগে। বিগত সরকার প্রাথমিক নিয়ে কোনো চিন্তাই করেনি।

‘আজ বিরোধীদলের লোকজন নানা ধরনের কথাবার্তা বলছেন। আমি জিজ্ঞাসা করতে চাই, ১৯৭৩ সালে জাতির পিতা প্রাথমিকের শিক্ষকদের জাতীয়করণসহ নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কারণ, উনি উপলব্ধি করেছিলেন যে দেশকে সোনার বাংলাদেশকে হিসেবে গড়তে হলে প্রাথমিক শিক্ষাকে গুরুত্ব দিতে হবে। এরপর যত সরকার আসছে গেছে, প্রাথমিক শিক্ষাকে সম্মান করেনি, উন্নয়নেরও কোনো চিহ্ন পাওয়া যায় না। ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৬ হাজারের বেশি স্কুল জাতীয়করণ করেন। ’

সরকারের নানা উদ্যোগের মধ্যে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের পুষ্টিসমৃদ্ধ বিস্কুট দেওয়া হয় জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, তাদের দুপুরে খাবার দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করেছি। বাচ্চাদের স্কুলে ধরে রাখতে দুপুরের খাবারের জন্য একটি প্রকল্প নিয়েছি, ১৯ হাজার ২৮২ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। ১৬ উপজেলায় এই কর্মসূচি পাইলটিং করা হয়।

‘আমরা বাচ্চাদের খিচুড়ি খাওয়াবো, তিনদিন বিস্কুট, তিনদিন বিভিন্ন ধরনের রান্না করা খাবার, ডিম-কলা ইত্যাদি। আমরা চিন্তা-ভাবনা করছি যাতে বাচ্চাদের কিছুটা হলেও পুষ্টি দিতে পারি। সুন্দর স্বাস্থ্যবান শিশু না হলে পড়াশোনাও মনোযোগ দিতে পারে না। ’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ডব্লিইএফপি আমাকে ভারত নিয়ে যায়। আমরা যখন পাইলটিং করতে চাই তখন চিন্তা করছিলাম সিস্টেমটা কী? দুই কোটি বাচ্চাকে জিনিসটি দিতে গেলে সিস্টেম কী। এই ধারণা নিতে আমি নিজে কেরালায় যাই, সেখানে ১৯৪১ সালে চালু হয়েছে।

‘আপনারা এখানে যারা সাংবাদিক আছেন, যখন প্রথম সাংবাদিকতায় এসেছেন তখন কি সিনিয়র সাংবাদিকের কাছে বুদ্ধি-পরামর্শ নেননি? তারা কীভাবে সংবাদ সংগ্রহ করে, সেই অভিজ্ঞতা কি নেননি? এই অভিজ্ঞতা নেওয়ার জন্য আমি কেরালায় তাদের বিভিন্ন প্রোগ্রাম দেখেছি। কীভাবে পরিচালনা করে তা দেখেছি। সেটা দেখে আমি এখানে পাইলটিং করেছি। এটা শিক্ষার বিষয় আছে কিনা, বলেন?’

জাকির হোসেন বলেন, যারা ৫০ বছর আগ থেকে এই কাজ করে আমরা সেটি দেখে এসেছি, ডব্লিইএফপি আমাকে নিয়ে গেছে। সরকারের কোনো টাকা এখানে ব্যয় করতে দেয়নি।

‘মিড ডে মিল যেখানে পরিচালিত হচ্ছে কিছু শিক্ষা নেওয়ার জন্য, এটা খিচুড়ি পাকের শিক্ষা নয়, ব্যবস্থাপনা জানার জন্য, শেখার জন্য কীভাবে করছে কিছু টাকা ধরা আছে। এই সামান্য ধারণা নিয়ে বিএনপির রিজভী আহমেদ নানা ধরনের কথা বলছেন। তারা দেখেইনি, পড়েনি কিছু। ২০০৫ সাল থেকে শুরু করে কোনো সরকারের ইতিহাস নেই, জিয়াউর রহমানের নেই। খালেদা জিয়ার নেই, কেউ শিক্ষা নিয়ে কথা বলেনি। ’

