বার্সা থেকে ১০ পয়েন্ট পিছিয়ে গেলো রিয়াল

ঘরের মাঠে হার দিয়ে বছরের শুরুতে আবারো হোঁচট খেল রিয়াল মাদ্রিদ। রোববার সানতিয়াগো বার্নাব্যুতে রিয়াল সোসিয়েদাদের কাছে ২-০ গোলের হতাশাজনক পরাজয়ে লিগ টেবিলের শীর্ষে থাকা বার্সেলোনার থেকে ১০ পয়েন্ট পিছিয়ে পড়েছে গ্যালাকটিকোরা।

এদিকে মেসি যাদুতে নিজেদের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর প্রতিদ্বন্দ্বি গেতাফেকে ২-১ গোলে পরাজিত করে লিগ শিরোপা ধরে রাখার মিশনে আরো এগিয়ে গেছে বার্সেলোনা। অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ ও সেভিয়ার ম্যাচ ১-১ গোলে ড্র হওয়ায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে থাকা দল দুটিও রিয়ালের থেকে এগিয়েই থাকলো। রামোন সানচেজ পিজুয়ানে বিরতির ঠিক আগে এন্টোনিও গ্রিজম্যানের ফ্রি-কিকে অ্যাথলেটিকোর এক পয়েন্ট নিশ্চিত হয়।

লিওনেল মেসি ও লুইস সুয়ারেজের গোলই গেতাফের মাটিতে বার্সার জয়ের জন্য যথেষ্ঠ ছিল। এই জয়ের মাধ্যমে নতুন বছরটাও সাফল্য দিয়েই শুরু করলো কাতালান জায়ান্টরা।

উইলিয়ান জোসের তিন মিনিটের পেনাল্টিতে পিছিয়ে পড়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ। তার উপর ৬১ মিনিটে দ্বিতীয় হলুদ কার্ডের কারণে লুকাস ভাসকুয়েজ মাঠ ত্যাগ করলে বাকি সময়টা রিয়ালকে ১০ জন নিয়েই খেলতে হয়েছে।

এই সুযোগে উইলিয়ানের সহায়তায় রুবেন পারডো ৮৩ মিনিটে লা রিয়ালের পক্ষে ব্যবধান দ্বিগুন করেন। রিয়ালের বিপক্ষে গত ২২ বারের প্রচেষ্টায় এই প্রথম জয় তুলে নিলো সোসিয়েদাদ। ২০০৪ সালের পর সানতিয়াগোতে এটা তাদের প্রথম জয়। ওই পরাজয়ের একদিন পর মাদ্রিদ তৎকালীন কোচ কার্লোস কুইরোজকে বরখাস্ত করেছিল। সানতিয়াগো সোলারি ওই সময় না থাকলেও তার বিপক্ষেও একই সিদ্ধান্ত আসবে কিনা তা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। সোলারি অবশ্য বলেছেন পরের ম্যাচে জয়ের জন্য রিয়াল লড়াই করবে।

জুলেন লোপেতেগুইয়ের স্থলাভিষিক্ত হওয়ার পর নভেম্বরে সোলারির প্রথম মাসটা বেশ ভালই কেটেছে। ভিয়ারেলের বিপক্ষে ২-২ গোলের ড্র দিয়ে নতুন বছর শুরু করেছিল সোলারি শিষ্যরা। এর অর্থ হচ্ছে, ১৮ ম্যাচে ৩০ পয়েন্ট নিয়ে পঞ্চম স্থানে থাকা টানা তৃতীয়বারের ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়নদের এখন চ্যাম্পিয়ন্স লিগে স্থান পাওয়া নিয়েই শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সোলারি বলেন, ‘সবকিছুই আজ আমাদের বিপক্ষে গেছে। যা করার প্রয়োজন আমরা করেছি, কিন্তু শুধুমাত্র বল কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে যায়নি। পরবর্তী ম্যাচে নিজেদের ফিরিয়ে আনার যথাসাধ্য চেষ্টা করবো।’

গতকাল সানতিয়াগোতে উপস্থিত ছিল মাত্র ৫৩ হাজার ৪১২ জন সমর্থক, এবারের মৌসুমে এটা ছিল দ্বিতীয় সর্বনিম্ন উপস্থিতি। তাদের মাঝে কঠিন চেহারা নিয়ে পুরো ম্যাচ দেখেছেন ক্লাব সভাপতি ফ্লোরেনতিনো পেরেজ।

কাফ ইনজুরির কারণে গতকাল দলের বাইরে ছিলেন গ্যারেথ বেল। কিন্তু তার পরিবর্তে ১৮ বছর বয়সী ব্রাজিলিয়ান তরুণ ভিনসিয়াস জুনিয়রের উপরই আস্থা রেখেছিলেন সোলারি। কালও যথারীতি মূল একাদশের বাইরে ছিলেন ইসকো। বেলের অনুপস্থিতিও তাকে মূল দলে জায়গা পেতে সহায়তা করেনি। সোলারির অধীনে এখনো মূল দলে খেলতে পারেননি ইসকো। তিন মিনিটে মাইকেল মেরিনোকে ফাউলের অপরাধে ক্যাসেমিরোর বিপক্ষে পেনাল্টির নির্দেশ দেন রেফারি হোসে মুনুয়েরা। স্পট কিক থেকে সফরকারীদের এগিয়ে দিতে ভুল করেননি উইলিয়ান। বিরতির আগে মাদ্রিদের সবচেয়ে সহজ সুযোগটি নষ্ট করেন ফ্রেঞ্চম্যান করিম বেনজেমা। সোসিয়েদাদ গোলরক্ষক গেরোনিমো রুলিকে একা পেয়েও বেনজেমা পরাস্ত করতে পারেননি। এরপর রুলি একে একে ভিনসিয়াস, বেনজেমা ও লুকা মড্রিচকে হতাশ করেছেন। বিরতির আগে রামোসের একটি পেনাল্টির আবেদনও নাকচ হয়ে যায়।

দ্বিতীয়ার্ধে উভয় দলই সমানভাবে আক্রমণ চালিয়েছে। মাইকেল ওভারজাবালের শট বারের উপর দিয়ে বাইরে চলে যায়, জানুজাজ দুটি সুযোগ নষ্ট করেন। যে কারণে ব্যবধান বাড়াতে পারেনি লা রিয়াল। ৫৭ মিনিটে ক্যাসেমিরোর স্থানে ইসকো খেলতে নামেন। ৬১ মিনিটে লাল কার্ড দেখে ভাসকুয়েজ মাঠ ত্যাগ করলে রিয়ালের আশা শেষ হয়ে যায়। যদিও ১০ জনের দল নিয়েও রিয়াল সমানতালে লড়াই চালিয়ে গেছে। ৮৩ মিনিটে উইলিয়ানের ক্রস থেকে থিবাট কুর্তোয়া জানুজাজের শট আটকে দিলেও ফিরতি বলে পারডো ব্যবধান দ্বিগুন করেন।

গত ১০টি লা লিগা শিরোপার সাতটিই জয় করেছে বার্সেলোনা। আর এবারও তারা ইতোমধ্যেই পাঁচ পয়েন্ট এগিয়ে লিগটেবিলের শীর্ষে রয়েছে। এবারের মৌসুমে শিরোপা জয়ে এখন পর্যন্ত বার্সেলোনার সাথে লড়াইয়ে এ্যাথলেটিকো ও সেভিয়াকেই এগিয়ে রাখা হয়েছে।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top