ভারতের অযোধ্যার ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ সংক্রান্ত মামলার শুনানি শেষ হয়েছে। গতকাল ১৬ অক্টোবর বুধবার বিকাল ৫টায় এ মামলার প্রাত্যহিক শুনানি শেষ হবে বলে আগেই জানিয়েছিলেন ভারতের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। আগামী ১৭ নভেম্বর ভারতের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ এই মামলার রায় ঘোষণা হতে পারে।
মঙ্গলবার ভারতের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, অযোধ্যাতে রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ জমি সংক্রান্ত বিরোধের দৈনিক শুনানির বিষয়টি বুধবার শেষ হতে পারে।
বুধবার ভূমি নিয়ে বিবদমান পক্ষগুলোর মধ্যে মধ্যস্থতার চেষ্টা করা প্যানেলেরও তাদের দ্বিতীয় দফা মধ্যস্থতাসংক্রান্ত রিপোর্ট আদালতে জমা দেয়ার কথা ছিল। এর আগে মঙ্গলবারের শুনানিতে দু’পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে তীব্র বাদানুবাদ শুরু হয়। সেই শুনানি শেষেই বুধবার ‘শুনানি শেষ’ করার কথা বলেছিলেন প্রধান বিচারপতি। সপ্তাহব্যাপী দশেরা উৎসবের ছুটি শেষে চলতি সপ্তাহের সোমবার থেকে সংবেদনশীল এ মামলার শেষ পর্বের শুনানি শুরু হয়। বিবদমান পক্ষগুলোর মধ্যে মধ্যস্থতার চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় চলতি বছরের ৬ আগস্ট থেকে ভারতের প্রধান বিচারপতি নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক আদালতে সংবেদনশীল এ মামলাটির শুনানি শুরু হয়। কয়েক দশক ধরে চলা এ ভূমি বিরোধ মেটাতে বেশ কয়েকবার মধ্যস্থতার উদ্যোগ নেয়া হলেও শেষ পর্যন্ত সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছে।
ভেঙে ফেলা বাবরি মসজিদের স্থানে রামমন্দির নির্মাণের দাবি জানানো পক্ষের আইনজীবীকে পরাসরণ মঙ্গলবার আদালতে বলেন, মুসলমানরা অন্য যেকোনো মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়তে পারেন। শুধু অযোধ্যাতেই ৫৫ থেকে ৬০টি মসজিদ রয়েছে। কিন্তু হিন্দুদের কাছে এটি রামের জন্মস্থান। আমরা জন্মস্থান পরিবর্তন করতে পারি না। মুসলিম সম্প্রদায়ের সদস্যরা বলছেন, ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত বাবরি মসজিদের জমি নিয়ে হিন্দুদের পক্ষ থেকে কোনো দাবি তোলা হয়নি। ১৯৯২ সালের ডিসেম্বরে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা মসজিদটি ভেঙে দেয়। তাই এখন সেখানে মসজিদটি পুনঃস্থাপনই যৌক্তিক।
এ দিকে এই মামলা নিয়ে জটিল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে; এমন আশঙ্কায় উত্তরপ্রদেশ সরকার আগে থেকেই অযোধ্যায় চার বা ততোধিক লোকের যে কোনো জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। জমি সমস্যা নিয়ে মধ্যস্থতা কমিটি কোনো সমাধান খুঁজে বের করতে সক্ষম না হওয়ায় গত ৬ আগস্ট থেকে ভারতের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে পাঁচ বিচারকের বেঞ্চ এই মামলার দৈনিক শুনানি শুরু করে। ২০১০ সালে এলাহাবাদ হাইকোর্টের চারটি দেওয়ানি মামলার রায়ের বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতে ১৪টি আবেদন জমা পড়ে। এলাহাবাদ আদালত রায় দিয়েছিল যে, অযোধ্যার ২ দশমিক ৭৭ একর জমি সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড, নির্মোহী আখড়া এবং রামলল্লা, এই তিনটি দলের মধ্যে সমানভাবে ভাগ করে দেয়া উচিত।
হিন্দুদের এই স্থানটি রামের জন্মস্থান ছিল। সেখানে একটি প্রাচীন মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের ওপর বাবরি মসজিদ নির্মিত হয়েছিল। কিন্তু তাদের এ দাবির পক্ষে কোনো সাক্ষ্য প্রমাণ পেশ করতে পারেনি। ষোড়শ শতকে নির্মিত মসজিদটি ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর ভেঙে দেয় উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা। এর জেরে শুরু হয় ব্যাপক মুসলিমবিরোধী দাঙ্গা। নিহত হয় প্রায় দুই হাজার মানুষ।
গতকাল বুধবার নির্ধারিত সময়ের আগেই শুনানি শেষ হয়। ৩৯ দিন টানা শুনানির শেষে ৪০ দিনের মাথায় এ দিন শুনানি শেষের নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চে বুধবার মামলার শুরুতেই আরো সময় চাওয়া হলেও প্রধান বিচারপতি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন, ‘যথেষ্ট হয়েছে। বিকেল ৫টায় শুনানি শেষ হতেই হবে।’ সে মতোই শুনানি শেষ হলো। তবে রায় হতে পারে কমপক্ষে ২৩ দিন পর। আগামী ১৭ নভেম্বর অবসর নিচ্ছেন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। রায় ঘোষণা হতে পারে তার আগেই। সূত্র : এনডিটিভি ও জি নিউজ।