জাকির হোসেন সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনারা মাইন্ড করবেন না, আপনাদের এই সাংবাদিকতায় কিছু বিএনপি-জামায়াতের লোকজন এখানে আসছেন। তাদের কোনো জ্ঞান গরিমা নেই, একটা হুট করে লিখে দিয়েই বোধহয় হয়ে গেল। সরকারের ভামমূর্তি কোথায় গেলো না গেলো এরা তা দেখে না। আপনাদের অনুরোধ করবো, এই সমস্ত জামায়াত-বিএনপির সাংবাদিক, নতুন নতুন তারা সাংবাদিকতায় আসছে। আমার এলাকায় দেখছি সমস্ত বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদলের ছেলেরা এখন সাংবাদিকতা করে ভ্রান্ত রিপোর্ট করে, এদিক থেকে আপনারা একটু নজর রাখবেন। আমাদের সরকারের যেন বদনাম না হয়।

‘আমাদের সম্বন্ধে নানা ধরনের কথা বলে এই বিএনপি মানুষকে উসকে দিচ্ছে। এদের থেকে মুক্তি পেতে হবে এবং মানুষকে জানাতে হবে শেখ হাসিনার সরকার কখনো জনকল্যাণ ছাড়া কোনো কাজ করে না। এখানেও মিড ডে মিলের, ভালো দিকের জন্য এটা করেছি। বাইরে গিয়ে প্রশিক্ষণ নেওয়ার দরকার আছে কি নেই? ইংলিশ শেখার জন্য ব্রিটিশ কাউন্সিল দিয়ে, অংক শেখার জন্য গণিত অলিম্পিয়াড দিয়ে শেখার চেষ্টা করছি। ’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, আপনাদের সঙ্গে মেলামেশার কারণে আমার কি জ্ঞান বাড়েনি? এটার প্রয়োজন আছে। প্রত্যেকেরই সিনিয়রদের কাছে শিখবার আছে। যে কারণে এ বিষয়ে কিছু টাকা ধরা আছে। এটি বিশাল কোনো ক্ষতিকর ব্যবস্থা না, এটা প্রস্তাব। পরিকল্পনা কমিশন, একনেক দেখবে, সংস্কার করবে।

‘এটা নিয়ে হৈ চৈ করার মতো কোনো অবস্থা নেই। ’

কেরালায় ঘুরে আসার অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেখেছি সরকার সামান্য কিছু অর্থায়ন করে। বাকিটা সেখানকার অন্যরা করে। বাইরে গিয়ে কিছু অভিজ্ঞতা নেওয়া দরকার। আমাদের এখানে পুরোটাই সরকারের টাকা।

সাংবাদিক ভাইরা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ দেবেন সেটা আশা করি, বলেন প্রতিমন্ত্রী।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব আকরাম-আল-হোসেন বলেন, ৫০৯টি উপজেলার প্রত্যেক উপজেলা থেকে একজন পাঠানোর পরিকল্পনা ছিল। এটা প্রস্তাব ছিল ৫শ জনের। পরিকল্পনা কমিশন দু’টি টিমে যাওয়ার বিষয়ে সুপারিশ করেছে। এই দুই টিমে ২০ বা ৩০ জন যেতে পারে। একনেকে যখন অনুমোদন হবে তখন প্রতিটি বিষয় আমাদের বিশ্লেষণ করে ব্যাখ্যা দিতে হবে।

প্রস্তাবের আরও দু’টি ধাপ বাকি আছে জানিয়ে সচিব বলেন, বিস্কুট দেওয়ার অভিজ্ঞতা আছে। কিন্তু ৬৫ হাজার ৬২০টি স্কুলে গরম খাবার দেওয়ার অভিজ্ঞতা নেই।

Share this post

scroll to top